অর্থকাগজ প্রতিবেদন 

দেশের তৈরি পোশাক খাত সামগ্রিকভাবে এখনো সামান্য প্রবৃদ্ধির ধারায় থাকলেও প্রধান রফতানি গন্তব্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও উদীয়মান বা অপ্রচলিত বাজারগুলোতে প্রতিযোগিতা দুর্বল হয়ে পড়ায় নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই–নভেম্বর) তৈরি পোশাক রপ্তানি দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় মাত্র শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ বেশি।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)–এর তথ্য অনুযায়ী, মোট তৈরি পোশাক রফতানির প্রায় অর্ধেক, অর্থাৎ ৪৮ দশমিক ৫৭ শতাংশই আসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজার থেকে। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে এই অঞ্চলে রফতানি আয় হয়েছে ৭ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার। তবে এখানে প্রবৃদ্ধির চিত্র উল্টো—বছরের ব্যবধানে রপ্তানি কমেছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চাপ, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির প্রভাবে ইউরোপীয় বাজারে ভোক্তারা পোশাক কেনায় সংযমী হচ্ছেন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মুদ্রা বাজারের অস্থিরতা এবং বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা। ফলে ইইউভিত্তিক ক্রয়াদেশে স্থবিরতা দেখা যাচ্ছে। একই সময়ে বাজার বহুমুখীকরণের নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও অপ্রচলিত বাজারগুলোতে তৈরি পোশাক রপ্তানি উল্টো ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ কমেছে। অর্থাৎ নতুন বাজারে প্রবেশের প্রচেষ্টা এখনো কাঙ্ক্ষিত সাফল্য এনে দিতে পারেনি।

তবে তুলনামূলকভাবে ইতিবাচক চিত্র দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে, যা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি গন্তব্য। এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রফতানি ৩ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে ৩ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। একইভাবে যুক্তরাজ্যে রফতানি প্রায় ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কানাডার বাজারেও ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যা কিছুটা হলেও সামগ্রিক চাপ লাঘব করেছে।

পণ্যভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, নিট পোশাক রফতানিতে মন্দাভাব রয়েছে। এই খাতে রফতানি কমেছে প্রায় ১ শতাংশ। বিপরীতে ওভেন পোশাকে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ। ইপিবির তথ্যে আরও জানা যায়, গত নভেম্বরে একক মাসে তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে ৩১৪ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ শতাংশ কম। তবে সামগ্রিকভাবে জুলাই–নভেম্বর সময়ে মোট ১ হাজার ৬১৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হওয়ায় পাঁচ মাসের হিসাব এখনো ইতিবাচক অবস্থায় রয়েছে।

রফতানিকারকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসনের পাল্টা শুল্ক কার্যকরের প্রভাবে আন্তর্জাতিক ক্রেতারা তৈরি পোশাকের দাম ৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এতে মার্কিন বাজারে চাহিদা কিছুটা কমে গেছে এবং বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের রফতানি চাপের মুখে পড়েছে। পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সম্ভাব্য অস্থিরতার আশঙ্কায় ইউরোপ ও আমেরিকার অনেক ক্রেতা নতুন ক্রয়াদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন।

খাতভিত্তিক প্রবণতায় আরও দেখা যায়, চলতি সময়ে নিট পোশাকে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ০ দশমিক ৪২ শতাংশ, যেখানে ওভেন পোশাকে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। শিল্পসংশ্লিষ্টদের মতে, ওভেন পোশাকে পণ্যের বৈচিত্র্য, ফ্যাশনভিত্তিক সেগমেন্টের বাড়তি চাহিদা এবং তুলনামূলক দাম প্রতিযোগিতা এই প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

তবে রফতানিকারকরা সতর্ক করে বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে কিছুটা ইতিবাচক প্রবণতা থাকলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে শ্লথগতি এবং উদীয়মান বাজারে ধারাবাহিক পতন ভবিষ্যতে তৈরি পোশাক খাতের জন্য বড় চাপ তৈরি করতে পারে। এর সঙ্গে কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি, জ্বালানি ও লজিস্টিক ব্যয়, পাশাপাশি টেকসই উৎপাদন মানদণ্ডে দ্রুত খাপ খাইয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ উদ্যোক্তাদের জন্য পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে।
অকা/তৈপোশি/ই/সকাল/১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ

সর্বশেষ হালনাগাদ 12 hours আগে

Leave A Reply

Exit mobile version