অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
পুঁজি বাজারে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা ও বাজারে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) নতুন “মার্জিন বিধিমালা (রহিতকরণ), ২০২৫”-এর খসড়া প্রকাশ করেছে।
খসড়া অনুযায়ী, শেয়ার কেনার জন্য মার্জিন ঋণ পেতে একজন বিনিয়োগকারীর গত এক বছরে গড়ে অন্তত ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ থাকতে হবে। অর্থাৎ ছোট আকারের বিনিয়োগকারীরা সরাসরি এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। এছাড়া যাদের নিয়মিত আয়ের উৎস নেই—যেমন ছাত্র, গৃহিণী ও অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা—তাদের জন্য মার্জিন ঋণ নেওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিএসইসির ভাষ্য, সীমিত আর্থিক সক্ষমতা থাকা বিনিয়োগকারীদের অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকিতে ফেলা বাজারের স্থিতিশীলতার জন্য ক্ষতিকর।
খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে, মার্জিন ঋণ কেবল ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের দেওয়া হবে, কোনো যৌথ অ্যাকাউন্ট বা নগদ উত্তোলনের জন্য নয়। চুক্তির মেয়াদ হবে এক বছর, যা উভয় পক্ষের সম্মতিতে নবায়নযোগ্য। অবাস্তব লাভের বিপরীতে মার্জিন দেওয়া যাবে না। এ ঋণ দিয়ে শুধুমাত্র শেয়ার বা সিকিউরিটিজ কেনা যাবে, নগদ টাকা তোলা বা স্থানান্তরের অনুমতি থাকবে না।
পোর্টফোলিওর আকার অনুসারে মার্জিন সুবিধার অনুপাত নির্ধারণ করা হয়েছে। ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকার পোর্টফোলিওর ক্ষেত্রে ১:০.৫ অনুপাতে ঋণ পাওয়া যাবে, আর ১০ লাখ টাকার বেশি পোর্টফোলিও থাকলে ১:১ অনুপাতে মার্জিন সুবিধা দেওয়া হবে। তবে শর্ত রয়েছে, এ সুবিধা কেবল সেসব সিকিউরিটিজের বিপরীতে প্রযোজ্য হবে, যেগুলোর ফ্রি-ফ্লোট মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন ৫০ কোটি টাকার বেশি।
একই সঙ্গে বেশ কিছু শেয়ার মার্জিনের আওতাভুক্ত হবে না। এর মধ্যে রয়েছে—ট্রেইলিং পিই রেশিও ৩০-এর বেশি থাকা কোম্পানির শেয়ার, যেসব প্রতিষ্ঠানের অডিট রিপোর্টে উল্লেখযোগ্য ভুল বা অস্তিত্বের ঝুঁকি রয়েছে, “বি” ও “জেড” ক্যাটাগরির শেয়ার, এবং এসএমই, এটিবি বা ওটিসি বোর্ডের শেয়ার।
নিয়মিত আয়ের উৎস যাচাই বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এজন্য বিনিয়োগকারীদের আয়ের সার্টিফিকেট, বেতন স্লিপ, ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও টিআইএন জমা দিতে হবে। কেউ মিথ্যা তথ্য দিলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খসড়া অনুযায়ী, বিনিয়োগকারীর সর্বদা ইক্যুইটি থাকতে হবে মার্জিনের কমপক্ষে ৭৫% বা পোর্টফোলিওর ১৭৫%। যদি এ অনুপাত কমে যায়, ব্রোকারেজ হাউস মার্জিন কল দেবে। বিনিয়োগকারী পরপর তিনবার মার্জিন কল পূরণে ব্যর্থ হলে সাত দিনের নোটিশ দিয়ে শেয়ার বিক্রি করা যাবে। তবে ইক্যুইটি যদি ৫০ শতাংশের নিচে নেমে যায়, তাহলে কোনো নোটিশ ছাড়াই শেয়ার বিক্রি করার ক্ষমতা থাকবে ব্রোকারেজ হাউসের কাছে।
বিএসইসি জানিয়েছে, এই বিধিমালার মূল লক্ষ্য হলো বাজারে অতিরিক্ত জুয়াড়ি প্রবণতা কমানো, বিনিয়োগকারীর আর্থিক সক্ষমতা যাচাই করা এবং একটি স্থিতিশীল ও টেকসই বাজার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। তবে বিশ্লেষকদের মতে, নতুন বিধিমালা কার্যকর হলে একদিকে স্বল্প আয়ের বিনিয়োগকারীরা মার্জিন সুবিধা থেকে বাদ পড়বেন, অন্যদিকে বাজারে অতিরিক্ত জল্পনা-কল্পনা কমে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে।
এ বিধিমালা নিয়ে জনমত গ্রহণের জন্য আগামী ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছে বিএসইসি। এরপর মতামত পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত বিধিমালা প্রকাশ করা হবে। ●
অকা/পুঁবা/ই/সকাল/২০আগস্ট, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 4 months আগে

