অর্থকাগজ প্রতিবেদন
বাংলাদেশের শেয়ার বাজার বর্তমানে ২০২৫ সালে এসে এক ধরনের চাপ ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)—এই দুটি প্রধান বাজারে সূচকগুলো দীর্ঘ সময় ধরে নিম্নমুখী। ডিএসইএক্স সূচক বর্তমানে প্রায় ৫,২০০ পয়েন্টে নেমে এসেছে, যা বাজারের স্থিতিশীলতার অভাবকে নির্দেশ করে। বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা, মৌলভিত্তিহীন কোম্পানির আধিক্য, ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমে যাওয়ার প্রভাব স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে।
বাংলাদেশের পুঁজি বাজারে লাভজনক কোম্পানির অভাব একটি বড় সংকট হিসেবে চিহ্নিত। বহু কোম্পানি বছরের পর বছর লোকসান করে যাচ্ছে কিংবা কার্যত নিষ্ক্রিয়। নতুন আইপিও (Initial Public Offering) কমে আসছে, আর যেগুলো আসছে তা নিয়েও রয়েছে সমালোচনা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আইপিওতে উচ্চমূল্যে শেয়ার বিক্রির পর বাজারে শেয়ারের দর পতনের ঘটনা ঘটছে, যা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বড় ধরনের ক্ষতির মুখে ফেলছে।
এছাড়াও, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অনাগ্রহ বাজারে তারল্যের ঘাটতি তৈরি করেছে। ব্যাংক, বীমা এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখন তুলনামূলক নিরাপদ বিনিয়োগে ঝুঁকছে, যার ফলে শেয়ার বাজারে দীর্ঘমেয়াদি পুঁজির অভাব দেখা দিচ্ছে। বাজারে তরলতার অভাবে শেয়ার মূল্যে অস্বাভাবিক ওঠানামা বাড়ছে, যা বিনিয়োগকারীদের আরও হতাশ করছে।
একইসাথে রয়েছে বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট, যা দীর্ঘদিনের কারসাজি, অস্বচ্ছ আর্থিক বিবরণী, এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে তৈরি হয়েছে। শেয়ার বাজারের পূর্বের দুর্নীতি ও স্ক্যান্ডালগুলোর স্মৃতি বিনিয়োগকারীদের নতুন করে ঝুঁকি নিতে নিরুৎসাহিত করছে।
তবে সকল নেতিবাচকতা সত্ত্বেও কিছু ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিতও দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (BSEC) বিভিন্ন নীতিগত সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছে। এর মধ্যে রয়েছে—আইপিও প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, কর্পোরেট গভার্ন্যান্স জোরদার, ও ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার উন্নয়ন। এসব উদ্যোগ বাজারে প্রযুক্তিনির্ভরতা বাড়িয়েছে এবং তরুণ বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করছে।
বাংলাদেশের পুঁজি বাজারে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা আনতে হলে আরও কিছু পদক্ষেপ প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে মৌলভিত্তিসম্পন্ন ও লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তালিকাভুক্ত করা, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য করছাড় বা প্রণোদনা চালু করা, শেয়ার কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য নিয়মিত ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি প্রোগ্রাম চালু করা।
সার্বিকভাবে, বাংলাদেশের পুঁজি বাজারের ভবিষ্যৎ এখনও সম্ভাবনাময়। বর্তমানের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে যদি সুসংহত পরিকল্পনায় বাজারকে চালিত করা যায়, তাহলে শেয়ার বাজার দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে পারে।
অকা/পুঁবা/সকাল/ ৮ মে, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ

সর্বশেষ হালনাগাদ 7 months আগে

Leave A Reply

Exit mobile version