অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হিমায়িত চিংড়ির রফতানি বাড়ায় আগের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা করছেন বাংলাদেশের হিমায়িত চিংড়ি শিল্প ব্যবসায়ীরা। দেশের সাদা সোনাখ্যাত রফতানিমুখী হিমায়িত চিংড়ি শিল্প আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ৭ মাসে আগের অর্থ বছরের তুলনায় রফতানি বেড়েছে ৪৯২ কোটি ৭ লাখ টাকা বেশি। এতে নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা।
মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ খুলনার উপ-পরিচালক মো. আলফাজ উদ্দীন শেখ জানান, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম ৭ মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) খুলনাঞ্চল থেকে হিমায়িত চিংড়ি রফতানি হয়েছে ১৩ হাজার ১৯ টন। যার বাজার মূল্য প্রায় ১ হাজার ৯৯০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে একই সময় চিংড়ি রফতানি হয় ১০ হাজার ৩৯৯ টন। যার বাজার মূল্য ছিল ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ৭ মাসে আগের অর্থ বছরের তুলনায় রফতানি বেড়েছে ৪৯২ কোটি ৭ লাখ টাকা বেশি।
৯ জানুয়ারি হিমায়িত চিংড়ি রফতানিকারকদের বাণিজ্যিক সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) পরিচালক তারিকুল ইসলাম জহির বলেন, খুলনাঞ্চলে ৬৩টি চিংড়ি প্রক্রিয়াকরণ কোম্পানি ছিল। উৎপাদন ও আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা হ্রাসসহ নানা কারণে চিংড়ি প্রক্রিয়াকরণ প্রায় ৩৩টি কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে। পর্যাপ্ত কাঁচামালের অভাবে বন্ধ হয়েছে একের পর এক কারখানা। ব্যাংকের সুদ ও বিদ্যুতের বিল বেড়ে যাওয়ার পরও কিছু কোম্পানি এখনও টিকে আছে। হিমায়িত চিংড়ি শিল্প সম্প্রতি আবারও কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
চিংড়ি শিল্পকে আরও চাঙা করতে হলে সরকারিভাবে রফতানিকারকদের ভর্তুকি দিতে হবে। বিদ্যুৎ ও অন্যান্য উৎপাদন খরচে ভর্তুকি দিতে হবে। ভেনামি চিংড়ি চাষ সহজতর করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের সাদা সোনাখ্যাত গলদা ও বাগদা চিংড়ি সনাতন, আধানিবিড়সহ নানা পদ্ধতিতে চাষ হয়। গত কয়েক বছর বিদেশে চিংড়ির বাজার দখল করে আছে ‘ভেনামি’ নামে এক ধরনের হাইব্রিড চিংড়ি, যা খুলনাঞ্চলেও বর্তমানে চাষ হচ্ছে।
খুলনার চিংড়ি রফতানি প্রতিষ্ঠান আছিয়া সি ফুডের লিমিটেডের পরিচালক ইউসা জহির বলেন, দীর্ঘদিন পর হিমায়িত চিংড়ি রফতানিতে সুবাতাস ফিরেছে। করোনা পরিস্থিতির ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ভেতরে আবার বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সম্প্রতি কয়েক বছর চিংড়ি শিল্পে অচল অবস্থা তৈরি হয়েছিল। একের পর এক শিপমেন্ট বাতিল হওয়ায় রফতানিকারকরা ভয়াবহ তির মুখে পড়েন। কিন্তু সম্প্রতি কয়েক মাস চিংড়ি রফতানি কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এতে নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা।
রফতানিকারকরা বলেন, দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখে চিংড়ি শিল্প। ইউরোপের দেশগুলোতে চিংড়ি ও অন্যান্য মাছের চাহিদা এবং মূল্য কমে গেছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারেও চাহিদা ও মূল্য কমে যাওয়ায় রফতানির ওপর প্রভাব পড়েছে। বিদেশের ক্রেতারা সময় মতো মূল্য পরিশোধও করেন না। আর্থিক তির মুখে পড়ে অনেকেই চিংড়ি রফতানি বন্ধ রেখেছিলেন। পাশাপাশি ভাইরাসের কারণেও খুলনাঞ্চলে চিংড়ি উৎপাদন কমেছে। তবে চিংড়ি রফতানি বেড়ে যাওয়ায় আশা করা যাচ্ছে উৎপাদনও বাড়বে। ●
অকা/মৎখা/ফর/বিকাল/১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 9 months আগে

