মো. রেজাউল করিম ●
চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত ২৮টি দেশ এবং প্রাচ্যের জাপান রাশিয়ার রাজনৈতিক ব্যক্তি, পুঁজিপতি, ব্যাংক ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপরে ক্রমান্বয়ে অবরোধ ঘোষণা করতে থাকে। শুধু তাই নয়, রাশিয়া যেন বর্হিবিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য করতে না পারে সে লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণাধীন আন্তর্জাতিক আন্তঃদেশীয় অর্থ লেনদেন ব্যবস্থা ‘সুইফট’ থেকে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশসমূহের উদ্দেশ্য ছিল যা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেছেনও; অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য হচ্ছে রাশিয়ার অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেয়া যেন রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যয় মেটাতে গিয়ে সামরিকভাবে দূর্বল একটি রাষ্ট্রে পরিণত হয়, আর যেন কোনও দিন ইউরোপের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে না পারে!
যুদ্ধ শুরুর আগের দিন অর্থাৎ ২৩ ফেব্রুয়ারি ১ মার্কিন ডলারের বিপরীতে রুবেলের মূল্যমান ছিল ৮১ রুবেল। মাত্র কুড়ি দিনের ব্যবধানে ১১ মার্চ রুবেল তার মূল্যমান ৩৯ শতাংশ হারিয়ে তা দাঁড়ায় ১৩৪ রুবেলে। কিন্তু বর্তমানে রুবেল যুদ্ধপূর্ব সময়ের চেয়েও শক্তিশালী মুদ্রায় রূপান্তরিত হয়েছে। ১০ জুলাই ১ ইউএস ডলারের বিপরীতে রুবেলের মূল্যমান ছিল ৬৪ রুবেল, অর্থাৎ ১১ই মার্চের তুলনায় মার্কিন ডলারের বিপরীতে রুবেলের মূল্য ২১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অর্থনীতিবিদগণের জন্য এক বড় শিক্ষণীয় আর যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলোর কাছে বিশাল এক ধাক্কা। সকল অর্থনীতিবিদকে অবাক করে দিয়ে ডজন ডজন নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলা করে রাশিয়ার অর্থনীতি শুধু টিকেই থাকেনি, বরং অতিক্রম করেছে যুদ্ধ পূর্ব অবস্থাকে! বিষয়টি পশ্চিমা অর্থনীতিবিদ এবং গবেষকদের অবাক করেছে! কোন দেশ যখন যুদ্ধের মধ্যে যায় তখন দেশটির অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি সাধারণত সে দেশের মুদ্রার মান পড়তে থাকে। সেই সঙ্গে রিজার্ভ ও রফতানি কমে যায়। কিন্তু রাশিয়ার ক্ষেত্রে হয়েছে উল্টো, দেশটির মুদ্রা রুবেল শক্তিশালী হচ্ছে এবং রফতানি আয়ও বাড়ছে। রাশিয়ার বাণিজ্য উদ্বৃত্ত বেড়ে হয়েছে ৩৭ বিলিয়ন ডলার। এর মানে হচ্ছে দেশটির আমদানি কমেছে এবং রফতানি আরও বেড়েছে।
পাঁচ মাস ব্যাপী যুদ্ধে বিপুল ব্যয়ের পরেও সমগ্র বিশ্বে খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউরোপীয় দেশসমূহে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, ইউরোপীয় দেশসমূহে খাদ্যসহ নিত্য ব্যবহার্য পণ্যের মূল্য বেড়েছে। অথচ খোদ রাশিয়াতে জ্বালানি বা পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পায়নি। বিশ্বের অর্থ ব্যবস্থায় রাজত্বকারী মুদ্রা মার্কিন ডলারের বিপরীতে রুবেলের মূল্যমান বেড়ে গিয়েছে।এর কারণ বিশ্লেষণে দেখা যায়, পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার অন্যতম লক্ষ্য ছিল রাশিয়ার জ্বালানি খাত। রুশ সরকারের সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আয় হয় এ খাত থেকেই। নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে রাশিয়ার তেল, গ্যাস ও কয়লা রফতানিতে আঘাত হানাই ছিল পশ্চিমা দেশগুলোর কৌশল। কিন্তু ইউরোপীয় দেশগুলো যা করেনি তা হচ্ছে নিজের অবস্থান বিবেচনায় না নিয়ে অন্যকে আঘাত করার চেষ্টা। উল্লেখ্য, পশ্চিম ইউরোপের মোট জ্বালানির ৪০ শতাংশই আসে রাশিয়া থেকে। রুশ জ¦ালানির ওপরে দাপ্তরিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও প্রায় সকল ইউরোপীয় দেশই রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি অব্যাহত রাখে। কেননা, পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের ইউরোপের বিপুল জ¦ালানি চাহিদা মেটানোর মতো সক্ষমতা নাই। তাছাড়া সবাইকে অবাক করে দিয়ে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই উল্টো বেড়েছে রাশিয়ার জ্বালানি রফতানি। ইউরোপীয় দেশসমূহ পাইপ লাইনের মাধ্যমে রাশিয়া থেকে পেট্রোলিয়াম ও গ্যাস আমদানি করে। কয়েকদিন কিংবা কয়েক মাসেও বিকল্প অবকাঠামো গড়ে তোলা ইউরোপীয় দেশসমূহ কেন, কোনও দেশের পক্ষেই সম্ভব না। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও সুইডেন রাশিয়া থেকে জ¦ালানি আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করে রাখে। এর ফলে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পায়। এ সময়ে রাশিয়া তার বন্ধু দেশের জন্য তেলের মূল্য হ্রাস করে। এই সুযোগে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্রদেশসমূহের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চায়না ও ভারত রাশিয়া থেকে পেট্রোলিয়াম আমদানি বিপুল পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এমন কি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন সশরীরে সৌদি আরবে এসে তেল উৎপাদন বৃদ্ধির অনুরোধ করলেও সৌদি আরবের ‘ডিফ্যাক্টো’ শাসক বিন সালমান ‘না’ করে দেন। এর ফলে বিশ্বে জ্বালানি বাজারে প্রচণ্ড অস্থিরতা অব্যাহত রয়েছে।
সামগ্রিকভাবে যা হয়েছে তা হচ্ছে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই যুদ্ধ শুরুর দুই মাস পরে এপ্রিল মাসে রাশিয়া ৩৬ লাখ ব্যারেল পেট্রোলিয়াম রফতানি করেছে। যা আগের মাসের থেকে ৩ লাখ ব্যারেল বেশি। যুদ্ধের মধ্যে পেট্রোলিয়াম রফতানি থেকে রাশিয়ার রাজস্ব আয় দিন দিন বাড়ছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই পেট্রোলিয়াম বিক্রি থেকে আয় হয়েছে ৬০ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে পুরো বছরে পেট্রোলিয়াম বিক্রি থেকে দেশটির আয় ছিল ১২০ বিলিয়ন ডলার।
ভারত, ইতালি, তুরস্ক ও চীনে রাশিয়ার পেট্রোলিয়াম রফতানি বেড়েছে। ভারত গত মার্চ ও এপ্রিল মাসে রাশিয়া থেকে এক কোটি ৭০ লাখ ব্যারেল পেট্রোলিয়াম কিনেছে। দেশটি রাশিয়ার পেট্রোলিয়াম কেনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এমন কি সৌদি আরব রাশিয়া থেকে পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম আমদানি অব্যাহত রেখেছে। কেননা, সৌদি আরব বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পেট্রোলিয়াম উৎপাদনকারী দেশ হলেও অপরিশোধিত পেট্রোলিয়ামই রফতানি করে। কিন্তু রাশিয়া পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম রফতানি করে। সাম্প্রতিক হিসাবে দেখা যায় রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ৩রা জুন পর্যন্ত ৯,৭০০ কোটি ডলার আয় করেছে ফসিলজাত জ্বালানি থেকে। এর মধ্যে ৬১ শতাংশই আমদানি করে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন।
ওদিকে রুবেলের দর পতন ঠেকাতে মার্চ মাসেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ‘অবন্ধুসুলভ’ দেশগুলোকে রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানির জন্য শর্ত বেঁধে দেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। পুতিন বলেন, ক্রেতাদের গ্যাসের মূল্য রুবেলে পরিশোধ করতে হবে। এ জন্য তাদের গাজপ্রমের ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলে ইউরো ও ডলারে পরিশোধিত অর্থ রুবেলে রূপান্তর করতে হবে। আর তখনই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে রুশ জ¦ালানি আমদানির প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্তি স্পষ্ট হয়ে পড়ে। হাঙ্গেরীর প্রেসিডেন্ট বলেন, রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে প্রকারান্তরে হাঙ্গেরীর ওপর ‘পারমাণবিক বোমা’ ফেলা হয়েছে। হাঙ্গেরী মনে করছে, নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য অস্পষ্ট এবং কত দিনের মধ্যে এর সুফল পাওয়া যাবে, তার কোনো সময়সীমা নেই। নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য হলো, এটি কঠিন হতে থাকে এবং এক সময় তা ভেঙে ফেলা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। সেই বিবেচনা থেকে বলা যায়, সামনের দিনগুলো আরও খারাপ হতে পারে!
একটি পরিসংখ্যান রাশিয়ার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পরিষ্কার হতে পারে সবার কাছে। ইউরোপের সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর পরবর্তী ১০০ দিনে তেল, গ্যাস ও কয়লা রফতানি বাবদ রাশিয়ার আয় হয়েছে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার। রাশিয়া পৃথিবীর বিশালতম দেশ। এদেশকে কোনও ধরনের খনিজ পদার্থ আমদাান করতে হয় না। খাদ্যদ্রব্যও নয়। বরং রাশিয়ার পৃথিবীর অন্যতম প্রধান খাদ্য রফতানিকারক দেশ। প্রকৃতপক্ষে রাশিয়া ও ইউক্রেনকে ইউরোপের রুটির বাস্কেট বলা হয়ে থাকে। শিল্পোন্নত দেশ হওয়ায় সামান্য কিছু যন্ত্রাংশ ও কম্পিউটার সামগ্রী ছাড়া এ খাতেও রাশিয়ার আমদানি একেবারে কম। আর যুদ্ধাস্ত্র রফতানি খাতে রাশিয়ার আয়ও অবাক করার মতো! রাশিয়া পৃথিবীতে দ্বিতীয় শীর্ষ অস্ত্র রফতানিকারক দেশ যা বিশ্বের এ খাতে মোট রফতানির ১৯ শতাংশ।
ভারত ও চায়না হ্রাসকৃত মূল্যে রাশিয়ার জীবাশ্ম বা ফসিলজাত জ্বালানি আমদানি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে। ১০০ দিনে রাশিয়ার মোট তেল রফতানির ১৮ শতাংশই গিয়েছে ভারতে। ‘সুইফট’ সিস্টেম থেকে রাশিয়াকে বহিষ্কার করায় বিভিন্ন দেশ রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানির মূল্য পরিশোধ করছে বিভিন্নভাবে। ইউরোপের বেশ কিছু দেশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের দাবী মেনে নিয়ে রুবেলেই মূল্য পরিশোধ করছে। তবে কোন দেশ কিভাবে মূল্য পরিশোধ করছে গ্যাজপ্রম প্রতিষ্ঠান তা প্রকাশ করেনি। বরং যে হাজারখানেক প্রতিষ্ঠান রাশিয়ায় ব্যবসায় বন্ধ রেখেছে সে কোম্পানিগুলো লোকসানতো করছেই, উপরন্তু রাশিয়া হুমকি দিয়ে রেখেছে রাশিয়াতে ঐ সকল কোম্পানির সম্পদও জব্দ করা হতে পারে!
এ ছাড়া পুতিনের রাশিয়া রুবেলের দর স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণভাবেও কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বিদেশি যে সব বিনিয়োাগকারী রাশিয়ায় কর্পোরেট শেয়ার এবং সরকারি বন্ড ক্রয় করেছে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার পরে তারা যেন সেগুলো বিক্রি করে দিতে না পারে রুশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক সে ব্যবস্থাই নিয়েছে। এছাড়া যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান রুবেল বিক্রি করে ডলার বা ইউরো কিনবেন না, অর্থাৎ রুবেল সঞ্চয় করবেন; তাদের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে। রাশিয়ার অনেক কোম্পানি বিদেশি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ব্যবসা করে ডলার, ইউরো এবং ইয়েন আয় করছে। কিন্তু এখন রাশিয়ার কোম্পানিগুলো বিদেশে ব্যবসা করে যে আয় করবে তার ৮০ শতাংশ রুবেলে রূপান্তর করে নিতে হবে। এর ফলে রাশিয়ার মুদ্রা রুবেলের একটি বড়ো চাহিদা তৈরি হয়েছে। রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ পর্যটকদের মাধ্যমে যেন দেশের বাইরে অর্থ চলে যায় সে লক্ষ্যেও ব্যবস্থা নিয়েছে পুতিন সরকার। পূর্বে দেশের বাইরে অর্থ পাঠাতে হলে সেটি মার্কিন ডলার বা ইউরোতে পাঠাতে হতো। যেহেতু সেটি বন্ধ করা হয়েছে, সেজন্য মার্কিন ডলার বা ইউরোর চাহিদা কমে গেছে। ফলে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা দেশের ভেতরেই রয়ে গিয়েছে। এই পদক্ষেপও রুবেলের দরপতন ঠেকাতে সাহায্য করেছে।
ফলে রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানি রফতানি বাড়ছে, বিশ্বের জীবাশ্ম জ্বালানির মূল্য উচ্চ হওয়ায় এ খাতে রাশিয়ার আয় বাড়ছে। তাতে দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বাইরে যাওয়া ঠেকানো সম্ভব হয়েছে, কোনো খাতেই আমাদানি বাড়াতে হয়নি। জাতিসংঘের উদ্যোগে বিশ্বের খাদ্য চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে অচিরেই রাশিয়ার মজুদকৃত খাদ্য রফতানির ওপরে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে এ খাতেও রাশিয়ার আয় বেড়ে যাবে। ফলে রুবেলের দর উর্ধ্বমুখি হবে এবং রুশ অর্থনীতি পঙ্গু করে দেয়ার যে মার্কিনী পরিকল্পনা তা বাস্তবায়নের সম্ভাবনা কমে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। ●
লেখক কথাসাহিত্যিক ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশ্লেষক
rezaul.karim2022@yahoo.com
অকা/বিঅ/বিকেল, ২৩ জুলাই, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 3 years আগে

