অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
সূচক ও লেনদেনের অবনতির মধ্য দিয়ে নেতিবাচক প্রবণতায় আরো একটি সপ্তাহ পার করেছে দেশের পুঁজি বাজার। গত সপ্তাহের শেষ দিকে এসে পুঁজি বাজারগুলো ইতিবাচক ধারায় ফিরলেও প্রথম তিন দিনের সূচক ও লেনদেনের অবনতি ঘটে তারই প্রতিফলন ছিল পুঁজি বাজারের সপ্তাহিক বাজার পর্যবেক্ষণে। ফলে সপ্তাহটিতে উভয় বাজারেই লেনদেন ও সূচকের কমবেশি অবনতি ঘটেছে।
গত সপ্তাহের প্রথম দিকের বাজার আচরণে আগের সপ্তাহের ধারাবাহিকতা বজায় ছিল। সপ্তাহের প্রথম তিনটি কর্মদিবসে উভয় বাজারই বড় ধরনের সূচক হারায়।
সপ্তাহের শেষ দু’দিন এ প্রবণতা কিছুটা কাটিয়ে উঠলেও সার্বিক বাজারচিত্রে তার কোনো প্রতিফলণ ঘটেনি। দেশের প্রধান পুঁজি বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহে ৩৪ দশমিক ৮০ পয়েন্ট অবনতির শিকার হয়। ২১ সেপ্টেম্বর সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে ৫ হাজার ৪৪৯ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট থেকে সপ্তাহ শুরু করা সূচকটি ২৫ সেপ্টেম্বর সপ্তাহান্তে নেমে আসে ৫ হাজার ৪১৫ দশমিক ১৩ পয়েন্টে। একই সময় ডিএসইর দুই বিশেষায়িত সূচক ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহর অবনতি ঘটে যথাক্রমে ৪ দশমিক ১০ ও ৬ দশমিক ১৭ পয়েন্ট।
সপ্তাহের শুরুর দিকে সূচকের অবনতির প্রভাব পড়ে বাজারটির লেনদেনেও। সপ্তাহের শুরুতে যেখানে বাজারটির লেনদেন ছিল ৭০০ কোটির ওপরে সেখানে মাঝামাঝি সময়ে এসে লেনদেন নেমে আসে ৪৬৭ কোটি টাকায়।
এভাবে গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেন দাঁড়ায় ২ হাজার ৯১৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকায়, যা আগের সপ্তাহ অপেক্ষা ১৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ কম। আগের সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেন ছিল ৩ হাজার ৫০৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা। একইভাবে হ্রাস পেয়েছে বাজারটির সাপ্তাহিক গড় লেনদেনও। আগের সপ্তাহের ৭০১ কোটি ৬ লাখ টাকার স্থলে গত সপ্তাহে বাজারটির গড় লেনদেন দাঁড়িয়েছে ৫৮৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকায়। সপ্তাহের শেষ দু’দিন বাজার পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বাজারটির লেনদেনের আরো অবনতি ঘটতে পারত।
গত সপ্তাহের শেষ দিকে এসে ডিএসইর বাজার আচরণে নেতিবাচক প্রবণতা কাটলে শুরুতে বাজার মূলধনের যে অবনতি ঘটে তার পুরোটা ফিরে পায়নি ডিএসই। এ সময় ডিএসসির বাজার মূলধনের অবনতি ঘটে ১ হাাজর ১৮ কোটি টাকা। ৭ লাখ ২৪ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা মূলধন নিয়ে বাজারটি সপ্তাহ শুরু করলেও ২৫ সেপ্টেম্বর দিনশেষে ডিএসইর মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ২৩ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকায়, যা আগের সপ্তাহ অপেক্ষা শূন্য দশমিক ১৪ শতাংশ কম।
গত সপ্তাহে ঢাকা শেয়ার বাজারের লেনদেনের শীর্ষ কোম্পানি ছিল সামিট গ্রুপের কোম্পানি সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট। এ সময় গড়ে প্রতিদিন ২৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে কোম্পানিটির। গড়ে প্রতিদিন ২১ কোটি ৭৪ লাখ টাকার শেয়ার বেচাকেনা করা খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ছিল লেনদেনের দ্বিতীয় শীর্ষ কোম্পানি।
সাপ্তাহিক লেনদেনে এ সময় ডিএসইর শীর্ষ দশ কোম্পানির অন্যগুলো ছিল যথাক্রমে ওরিয়ন ইনফিউশন, ফারইস্ট নিটিং অ্যান্ড ডাইং লি., টেকনো ড্রাগস লি., ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ইনফরমেশন সিস্টেমস নেটওয়ার্ক, সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস ও এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মূল্যবৃদ্ধির তালিকার শীর্ষে উঠে আসে বিবিধ খাতের কোম্পানি জি কিউ বল পেন ইন্ডাস্ট্রিজ। পুরো সপ্তাহে কোম্পানিটির মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ১৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এ তালিকায় দ্বিতীয় কোম্পানি ছিল জেনেক্স ইনফোসিস লি.।
কোম্পানিটির মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ১৭ দশমিক ৬১ শতাংশ। ডিএসসির সপ্তাহিক মূল্যবৃদ্ধির তালিকার শীর্ষ দশ কোম্পানির অন্যগুলোর মধ্যে সিমটেক্স ১৬ দশমিক ৩২ শতাংশ, দুলামিয়া কটন মিলস ১৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ, ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ১৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ, নাভানা সিএনজি ১২ দশমিক ৭২ শতাংশ, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ, সিলকো ফার্মা ১০ দশমিক ০৬ শতাংশ, স্যালভো কেমিক্যালস ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ ও সামিট অ্যালাইয়েন্স পোর্টের ৯ দশমিক ০৪ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি ঘটে।
এ সময় ডিএসইর দরপতনের শীর্ষে ছিল বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানি বারাকা পাওয়ার। উৎপাদন বন্ধ থাকার কারণে সপ্তাহের শুরুতে কোম্পানিটি আগের ‘বি’ গ্রুপ থেকে ‘জেড’ গ্রুপে নেমে আসায় ২০ দশমিক ৭২ শতাংশ দরপতনের শিকার হয়। একই কারণে ২০ দশমিক ৫৯ শতাংশ দরপতনের শিকার টেক্সটাইল খাতের কোম্পানি জাহিন স্পিনিং ছিল এ তালিকার দ্বিতীয় কোম্পানি।
সপ্তাহটিতে ডিএসইর দরপতনের শীর্ষ দশ কোম্পানির অন্যগুলোর মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস ১৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ, স্যোসাল ইসলামী ব্যাংক ১৭ দশমিক ০৭ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ১৬ দমমিক ৬৭ শতাংশ, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ১৬ দমমিক ০৩ শতাংশ, ইউনিয়ন ব্যাংক ১৫ দমমিক ৭৯ শতাংশ, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ ১৫ দমমিক ৫২ শতাংশ ও হামিদ ফেব্রিক্স ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ দরপতনের শিকার হয়। ●
অকা/পুঁবা/ফর/রাত/২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 6 days আগে