অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
অবশেষে পতনের ধাক্কা সামলে নিতে শুরু করেছে পুঁজি বাজার। ২৪ সেপ্টেম্বর লেনদেন ও সূচকের বড় ধরনের উন্নতি দিয়েই দিন শেষ করেছে দেশের প্রধান পুঁজি বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। আগের কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় লেনদেনের শুরুতে বিক্রয়চাপের মুখে পড়লেও শেষদিকে এসে তা সামলে নেয় বাজারটি। দিনের শেষভাগে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী আচরণ ফিরিয়ে আনে বিনিয়োগকারীদেরও। এতে দিনশেষে সূচকের যেমন উন্নতি ঘটে তেমনি বৃদ্ধি পায় লেনদেনও। তবে একই সময় বিপরীত চিত্র দেখা গেছে দেশে দ্বিতীয় পুঁজি বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই)। এখানে সূচকের মিশ্র আচরণের পাশাপাশি হ্রাস পায় লেনদেনও।
গত সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস থেকেই মূলত পুঁজি বাজারগুলোতে নেতিবাচক আচরণ শুরু হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রক সংস্থার মাধ্যমে বাজারের বড় বিনিয়োগকারীদের (যাদের বার্ষিক মুনাফা ৫ লাখ টাকা বা তার বেশি) তালিকা চাইলে তা বাজারের স্বাভাবিক আচরণকে প্রভাবিত করে। পরবর্তীতে টানা চারদিন সূচক হারায় পুঁজি বাজারগুলো। বাজার থেকে এক প্রকার হাত গুটিয়ে নিতে শুরু করেন বিনিয়োগকারীরা। এতে ধারাবাহিকভাবে অবনতি ঘটতে থাকে লেনদেনেরও। ডিএসইর লেনদেন নেমে আসে ৪৬৭ কোটি টাকায়। অথচ এর দুই সপ্তাহ আগেও বাজারটির লেনদেন ছিল হাজার কোটি টাকার বেশি। দীর্ঘ মন্দার আক্রান্ত থাকার পাশাপাশি ব্যাপক সংবেদনশীল হওয়ায় সরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে যৌক্তিক একটি বিষয়ও বাজারকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে।
২৪ সেপ্টেম্বর লেনদেনের শুরুতে বাজারগুলো যথারীতি বিক্রয়চাপের মুখে পড়ে। বেলা ১২টা পর্যন্ত এ চাপ অব্যাহত থাকে। ৫ হাজার ৩৪৭ দশমিক ৪৬ পয়েন্ট থেকে সকালে লেনদেন শুরু করা সূচকটি দুপুর ১২ টার দিকে নেমে আসে ৫ হাজার ৩৩৮ পয়েন্টে। দুপুর ১২টার পর হঠাৎ পাল্টে যায় বাজার আচরণ। লেনদেনের এ পর্যায়ে ফের ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করে বাজার সূচক, যা অব্যাহত থাকে দিনের শেষ পর্যন্ত। বেলা ২টার পর ডিএসই সূচকের উন্নতি রেকর্ড করা হয় ৫৮ পয়েন্ট। তবে দিনের সমন্বয় শেষে বৃদ্ধি পাওয়া সূচকের ৪৫ দশমিক ১৮ পয়েন্ট টিকে থাকে। এ সময় বাজারটির দুই বিশেষায়িত সূচক ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহর উন্নতি ঘটে যথাক্রমে ১৮ দশমিক ৯৯ ও ১৩ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট।
দেশের দ্বিতীয় পুঁজি বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে সার্বিক মূল্যসূচকের ১ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট উন্নতি ঘটলেও বিশেষায়িত দুই সূচকের মধ্যে সিএসই-৩০ ৩৬ দশমিক ৯৮ পয়েন্ট অবনতির শিকার হয়। বিষেশায়িত অপর সূচক ডিএসইএক্স ২ দশমিক ৯১ পয়েন্ট উন্নতি ধরে রাখতে সক্ষম হয়।
সূচকের পাশাপাশি ২৪ সেপ্টেম্বর ডিএসইর লেনদেনের বেশ অগ্রগতি ঘটে। এ দিন ৫৭৬ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে বাজারটি, যা আগের দিন অপেক্ষা ১০৯ কোটি টাকা বেশি। ২৩ সেপ্টেম্বর ডিএসইর লেনদেন ছিল ৪৬৭ কোটি টাকা।
পুঁজি বাজার সংশ্লিষ্টরা বাজার আচরণকে খুবই স্বাভাবিক মনে করেন। তাদের মতে, বাজারে দুই ধরনের বিনিয়োগকারী রয়েছে। সাধারণ তথা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা বাজার নিয়ে যতটা হতাশায় ভোগেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কিন্তু ততটা নয়। তারা বরাবরই মন্দা বাজারের সুযোগ কাজে লাগায়। গত কয়েক দিনে বাজারের মূল্য স্তরে যে পরিবর্তন ঘটেছে এ মুহূর্তে তারা তা কাজে লাগাচ্ছে। অথচ ইতোমধ্যে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ কমবেশি লোকসানের শিকার হয়েছেন। তাই বাজারের ভালো সময়ের জন্য অপেক্ষা করার বিকল্প নেই। কিন্তু বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী ভয়ে বা নানা গুজবের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে লোকসানের শিকার হন।
পুঁজি বাজারে ব্যাংকিং খাতে তালিকাভুক্ত দুই কোম্পানি যমুনা ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংককে যথাক্রমে ৮০০ কোটি টাকা ও ৫০০ কোটি টাকা (মোট ১৩০০ কোটি টাকা) বন্ড ইস্যুর অনুমোদন দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
২৩ সেপ্টেম্বর পুঁজি বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর ৯৭৪তম কমিশন সভায় ব্যাংকগুলোর বন্ড ইস্যু করার প্রস্তাব ট্রাস্টি সনদ জমা দেয়ার শর্ত সাপেে অনুমোদন করা হয়েছে। কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়।
যমুনা ব্যাংকের ক্ষেত্রে রেফারেন্স রেটের সাথে ৩ শতাংশ কুপন মার্জিন যোগ হয়ে বন্ডটির কুপন রেট নির্ধারিত হবে। আন-সিকিউরড, নন-কনভার্টিবল, রিডিমেবল, ফোটিং রেট সাব-অর্ডিনেট এই বন্ডটির প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও উচ্চ সম্পদশালী একক বিনিয়োগকারীদের নিকট ইস্যু করা হবে। এ বন্ডটির প্রতি ইউনিটের অভিহিত মূল্য ৫ লাখ টাকা। বন্ডটির মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ দ্বারা ব্যাংকটি তার টায়ার-২ মূলধনের ভিত্তি আন্ডার ব্যাসেল ওওও শক্তিশালী করবে। আলোচিত বন্ডের ট্রাস্টি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে ডিবিএইচ ফাইন্যান্স পিএলসি। আর এর অ্যারেঞ্জারের দায়িত্বে থাকবে ইউসিবি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।
অপর দিকে, পূবালী ব্যাংক পিএলসির ৫০০ কোটি টাকা মূল্যের আন-সিকিউরড, নন-কনভার্টিবল, রি-ডিমেবল, ফোটিং রেট, সাব-অর্ডিনেটেড বন্ড প্রস্তাব অনুমোদন করেছে কমিশন, যার রেফারেন্স রেটের সাথে ৩ শতাংশ কুপন মার্জিন যোগ হয়ে বন্ডটির কুপন রেট নির্ধারিত হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে পূবালী ব্যাংকের কুপন সম্পর্কে আরো জানানো হয়েছে, এটি প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও উচ্চ সম্পদশালী একক বিনিয়োগকারীদের নিকট ইস্যু করা হবে এবং এই বন্ডের প্রতি ইউনিটের অভিহিত মূল্য হবে ৫ লাখ টাকা। এই বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করে পূবালী ব্যাংক পিএলসি-এর ব্যাসেল ৩ অনুযায়ী টায়ার-২ মূলধনভিত্তি শক্তিশালী করা হবে।
উক্ত বন্ডের ট্রাস্টি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে ডিবিএইচ ফাইন্যান্স পিএলসি এবং অ্যারেঞ্জার হিসেবে কাজ করবে ইউসিবি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড। এ ছাড়া উক্ত বন্ডটিও অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে তালিকাভুক্ত হবে। ●
অকা/পুঁবা/ফর/বিকাল/২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 1 week আগে