অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
দেশের পুঁজি বাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানিগুলোর নগদ কার্যকর প্রবাহ (NOCFPS) চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বেশ বৈচিত্র্যময় অবস্থান তুলে ধরেছে। খাতটিতে মোট ৩৪টি কোম্পানি থাকলেও জুলাই–সেপ্টেম্বর ২০২৫ প্রান্তিক পর্যন্ত ২৭টি প্রতিষ্ঠান তাদের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৫টি কোম্পানি নগদ প্রবাহ বৃদ্ধি অর্জন করেছে, ৮টির প্রবাহ কমেছে এবং ৪টি কোম্পানি টানা মাইনাস অবস্থায় রয়েছে। ডিএসই–এর হিসাব বলছে—উৎপাদন ব্যয়, কাঁচামালের দাম, বাজার চাহিদা, মুদ্রাবাজারের অস্থিরতা ও অপারেটিং খরচ কোম্পানিগুলোর পারফরম্যান্সে স্পষ্ট প্রভাব ফেলেছে।
যেসব কোম্পানি নগদ প্রবাহ বৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছে, তাদের মধ্যে রয়েছে একমি ল্যাবরেটরিজ, যাদের প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ হয়েছে ৭ টাকা ৭ পয়সা, যা গত বছর ছিল ৬ টাকা ৪৪ পয়সা। একমি পেস্টিসাইডসের প্রবাহ ২ পয়সা হয়েছে, যা গত বছর ছিল ১ পয়সা। এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে ২ টাকা ২ পয়সায় উন্নীত হয়েছে। সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস ০ পয়সা থেকে উঠে ১ পয়সা দেখিয়েছে। জেএমআই হসপিটাল রিকুইজিটস গত বছরের ১৪ পয়সা থেকে বেড়ে ৫৩ পয়সায় দাঁড়িয়েছে।
খাতটির অন্যতম শক্তিশালী পারফরমার ম্যারিকো বাংলাদেশ—ছয় মাসে শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ দাঁড়িয়েছে ১১০ টাকা ৬৮ পয়সা, যা গত বছর ছিল মাত্র ২৬ টাকা ৩৬ পয়সা। নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রবাহ ২ টাকা থেকে বেড়ে ৫ টাকা ৮ পয়সায় উঠেছে। ওরিয়ন ইনফিউশনের প্রবাহ ২০ পয়সা থেকে বেড়ে ৫০ পয়সা হয়েছে। ফার্মা এইডসের প্রবাহ ৪৩ পয়সা থেকে লাফিয়ে ৮ টাকা ৮৭ পয়সায় উন্নীত হয়েছে। রেকিট বেনকিজারের নয় মাসের প্রবাহ ৬০ টাকা ৬৬ পয়সা থেকে বেড়ে ১৬১ টাকা ১৮ পয়সা হয়েছে, যা খাতের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃদ্ধির একটি। রেনাটা গত বছরের মাইনাস ৪ পয়সা ঘুরে এবার প্রথম প্রান্তিকে দেখিয়েছে ১২ টাকা ৬১ পয়সা। সালভো কেমিক্যাল ৮৫ পয়সা থেকে বেড়ে ১ টাকা ৫৫ পয়সায় এসেছে। সিলকো ফার্মাসিউটিক্যালস ২৪ পয়সা থেকে বেড়ে ২৭ পয়সায় উন্নীত হয়েছে। সিলভা ফার্মাসিউটিক্যালস ৭ পয়সা থেকে বেড়ে ১৫ পয়সা দেখিয়েছে। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস গত বছরের ৩ টাকা ৮৯ পয়সা থেকে বেড়ে ৭ টাকা ৫৫ পয়সা দেখিয়ে স্থিতিশীল অবস্থান ধরে রেখেছে।
অন্যদিকে, যেসব কোম্পানির নগদ প্রবাহ কমেছে, তাদের পারফরম্যান্সে বৈদেশিক মুদ্রার চাপ, কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি বা বিক্রি কমে যাওয়ার প্রভাব স্পষ্ট। অ্যাডভেন্ট ফার্মার প্রথম প্রান্তিকে ক্যাশ ফ্লো দাঁড়িয়েছে ১৪ পয়সা, যা গত বছর ছিল ১৯ পয়সা। বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস ২ টাকা ৯৬ পয়সা থেকে কমে ১ টাকা ৩৫ পয়সা দেখিয়েছে। ইবনে সিনার প্রবাহ ৯ টাকা ৭১ পয়সা থেকে নেমে এসেছে ৫ টাকা ৪৬ পয়সায়। জেএমআই সিরিঞ্জ বড় ধাক্কা খেয়ে গত বছরের ১ টাকা ৫ পয়সা থেকে নেমে এসেছে মাইনাস ২ টাকা ১৭ পয়সায়, যা খাতটির সবচেয়ে বড় পতন। কোহিনুর কেমিক্যাল ১০ টাকা ৪২ পয়সা থেকে কমে ৭ টাকা ৪৯ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। ওরিয়ন ফার্মা ১ টাকা ৮৫ পয়সা থেকে নেমে ৬৫ পয়সায় এসেছে। টেকনো ড্রাগস ২৩ পয়সা থেকে কমে ১৫ পয়সা এবং ওয়াটা কেমিক্যাল ২ টাকা ২৭ পয়সা থেকে নেমে ৮৩ পয়সায় এসেছে।
পুরো খাতের দৃষ্টিতে দেখা যায়, কোম্পানিভেদে পারফরম্যান্সের ব্যবধান আরও স্পষ্ট হচ্ছে। ডলার–টাকায় ওঠানামা আমদানিনির্ভর কোম্পানিগুলোর নগদ প্রবাহে চাপ বাড়িয়েছে। অন্যদিকে, যারা বিক্রি বৃদ্ধি, উৎপাদন দক্ষতা ও খরচ নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে, তারা শক্তিশালী নগদ প্রবাহ বজায় রাখতে পেরেছে। এ প্রান্তিকের তথ্য বলছে—নগদ প্রবাহ এখন এই শিল্পের আর্থিক স্বাস্থ্য যাচাইয়ের অন্যতম নির্ভরযোগ্য সূচক হয়ে উঠছে। ●
অকা/পুঁবা/ই/সকাল/১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 11 hours আগে

