অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
দেশের পুঁজি বাজারে বড় অঙ্কের বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে যাদের বিনিয়োগ পোর্টফোলিও ১ কোটি টাকা বা তার বেশি—তাদের সংখ্যা এক বছরের ব্যবধানে উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে ১০০ কোটি ও ৫০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগকারীর সংখ্যা। বিপরীতে, যেসব বিও (বিনিয়োগকারীর ও Beneficiary Owner হিসাব) ১ লাখ টাকার কম মূলধন নিয়ে চালু ছিল, সেগুলোর সংখ্যা এক বছরে প্রায় ৯ শতাংশ কমেছে। এই পরিবর্তন বিনিয়োগকারীর গঠন কাঠামোতে এক ধরনের পুনর্বিন্যাসের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ৭০টি বিও হিসাবে ৫০০ কোটি টাকা বা তার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে, যা আগের বছর ছিল ৬৮টি। ১০০ কোটি বা তার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে ৩৪৭টি বিও-তে, যা এক বছরে ২২টি বেড়েছে। ৫০ কোটি বা তার বেশি বিনিয়োগ আছে এমন হিসাব এখন ৭৩৩টি, গত বছর যা ছিল ৬৯৬টি।
মোট ১০ কোটি টাকা বা তার বেশি বিনিয়োগ আছে এমন বিও হিসাব ২,৮৯১টি, যা আগের বছর ছিল ২,৮৯৪টি—এই স্তরে খুব সামান্য পতন ঘটেছে। তবে ১ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে এমন বিও হিসাব বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩,৩১৬টিতে, যেখানে গত বছর এ সংখ্যা ছিল ১২,৯৯৩টি। অর্থাৎ, এক বছরে এ শ্রেণিতে প্রায় ৩২৩টি নতুন হিসাব যুক্ত হয়েছে।
অন্যদিকে, কোটি টাকার নিচে থাকা বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও ৫০ লাখ টাকা বা তার বেশি বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বেড়েছে। এই গোষ্ঠীতে বিও হিসাব বেড়ে হয়েছে ২৪,২২৫টি, যা আগের বছর ছিল ২২,৯০৭টি। আবার ১০ লাখ বা তার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে এমন হিসাব বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,০৪,৮৩৩টিতে, যেখানে আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ৯৮,৩৭১টি।
তবে যে অংশে পতন সবচেয়ে বেশি, তা হলো ১ লাখ টাকার কম বিনিয়োগকারীর গোষ্ঠী। এই অতি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর বিও হিসাব ২০২৪ সালের জুনে ছিল ৯,১৬,১৫৭টি, যা এক বছরে কমে ৮,৩১,৭৪৮টিতে দাঁড়িয়েছে। এক বছরে ৮৪,৪০৯টি ক্ষুদ্র হিসাব বন্ধ হয়েছে বা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে।
বিনিয়োগকারীর এই গঠন কাঠামোর পরিবর্তনের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, একদিকে যেখানে উচ্চ সুদহার ও মূল্যস্ফীতির কারণে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের অনেকে তাদের ক্ষুদ্র সঞ্চয় পুঁজি বাজারে ধরে রাখতে পারছেন না, সেখানে বড় বিনিয়োগকারীরা তুলনামূলক কম ঝুঁকিতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন। ফলে বাজারে উচ্চমূল্যের পোর্টফোলিও ক্রমশ প্রাধান্য পাচ্ছে।
তাছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে বাজার নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের নানাবিধ সংস্কার—যেমন ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানিগুলোর ওপর কড়াকড়ি, আইপিও প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, শেয়ার দর নিয়ন্ত্রণে ফ্লোর প্রাইস শিথিলকরণ, এবং নির্ভরযোগ্য কোম্পানি তালিকাভুক্তির উদ্যোগ—বড় ও পেশাদার বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।
তবে দীর্ঘমেয়াদে পুঁজি বাজারের স্বাস্থ্যকর প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে শুধু বড় বিনিয়োগকারী নয়, ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণও নিশ্চিত করতে হবে। কারণ তারল্য বাড়াতে, বাজারে গভীরতা আনতে এবং দৈনন্দিন লেনদেনে গতিশীলতা আনতে এই গোষ্ঠীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, পুঁজি বাজারকে টেকসই করতে হলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য নীতিগত সহায়তা, আর্থিক সাক্ষরতা বৃদ্ধি, এবং বাজারে প্রবেশের ব্যয় হ্রাস করার উদ্যোগ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। ●
অকা/পুঁবা/ই/সকাল/৩০ জুলাই, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 4 months আগে

