অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক হিসেবে চীনের স্থান দখল করে নিতে পারে বাংলাদেশ। ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে সরবরাহ চেইন বাংলাদেশের অনুকূলে থাকায় রফতানি আদেশ বেশি পাচ্ছে বাংলাদেশ। খবর নিকেই এশিয়া'র।
দেশের মোট রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে তৈরি পোশাক খাত (আরএমজি) থেকে। ২০২১ সালের প্রথম নয় মাসের তুলনায় গত বছরের একই সময়ে ইইউতে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি ৪২ শতাংশ বেড়ে ১৯.৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
ইইউ'র পরিসংখ্যান দপ্তর ইউরোস্ট্যাট-এর সর্বশেষ উপাত্ত অনুযায়ী, একই সময়ে ২২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে চীনের রফতানি বেড়েছে ২৫.৫ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)-এর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, 'চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সাম্প্রতিক বাণিজ্য-যুদ্ধের কারণে চীনের অনেক রফতানি আদেশ বাংলাদেশ পেয়েছে।' ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে উত্তেজনার কারণে পোশাক থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিক্স ও স্মার্টফোনের অনেক ব্র্যান্ড বর্তমানে চীনের বাইরে সরবরাহকারী খুঁজছে।
ইইউ'র যেসব ক্রেতা বাংলাদেশ থেকে পোশাক কেনে, তাদের তালিকায় রয়েছে ফ্যাশন চেইন এইচঅ্যান্ডএম, প্রিমার্ক, জারা, জি-স্টার র, এবং মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সার।
বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৪৫টির মতো উন্নয়নশীল দেশ শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধায় ইইউ'র বাজারে পোশাক রফতানি করতে পারে। অন্যদিকে চীনের ব্যবসায়ীদেরকে শুল্ক দিয়ে রফতানি করতে হয়।
ট্যারিফবিহীন রফতানি সুবিধার কারণে ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে পণ্য ক্রয়কে প্রাধান্য দেয়,' বলেন ট্যাড গ্রুপ নামক একটি পোশাক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশিকুর রহমান তুহিন।
'বাংলাদেশ মৌলিক পণ্য থেকে সরে গিয়ে হাই-এন্ড ও মূল্য সংযোজিত পোশাক পণ্য উৎপাদন করতে শুরু করেছে। এটি ইইউ'র বাজারে বাংলাদেশের রফতানি বাড়াতে সহায়তা করছে,' জানান বিজিএমইএ-এর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম।
তবে ভবিষ্যতে ইউরোপে পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়বে। ২০২৬ সাল থেকে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাদ পড়বে। এর ফলে ইউরোপের অনেক রফতানি সুবিধা হারাবে এটি।
বর্তমানে বাংলাদেশ ইইউ'র জিএসপি-প্লাস সুবিধা পাওয়ার জন্য আলোচনা চালাচ্ছে।
গত মাসে ঢাকা ভ্রমণের সময় ব্রিটেনের ব্র্যান্ড প্রিমার্ক-এর প্রধান নির্বাহী পল মার্চেন্ট বলেন, তার কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি পোশাক আমদানি করার পরিকল্পনা করছে।
দেশের পোশাক উৎপাদনকারীস এ খাতসংশ্লিষ্ট অন্যরাও শীঘ্রই ইউরোপে বাংলাদেশ শীর্ষ রফতানিকারক হয়ে ওঠার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।
'ইইউ'র বাজারে বাংলাদেশ চীনের কাছাকাছি। তাই আগামী চার থেকে পাঁচ বছরে আমরা শীর্ষস্থান দখল করতে পারি,' বলেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ. মনসুর।
তিনি আরও বলেন, 'বিশ্বব্যাপী চীনের আরএমজি বাজার ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। আমার মনে হয়, চীন এখন বৈদ্যুতিক গাড়ির মতো উচ্চমানের পণ্য উৎপাদনের প্রতি বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে, তাই পোশাকের বাজার ধরে রাখার এর কৌশলগত কোনো আগ্রহ নেই।'
অকা/তৈপোশি/সকাল, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 3 years আগে

