অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ২৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি। এরমধ্যে তৈরি পোশাক পণ্যের দাম ছিল ২৩ বিলিয়ন ডলার।
গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশকে রফতানি আয়ের নতুন রেকর্ড অর্জনে সহায়তা করেছে তৈরি পোশাক খাত। একইসঙ্গে, তা নভেম্বরে হওয়া রেকর্ডকেও ভেঙ্গেছে। আলোচ্য মাসে ৯ শতাংশের কিছু বেশি প্রবৃদ্ধি নিয়ে রফতানি হয়েছে ৫.৩৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, যা একক মাসের হিসাবে- এ যাবতকালের সর্বোচ্চ।
পোশাক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাঁচামালের বাড়তি মূল্য, আগের মাসগুলোর তুলনায় বাড়তি রফতানি আদেশ, উচ্চ মূল্যের পোশাক অপেক্ষাকৃত বেশি হারে রফতানি হওয়া, এবং চীনসহ প্রধান প্রতিযোগীদের তুলনায় বড় বাজারগুলো থেকে বেশি হারে রফতানি আদেশ পাওয়া ডিসেম্বরে রেকর্ড রফতানির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে। এর বাইরে প্রচলিত বাজার তথা ইউরোপ ও আমেরিকার বাইরে– নতুন বাজারগুলো থেকে বাড়তি অর্ডার আসাও সার্বিকভাবে রফতানি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।
এ্দিকে, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে প্রথমবারের মতো দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের ঘাটতি– আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬.৪১ শতাংশ কমে ১১.৭৯ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ১২ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার।
দেশের রফতানির পরিমাণ বৃদ্ধি ও আমদানি কমে আসায় বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন- বিজিএমইএ'র সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, "কাঁচামালের বাড়তি দামের কারণে- পণ্যের দাম এবং অপেক্ষাকৃত উচ্চ মূল্যের পোশাক রফতানি বেড়ে যাওয়ায় রফতানিতে এ বড় প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে।"
তিনি বলেন, 'আগে বাংলাদেশ একটি জ্যাকেট বানাতো হয়তো ২০ ডলারে, কিন্তু সম্প্রতি ৩০ থেকে ৪০ ডলার মূল্যের জ্যাকেটের অর্ডার পেয়েছে'।
তবে তিনি মনে করেন, আগামী জুন পর্যন্ত রফতানিতে এই প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা কম। এপ্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'ওই সময়ে আমাদের গ্রোথ এর চেয়ে টিকে থাকার চেষ্টা হবে মূল কাজ'।
বাংলাদেশের বৃহত্তম পোশাক তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের মধ্য অন্যতম– স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন, "কাঁচামালের বর্ধিত মূল্যের কারণে পোশাকের দর ৫ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়তি পাওয়া গেছে, যা ডিসেম্বরেও রফতানি হয়েছে। এছাড়া আমাদের উচ্চমুল্যের পোশাক সর্বোচ্চ রফতানি এখন বেড়েছে, আবার ইনফ্লেশনের কারণে সিএম (কাটিং অ্যান্ড মেকিং কস্ট) কিছুটা বেশি পাওয়া গেছে। এর বাইরে চীন থেকে সরে আসা অর্ডারের একটি অংশ বাংলাদেশ পেয়েছে, যা পোশাকের সর্বোচ্চ রফতানি বাড়াতে ভুমিকা রেখেছে।"
তিনি আরও বলেন, স্পোর্টওয়্যার, আউটওয়্যারসহ, নারীদের ড্রেস, স্যুটসহ বেশকিছু উচ্চমূল্যের পণ্য সর্বোচ্চ রফতানি বেড়েছে বাংলাদেশের, যা সর্বোচ্চ রফতানি মূল্য বাড়াতে ভুমিকা রেখেছে। আগামী দুই থেকে তিন মাস রপ্তানিতে এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদী রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)।
ইপিবির তথ্যমতে, গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশের মোট রফতানি বেড়েছে প্রায় ৯ শতাংশ, এতে ৮২ শতাংশ অবদান ছিল তৈরি পোশাক খাতের। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ২৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি। এরমধ্যে তৈরি পোশাক পণ্যের দাম ছিল ২৩ বিলিয়ন ডলার।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী সৃষ্টি হওয়া উচ্চ মূল্যস্ফীতি পোশাকের চাহিদা কমে, এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। এই প্রেক্ষিতে কিছুটা উল্লম্ফনের পর, সেপ্টেম্বরে আবারো নেতিবাচক রূপ নেয় রফতানির প্রবৃদ্ধি।
পোশাক ও বস্ত্র খাতের জন্য পাইপলাইনে যে পরিমাণ বিনিয়োগ রয়েছে তাতে অনেক রফতানিকারকই সামনের মাসগুলোতে প্রবৃদ্ধির বিষয়ে আশাবাদী; তবে উদ্বেগও রয়েছে তাদের।
ক্রোনি গ্রুপের চেয়ারপার্সন নীলা হোসনে আরা বলেন, "আমাদের কিছু বায়ার চীন থেকে সোর্সিং কমিয়ে এখানে বাড়িয়েছেন। আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এজন্য আমরা আমাদের ক্যাপাসিটিও বাড়াচ্ছি।"
অবশ্য আগামী জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত রফতানি কমতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কাঁচামালের দাম কমে যাওয়ায়- চলতি মাস থেকে পোশাকের দামও কমে যাবে। ফলে এই প্রবৃদ্ধি থাকবে না।
বাংলাদেশের রফতানির প্রায় ৮০ শতাংশই যায় ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে। অবশ্য ইউরোপ আমেরিকার বাইরে ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কোরিয়ার মতোন নতুন বাজারের দেশগুলোতেও বাংলাদেশের রফতানি প্রবৃদ্ধি ভালো বলে জানিয়েছেন ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএন আহসান। তিনি বলেন, "আগামী দুই তিন মাসেও রফতানির এমন প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছি।" তবে ব্যবসা চাঙ্গা হওয়ার এই সুফল পোশাক খাতে সবাই পায়নি, অনেকেই এখনও দুর্ভোগে আছে।
তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের কারো কারো ভালো অর্ডার থাকলেও– অপেক্ষাকৃত ছোট ও মাঝারি আকারের কোনো কোনো কারখানায় অর্ডার একেবারেই কম বলে জানা গেছে।
রাজধানীর মিরপুরের একটি মাঝারি আকারের পোশাক কারখানার মালিক নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, "অতীতে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর সময়ে প্রচুর অর্ডার থাকতো, বলা যায় দম ফেলার সময় পেতাম না। অথচ এবার তা নেই। ইউরোপের এক বায়ার অতীতে এ সময়ে আড়াই লাখ পিস পোশাকের অর্ডার দিত, এবার দিয়েছে মাত্র ৩০ হাজার পিসের"। #
অকা/তৈপোখা/ ০৩ জানুয়ারি, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 3 years আগে

