অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে পুঁজি বাজারে সূচকের উল্লম্ফন ঘটেছে। ৩১ জুলাই দেশের দুই পুঁজি বাজারেই সব সূচকের বড় ধরনের উন্নতি ঘটে। ব্যাংকিং খাতে ভর করেই সূচকের এ উল্লম্ফন। তবে এ সময় ঢাকা শেয়ার বাজারে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর শেয়ারের বেশির ভাগই দরপতনের শিকার হয়েছে। সূচকের বড় ধরনের উন্নতির ফলে বেড়েছে লেনদেনও। আট মাস পর আবার হাজার কোটি টাকার ঘরে পৌঁছেছে দেশের প্রধান পুঁজি বাজারটির লেনদেন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩১ জুলাই ৯১ দশমিক ২১ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়। পাঁচ হাজার ৩৬২ দশমিক ১৯ পয়েন্ট থেকে দিন শুরু করা সূচকটি ৩১ জুলাই দিনশেষে পৌঁছে যায় পাঁচ হাজার ৪৪৩ দশমিক ৪১ পয়েন্টে। গত বছরের ৯ অক্টোবরের পর আবার এ পর্যায়ে পৌঁছল ডিএসইর প্রধান সূচকটি। একই সময় ডিএসইর অপর দুই সূচক ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহর উন্নতি ঘটে যথাক্রমে ৪৮ দশমিক ৯৯ ও ১৬ দশমিক ২০ পয়েন্ট।
এদিকে ৩১ জুলাই দেশের দ্বিতীয় পুঁজি বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচকের ২৮১ পয়েন্ট উন্নতি ঘটে। বাজারটির অন্য দুই সূচক সিএসই-৩০ ও সিএসসিএক্স সূচকের উন্নতি রেকর্ড করা হয় যথাক্রমে ৩৭৩ দশমিক ৯৬ ও ১৮৩ দশমিক ১৪ পয়েন্ট।
দুই পুঁজি বাজারে সূচকের এই বড় ধরনের উন্নতিতে বড় অবদান ছিল ব্যাংকিং খাতের। ডিএসইর লেনদেন ও মূল্যবৃদ্ধি দু’দিকেই বড় ধরনের ভূমিকা ছিল এ খাতটির। দিনের বাজার আচরণ বিশ্লেষণে দেখা যায় লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির সাতটিই ছিল ব্যাংকিং খাতের কোম্পানি। একইভাবে মূল্যবৃদ্ধিতেও একই খাতের সাতটি কোম্পানি উঠে আসতে দেখা যায়। বাজারসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এখনো ব্যাংকিং খাতের মূল্য-আয় অনুপাত অন্য অনেক খাত থেকে ভালো অবস্থানে থাকায় বাজারে এ খাতের দিকে বড় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ রয়েছে। তা ছাড়া মূল্যস্তর অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় এবং বড় মূলধনী হওয়ার সুবাদে ব্যাংকিং খাতে শেয়ারের সরবরাহ বেশি হওয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশই এ খাত থেকে অপেক্ষাকৃত কম বিনিয়োগে দ্রুততম সময়ে বেশি মুনাফা তুলে নিতে পারেন।
এ দিকে পুঁজি বাজারে নেগেটিভ ইক্যুইটি বা আনরিয়েলাইজড লসের ওপর প্রভিশন সংরণের সুনির্দিষ্ট ও গ্রহণযোগ্য কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনসহ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) জমা দেয়ার সময় তিন মাস বাড়ানো হয়েছে। চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৯৬৫তম কমিশন সভায় এই সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বিএসইসির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ব্রোকার হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের নেগেটিভ ইক্যুইটির ওপর প্রভিশন সংরণের সুনির্দিষ্ট ও গ্রহণযোগ্য কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনসহ ৩০ জুনের মধ্যে কমিশনে জমা দেয়ার শর্তে স্টক ব্রোকার এবং মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজারদের গ্রাহকের মার্জিন অ্যাকাউন্টে আনরিয়েলাইজড লস বা সৃষ্ট নেগেটিভ ইক্যুইটির ওপর প্রভিশন সংরণের সময়সীমা বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
এই সময়সীমার মধ্যে শর্ত পরিপালনে অনেকে ব্যর্থ হওয়ায় এবং ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) অনুরোধের পরিপ্রেেিত কর্মপরিকল্পনা জমাদানের বিষয়ে ৯৬৫তম কমিশন সভায় সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বিএসইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মক্কেলের মার্জিন অ্যাকাউন্টে নেগেটিভ ইক্যুইটির বিপরীতে এবং স্টক ব্রোকারদের ডিলার অ্যাকাউন্টে ও মার্চেন্ট ব্যাংকারের নিজস্ব পোর্টফোলিওতে আনরিয়েলাইজড লসের বিপরীতে প্রভিশন সংরণের একটি সুনির্দিষ্ট ও গ্রহণযোগ্য কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনসহ কমিশনে জমা দেয়ার জন্য স্টক ব্রোকার এবং মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজারদের ৩০ সেপ্টেম্বর সময় দেয়া হয়েছে।
একই সাথে পূর্বে যারা বোর্ড অনুমোদন ব্যতীত কর্মপরিকল্পনা দাখিল করেছেন, সেসব বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পুনরায় বোর্ড অনুমোদনসহ কর্মপরিকল্পনা কমিশনে দাখিল করতে হবে।
কমিশন একই সভায় সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) আবেদনের পরিপ্রেেিত বার্ষিক বিও হিসাব মেইন্টেন্যান্স ফি হিসাব করার জন্য কাট-অফ ডেট আগামী ৩১ আগস্ট এবং এ সংক্রান্ত ভাউচার প্রস্তুতের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
৩১ জুলাই দেশের প্রধান পুঁজি বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে সিটি ব্যাংক। এদিন ৫১ কোটি ৩৩ লাখ টাকায় কোম্পানিটির এক কোটি ৯৯ লাখ শেয়ার হাতবদল হয়েছে।
৪০ কোটি ৪৩ লাখ টাকায় ৫৬ লাখ ১৬ হাজার শেয়ার বেচাকেনা করে ব্র্যাক ব্যাংক উঠে আসে লেনদেনের দ্বিতীয় স্থানে। লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় আরো ছিল বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, যমুনা ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ব্যাংক এশিয়া, উত্তরা ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক।
এ সময় দরবৃদ্ধির শীর্ষে ছিল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি। ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি ঘটে ব্যাংকিং খাতের কোম্পানিটির। ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে ছিল বীমা কোম্পানি সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স।
ডিএসইতে দরবৃদ্ধির শীর্ষ দশে থাকা অন্য কোম্পানিগুলো ছিল সাউথইস্ট ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, নর্দার্ন জুট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি এবং ওয়ান ব্যাংক।
এদিন লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দরপতনের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে মিডল্যান্ড ব্যাংক। কোম্পানিটির দরপতনের হার ছিল ৯ দশমিক ২১ শতাংশ। ৫ দশমিক ৪১ শতাংশ দর হারিয়ে এ তালিকার দ্বিতীয় কোম্পানি ছিল বস্ত্র খাতের রিজেন্ট টেক্সটাইলস। ডিএসইতে দরপতনের শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা কোম্পানিগুলো ছিল বাটা সু, পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, এনআরবি ব্যাংক, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, এক্সিম ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড এবং ফ্যামিলিটেক্স লিমিটেড। ●
অকা/পুঁবা/ফর/বিকাল/১ আগস্ট, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 4 months আগে

