অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
আবেদনের ছয় বছর পর চীনে আম রফতানির সুযোগ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের। আগামী গ্রীষ্ম মৌসুমেই দেশটিতে আম রফতানির দ্বার খুলতে পারে। ২৮ মার্চ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চীনে যেকোনো খাদ্যপণ্য রফতানি করার ক্ষেত্রে দেশটির জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে অব কাস্টম অব চায়না (জিএসিসি) থেকে নিবন্ধন নিতে হয়। জিএসিসি গত বছরের জুলাইয়ে আম রফতানির নিবন্ধন দিয়েছে। তবে কাঁঠাল ও পেয়ারা রফতনির অনুমোদন এখনো দেয়নি।
চীনে কাঁঠাল ও পেয়ারা রফতানির জন্য জিএসিসি থেকে নিবন্ধন নেওয়ার আলোচনা সম্প্রতি নতুন করে শুরু হয়েছে। আরও পণ্য অর্থাৎ পেয়ারা, আলু, সয়ামিল এবং সুগন্ধি চালও রফতানির তালিকায় আছে। এগুলোর বিষয়ে অবশ্য খুব অগ্রগতি নেই বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চীনে আমসহ কিছু কৃষিপণ্য রফতানির অনুমোদন চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল ২০১৯ সালে। চীন সরকার এমনিতেই এ ধরনের সিদ্ধান্ত দিতে অনেক সময় নেয়। এরই মধ্যে শুরু হয় কোভিড-১৯ মহামারির প্রকোপ। এ দুটি কারণে শুধু আমের ব্যাপারে প্রক্রিয়া শেষ হতেই সময় লেগে যায় ছয় বছরের বেশি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ২০ মার্চ এক ব্রিফিংয়ে বলেন, বাংলাদেশ থেকে আম, কাঁঠাল ও পেয়ারা আমদানি করবে চীন। বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন সম্প্রতি ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠকে এ আগ্রহের কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে আম, কাঁঠাল ও পেয়ারা আমদানি করার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা আগেই চীন সরকারকে অনুরোধ করেছিলেন। চীন এখন বাংলাদেশ থেকে এই তিন ধরনের ফল আমদানি করতে খুবই আগ্রহী। এর মধ্য দিয়ে চীনে পণ্য রফতানির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিসিসিআই) সাবেক সাধারণ সম্পাদক মামুন মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের আম-কাঁঠালের স্বাদ চীনাদের পছন্দের। আমরা আশা করছি আগামী মৌসুমে শুধু আম নয়, কাঁঠালও রফতানি করা যাবে চীনে। একবার রফতানি করা শুরু করলে বছর বছর এটা বাড়বে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের আশায় তখন বাণিজ্যিকভাবেও উৎপাদন বাড়বে।’
জানা গেছে, আম-কাঁঠাল আমদানি করার অংশ হিসেবে চীনের ব্যবসায়ীদের একটি দল গত বছর বাংলাদেশ ঘুরে গেছে। দুই সপ্তাহের মতো ছিল দলটি। রাজশাহী অঞ্চলে গিয়ে দলের সদস্যরা আম উৎপাদকদের দেখিয়ে গেছেন রফতানির জন্য কীভাবে প্যাকেজিং করতে হবে। চীনের অনুদানে দেশে আমের জন্য একটি পরীক্ষাগার (ল্যাব) হওয়ার কথা রয়েছে।
চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন গত বছরের সেপ্টেম্বরে পররাষ্ট্রসচিব জসীম উদ্দিনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এরপর পররাষ্ট্রসচিব বলেছিলেন, ‘চীনের বাজারে আম রফতানির সব প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে। দুই দেশের বন্ধুত্বের স্মারক হিসেবে আমি একসঙ্গে কয়েকটি পণ্যের প্রবেশাধিকার চীনের বাজারে চেয়েছিলাম। কিন্তু চীন একটা একটা করে পণ্য ওদের বাজারে ঢুকতে দেয়।’
জানতে চাইলে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘চীনের একটা দল বাংলাদেশ সফর করে যে ধারণা দিয়ে গেছে তাতে মনে হয়, বাংলাদেশি আম ও কাঁঠালের স্বাদ তাদের খুব প্রিয়। রফতানি হওয়ার তালিকায় থাকা বাকি পণ্যগুলোও রপ্তানির ব্যাপারে কাজ চলছে। দেখা যাক, আমরা খুব আশাবাদী।’
অন্য পণ্যগুলো রফতানির কী অবস্থা—জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, চীনের আমদানিকারকদের একটা পর্যবেক্ষণ হচ্ছে আলু উৎপাদনের খরচ বেশি পড়ে, ফলে দামও বেশি পড়ে। আলুর কিছু নমুনা নিয়ে গিয়েছিলেন সম্ভাব্য আমদানিকারকেরা। পরীক্ষা করে দেখে পরে তারা জানিয়েছেন, দাম ছাড়াও বাংলাদেশি আলুর গুণগত মান এখনো সহনীয় পর্যায়ে আসেনি।
আর সুগন্ধি চালের ব্যাপারে বাংলাদেশের নীতিগত সিদ্ধান্তকে দায়ী করেন চীনের ব্যবসায়ীরা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কখনো রফতানির অনুমোদন দয়, আবার কখনো হঠাৎ তা বন্ধ করে দেয়। চীনা চালের বাজার মূলত ভারত ও পাকিস্তানের দখলে রয়েছে। ●
অকা/বাণিজ্য/ফর/বিকাল/২৮ মার্চ, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 9 months আগে

