অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ডলারের দাম স্বাভাবিক রাখতে এবং বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে গত দেড় মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে প্রায় ১১৩ কোটি ডলার কিনেছে। মূলত রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি এবং প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) বৃদ্ধির ফলে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় এ উদ্যোগ নেওয়া হয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র জানিয়েছেন, বাজারে কোনো ধরনের সরাসরি হস্তক্ষেপ করা হয়নি। বরং অতিরিক্ত ডলারের যোগান কমিয়ে আনার মাধ্যমে বাজারের স্বাভাবিকতা বজায় রাখা হচ্ছে।
স্থিতিশীল ডলার বাজার
এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ডলার বাজারে অস্থিরতা কাটিয়ে স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে। বর্তমানে লেনদেন হচ্ছে প্রতি ডলার ১২১ থেকে ১২২ টাকার মধ্যে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপের মুখে গত মাসে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু করা হয়। তখন আশঙ্কা করা হচ্ছিল, ডলারের দামে বড় ধরনের ওঠানামা হতে পারে। তবে বাস্তবে বড় কোনো পরিবর্তন হয়নি, বরং সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা কমে দাম নেমে আসে। জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাজারে প্রতি ডলার ১২০ টাকারও নিচে লেনদেন হয়।
রফতানি ও রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধির প্রভাব
ডলার সরবরাহ বৃদ্ধির পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রাখছে রফতানি আয় ও প্রবাসী আয়। এর পাশাপাশি বিদেশি ঋণ প্রবাহও যুক্ত হওয়ায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুটা বাড়ছে। ফলে বিনিময় হারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক ১৩ জুলাই একদিনে ১৭ কোটি ডলার কিনে নেয়। ৪ সেপ্টেম্বর কেনা হয় আরও ১৩.২ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত কেনা হয়েছে প্রায় ১১৩ কোটি ডলার।
আয়-ব্যয়ের চিত্র
চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসেই দেশে রফতানি ও রেমিট্যান্স মিলিয়ে এসেছে সাড়ে ১৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি। একই সময়ে আমদানি ব্যয় ও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে খরচ হয়েছে সাড়ে ১০ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। ফলে একটি বড় অঙ্ক উদ্বৃত্ত থেকে যায়। এই বাড়তি ডলার বাজার থেকে টেনে নিতে বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি ক্রয় করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ব্যাংকারদের দৃষ্টিভঙ্গি
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেছেন,
“এটা কোনো ধরনের বাজার হস্তক্ষেপ নয়। বাণিজ্যিক ব্যাংকে ডলারের সরবরাহ বেড়ে গেলে তারা তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিক্রি করতে চায়। আমরা সেখান থেকেই অতিরিক্ত ডলার কিনছি, যেন বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকে।”
অন্যদিকে, ব্যাংকাররা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই উদ্যোগ ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাদের মতে, ব্যাংকগুলো ডলার বিক্রির সুযোগ পাচ্ছে, যা না হলে রেমিট্যান্স সংগ্রহে অনাগ্রহ দেখা দিতে পারত।
রেমিট্যান্স প্রবাহের রেকর্ড
উল্লেখ্য, গত অর্থবছরে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২৬ শতাংশ বেশি। রেমিট্যান্স প্রবাহের এই ধারা এবং রফতানি আয়ের উচ্চ প্রবৃদ্ধি মিলেই বর্তমানে দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে সরবরাহ বাড়িয়েছে, আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সময়োপযোগী পদক্ষেপে স্থিতিশীলতাও বজায় রয়েছে। ●
অকা/ব্যাংখা/ই/সকাল/১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 2 days আগে