অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য মার্জিন ঋণ প্রদানের নীতিমালায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মার্জিন) বিধিমালা, ২০২৫’-এর খসড়ায় প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) অনুষ্ঠিত বিএসইসির কমিশন সভায় এ খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। একই সভায় ‘মার্জিন (সংশোধিত) রুলস, ২০২৫’-এর খসড়াও গৃহীত হয়েছে, যার ফলে ১৯৯৯ সালের বিদ্যমান মার্জিন রুলস কার্যত বাতিল হবে। সভা শেষে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
নতুন বিধিমালা অনুযায়ী মার্জিন ঋণ সুবিধা কেবলমাত্র ‘এ’ ক্যাটাগরির সাধারণ শেয়ার ক্রয়ের জন্য ব্যবহার করা যাবে। মিউচুয়াল ফান্ড, বন্ড, ডিবেঞ্চার বা অন্য কোনো প্রকার সিকিউরিটিজে এই ঋণ ব্যবহার করা যাবে না। এর উদ্দেশ্য হলো ঝুঁকিপূর্ণ ও অনুমানভিত্তিক বিনিয়োগ সীমিত করে বাজারে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। বিএসইসির মুখপাত্র আবুল কালাম জানান, খসড়াটি এখনো চূড়ান্ত নয়। জনমত যাচাইয়ের জন্য শিগগিরই এটি কমিশনের ওয়েবসাইট ও জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ করা হবে। জনসাধারণ ও বাজারসংশ্লিষ্ট পক্ষদের মতামত গ্রহণের পরই চূড়ান্ত বিধিমালা প্রকাশ করা হবে।
বাংলাদেশে মার্জিন ঋণ নীতিমালা প্রথম প্রণীত হয় ১৯৯৯ সালে। ২০০৯-২০১০ সালের বুল মার্কেটে মার্জিন ঋণ অতিরিক্ত মাত্রায় প্রদান করা হয়েছিল, যা শেয়ারমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পরবর্তীতে বাজার ধসের সময় বহু বিনিয়োগকারী বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েন। ২০১১ সালের পর নীতিমালায় কঠোরতা আনা হয় এবং অনুমোদিত সিকিউরিটিজের তালিকা সীমিত করা হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান অনুমোদিত সীমার বাইরে মার্জিন ঋণ দেওয়ার অভিযোগে জরিমানা গুনেছে, যা নীতিমালা হালনাগাদের প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট করেছে।
আন্তর্জাতিকভাবে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে মার্জিন ঋণ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (SEC) ও ফিনরা (FINRA) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, যেখানে সাধারণত মার্জিন ক্রয়ের জন্য বিনিয়োগকারীর কমপক্ষে ৫০ শতাংশ নিজস্ব মূলধন থাকা বাধ্যতামূলক। ভারতে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া (SEBI) অনুমোদিত সিকিউরিটিজ তালিকার বাইরে মার্জিন ঋণ দেওয়া নিষিদ্ধ। সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ে উচ্চ ঝুঁকির শেয়ার, পেনি স্টক বা অল্প লিকুইড শেয়ারে মার্জিন ঋণ অনুমোদন করা হয় না। অধিকাংশ দেশেই মার্জিন ঋণ সীমিত ও নিয়ন্ত্রিত থাকে, যাতে অতিরিক্ত লিভারেজের কারণে বাজার ধসের ঝুঁকি কমানো যায়।
নতুন বিধিমালা কার্যকর হলে বাজারে অস্থিতিশীলতা ও কৃত্রিম শেয়ারমূল্য বৃদ্ধির ঝুঁকি কমতে পারে। বিনিয়োগকারীরা তুলনামূলক নিরাপদ ও প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির শেয়ারে মনোযোগ দেবেন এবং ব্রোকারেজ হাউসগুলোর ঋণ বিতরণে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়বে। তবে অনেক বিনিয়োগকারী, বিশেষত স্বল্প মূলধনের ট্রেডার, বিকল্প বিনিয়োগ চ্যানেলের অভাবে অসুবিধায় পড়তে পারেন। একই সঙ্গে মার্জিন নির্ভর স্বল্পমেয়াদি ট্রেডিং কার্যক্রম কমে গিয়ে বাজারের লেনদেনের পরিমাণে কিছুটা প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ●
অকা/পুঁবা/ই/সকাল/১৩ আগস্ট, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 4 months আগে

