অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
বিশ্বের সর্ববৃহৎ হালাল পণ্য প্রদর্শনী মালয়েশিয়া ইন্টারন্যাশনাল হালাল শোকেস (মিহাস) ২০২৫-এ অংশ নিয়ে বাংলাদেশের কসমেটিকস ও স্কিনকেয়ার শিল্প এক অভূতপূর্ব সাফল্যের সাক্ষর রেখেছে। এ প্রদর্শনী বাংলাদেশের হালাল পণ্য, বিশেষ করে সৌন্দর্য ও ব্যক্তিগত যত্ন সামগ্রীর বিশ্ববাজারে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।
ঢাকায় প্রাপ্ত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এবারের প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণকারী কোম্পানিগুলোর প্রতি ২১টি দেশের ১১৮টিরও বেশি আন্তর্জাতিক ক্রেতা ও রিটেইলার গভীর আগ্রহ দেখিয়েছেন। এ আয়োজন থেকে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় ২৫ লাখ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ সম্ভাব্য রপ্তানি অর্ডার অর্জন করেছে, যা দেশীয় কসমেটিকস শিল্পের জন্য এক নতুন মাইলফলক।
বাংলাদেশ থেকে এবারে ১২টি বুথ অংশ নেয়, যার দুটি ছিল বাংলাদেশ হাইকমিশনের তত্ত্বাবধানে। এসব বুথে প্রদর্শিত হয় খাদ্য, কসমেটিকস, হস্তশিল্প, সিরামিক, পাটজাত পণ্য ও পর্যটন-সম্পর্কিত সামগ্রী। তবে সবচেয়ে বেশি সাড়া ফেলেছে হালাল সার্টিফায়েড কসমেটিকস, স্কিনকেয়ার ও পার্সোনাল কেয়ার পণ্য, যেগুলো ক্রেতা ও রিটেইলারদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল।
যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, চীন, অস্ট্রেলিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের ক্রেতারা বাংলাদেশের পণ্যের গুণগত মান, উপস্থাপনা এবং উদ্ভাবনী প্যাকেজিং দেখে গভীর সন্তোষ প্রকাশ করেন। প্রদর্শনীর সময় একাধিক দেশি কোম্পানি সরাসরি রপ্তানি অর্ডার পেয়েছে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে প্রাইভেট লেবেল উৎপাদন ও প্যাকেজিং সহযোগিতায়ও প্রাথমিক সমঝোতা সম্পন্ন হয়েছে, যা বাংলাদেশের কসমেটিকস শিল্পকে আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খলে যুক্ত করার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।
মালয়েশিয়ার জাতীয় ঐক্য মন্ত্রণালয়ের সচিব জেনারেল দাতো’ হাসলিনা বিনতে আবদুল হামিদ বাংলাদেশের পণ্যের মান ও উপস্থাপনা দেখে গভীর প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে তৈরি হালাল পণ্যের মান এখন আন্তর্জাতিক মানের সমতুল্য, এবং এটি বৈশ্বিক বাজারে সফল প্রতিযোগিতা করার যোগ্যতা অর্জন করেছে।”
এ প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মোছাম্মৎ শাহানারা মনিকা ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-এর মহাপরিচালক বেবি রানী কর্মকার। তারা বাংলাদেশি স্টলসমূহ পরিদর্শন করে পণ্যের মান, প্যাকেজিং ও বিপণন উপস্থাপনা দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রিমার্ক ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ইউনিটের ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রাশেদুল ইসলাম বলেন, “রপ্তানির এই নতুন দিগন্ত শুধু আমাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য নয়, বরং বাংলাদেশের জন্য এক গর্বের অর্জন।”
বিশ্বের ৮০টি দেশের ১ হাজার ১৯টি কোম্পানি এবং ২ হাজার ৩৮০টিরও বেশি স্টল নিয়ে অনুষ্ঠিত এবারের মেলায় প্রায় ৪৫ হাজার দর্শনার্থী অংশ নেন। প্রদর্শনীর পাশাপাশি আয়োজন করা হয় ইনভেস্টমেন্ট ও পারচেজিং মিশন, বিজনেস সেমিনার, অ্যাওয়ার্ড শো ও নলেজ হাব, যা অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বৈশ্বিক বিনিয়োগ ও বাজার সম্প্রসারণের সুযোগ করে দেয়।
মিহাস ২০২৫-এ বাংলাদেশের উপস্থিতি শুধু পণ্য প্রদর্শনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না—এটি বাংলাদেশের হালাল শিল্পের সক্ষমতা, উদ্ভাবনী শক্তি এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অবস্থান শক্তিশালী করার এক উজ্জ্বল নিদর্শন হয়ে উঠেছে। ●
অকা/প্র/ই/সকাল/৬ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 1 week আগে