অর্থকাগজ প্রতিবেদন 

দেশের অর্থনীতির শ্লথ গতি, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের সীমিত সুযোগ এবং ঋণের কম চাহিদার প্রেক্ষাপটে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) শেয়ার বাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাস শেষে একক ভিত্তিতে ব্যাংকগুলোর শেয়ার বাজার এক্সপোজার দাঁড়িয়েছে তাদের মোট মূলধনের ১৮.১৫ শতাংশে, যা ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ছিল ১৫.২৮ শতাংশ।

একই সময়ে, ব্যাংক ও তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে সমন্বিত এক্সপোজারও ২৩.২৩ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২৭.১৫ শতাংশে পৌঁছেছে। এটি এক বছরের ব্যবধানে একটি বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি, যা বাজারে নতুন গতি সঞ্চার করেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

মার্চে প্রধান শেয়ার সূচক ডিএসইএক্স ছিল ৫,২১৯.১৬ পয়েন্ট, যা ১১ সেপ্টেম্বর বেড়ে দাঁড়ায় ৫,৫২৩.৭৮ পয়েন্টে। বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি বাজারে আস্থা ফেরাতে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। ব্যাংকগুলো যখন শেয়ার বাজার তুলনামূলক নিম্নমুখী ছিল তখন কৌশলগতভাবে বিনিয়োগ বাড়ায়, যার ফলে মূলধনী মুনাফা ও ডিভিডেন্ড আয়ের নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, “ব্যাংকগুলোর অংশগ্রহণ শেয়ার বাজারকে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল করতে পারে। তবে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।”

ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো একক ভিত্তিতে তাদের মূলধনের ২৫ শতাংশ এবং সমন্বিতভাবে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে পারে। বর্তমানে ব্যাংকগুলোর এক্সপোজার এই সীমার অনেক নিচে রয়েছে, যা তাদের বিনিয়োগকে তুলনামূলকভাবে নিরাপদ রেখেছে।

২০২৪ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ব্যাংকগুলোর অবদান বেড়ে বাজার মূলধনের ১৮.৭ শতাংশে দাঁড়ায়, যা আগের বছর ছিল ১৫.১ শতাংশ। বর্তমানে ৩৬টি ব্যাংক এবং তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সরাসরি শেয়ার বাজারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।

২০০৯ সালের পর ব্যাংকগুলোর অতি মাত্রায় শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ এবং আইনসীমা লঙ্ঘনের কারণে ২০১০-১১ সালে বড় ধরনের ধস নেমেছিল। সে সময় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো আইনানুগ সীমার মধ্যেই ধাপে ধাপে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। এ কারণে বাজার বিশেষজ্ঞরা এবারকে তুলনামূলক ইতিবাচক প্রবণতা হিসেবে দেখছেন।

অর্থনীতির শ্লথ প্রবৃদ্ধি, নতুন শিল্পে বিনিয়োগের সীমিত সুযোগ এবং ঋণের কম চাহিদা ব্যাংকগুলোর জন্য অতিরিক্ত তারল্যের সৃষ্টি করেছে। ফলে ব্যাংকগুলো বিকল্প হিসেবে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। বিশ্লেষকরা এটিকে নেতিবাচক না ভেবে ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখছেন, কারণ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ বাড়লে বাজারে স্থিতিশীলতা ও দীর্ঘমেয়াদি আস্থা তৈরি হয়।

শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ হলেও ব্যাংকের মতো বড় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ বাজারকে দীর্ঘমেয়াদে শক্তিশালী করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি ব্যাংকগুলো স্বল্পমেয়াদি মুনাফার পরিবর্তে টেকসই বিনিয়োগ কৌশল গ্রহণ করে, তবে এটি কেবল ব্যাংকগুলোর জন্য নয়, বরং দেশের সামগ্রিক আর্থিক খাতের জন্যও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

তাদের মতে, সঠিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ব্যাংকগুলো লাভজনকতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা এবং বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারবে। এর ফলে একদিকে যেমন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে, অন্যদিকে দেশের অর্থনীতিও দীর্ঘমেয়াদে উপকৃত হবে।
অকা/পুঁবা/ই/সকাল/১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ

সর্বশেষ হালনাগাদ 4 days আগে

Leave A Reply

Exit mobile version