অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
তিন দিনের টানা সংশোধন শেষ করে ফের ইতিবাচক ধারায় ফিরতে শুরু করেছে দেশের পুঁজি বাজার। ৩০ জুলাই দেশের দুই পুঁজি বাজারেই ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে বাজার সূচক। এ সময় বেড়েছে লেনদেনও। লেনদেনের শুরুতে আগের দিনগুলোর বিক্রয়চাপের কিছুটা প্রভাব থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে তা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয় দুই পুঁজি বাজার। দুপুর ১২টা থেকে কোনো ধরনের বিক্রয়চাপ ছাড়া সাবলীলভাবে এগিয়ে যায় লেনদেন, যা দিনশেষে সূচকের বড় উন্নতি ঘটায়।
পুঁজি বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, স্বাভাবিক পুঁজি বাজার আচরণে এমনটিই হওয়া উচিত। বাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা যেমন থাকবে, তেমনি যথানিয়মে সংশোধনও ঘটতে হবে। এভাবেই বাজার টেকসই হয়ে উঠবে। দিনের বাজার আচরণ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ডিএসইর সাবেক একজন পরিচালক বলেন, গত কিছু দিন ব্যাংকিং খাতে বেশ মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। কিন্তু ৩০ জুলাই এ খাতের বেশির ভাগ কোম্পানিই দরপতনের শিকার হয়েছে। অন্য দিকে আগের দিন দরপতনের শিকার বীমা খাতে মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে ৩০ জুলাই। তা ছাড়া গত তিন দিন যেসব কোম্পানি দরপতনের শিকার ছিল এদের বেশির ভাগই ৩০ জুলাই মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় জায়গা করে নেয়।
প্রধান পুঁজি বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩০ জুলাই ৫৩ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়। ৫ হাজার ২৯৮ দশমিক ৪৬ পয়েন্ট থেকে দিন শুরু করা সূচকটি ৩০ জুলাই দিনশেষে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৩৫২ দশমিক ১৯ পয়েন্টে। একই সময় বাজারটির অপর দুই সূচক ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহর উন্নতি ঘটে যথাক্রমে ২১ দশমিক ২২ ও ৭ দশমিক ০৫ পয়েন্ট। দেশের দ্বিতীয় পুঁজি বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই ৩০ জুলাই ৬১ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট উন্নতি ধরে রাখে। এখানে সিএসই-৩০ ও সিএসসিএক্স সূচকের উন্নতি ঘটে যথাক্রমে ৭৭ দশমিক ৪২ ও ৩৯ দশমিক ৭২ পয়েন্ট।
সূচকের পাশাপাশি ৩০ জুলাই ঢাকা শেয়ার বাজারে লেনদেনেরও কিছুটা উন্নতি ঘটে। এ দিন পুঁজি বাজারটি ৭৪৩ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে, যা আগের দিন অপেক্ষা ২৬ কোটি টাকা বেশি। ২৯ জুলাই ডিএসইর লেনদেন ছিল ৭১৭ কোটি টাকা। তবে এ দিন লেনদেন কমেছে চট্টগ্রাম শেয়ার বাজারে। ৩০ জুলাই বাজারটির মোট লেনদেন ছিল ২৩ কোটি টাকা, যা আগের দিন অপেক্ষা ছয় কোটি টাকা কম। আগের দিন বাজারটির লেনদেন ছিল ২৯ কোটি টাকা।
এ দিকে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের প্রতিষ্ঠান মতিন স্পিনিং মিলস লিমিটেডের জমি, কারখানা ভবন, গোডাউন এবং অন্যান্য অবকাঠামোর পুনর্মূল্যায়নের ফলে কোম্পানিটির সম্পদের মূল্য প্রায় ১৩২ কোটি টাকা বেড়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা গেছে, পূনর্মূল্যায়নের আগে এসব সম্পদের হিসাব অনুযায়ী মূল্য ছিল ২৪৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। কিন্তু বর্তমান বাজারদরের ভিত্তিতে সম্পদের নতুন মূল্য দাঁড়িয়েছে ৩৭৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এতে কোম্পানিটির মোট সম্পদ বেড়েছে ১৩১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
এই পুনর্মূল্যায়নের কাজ করেছে হাওলাদার মারিয়া অ্যান্ড কোম্পানি, যেখানে নিরীক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ফার্মের পার্টনার মোহাম্মদ গোলাম সারোয়ার। সম্পদ পুনর্মূল্যায়নের এ ধরনের উদ্যোগ সাধারণত কোম্পানির প্রকৃত বাজারমূল্য প্রতিফলনের পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের কাছে কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি আরো সুসংহতভাবে উপস্থাপন করে। তবে এই মূল্যায়ন সরাসরি আয় বা লভ্যাংশে প্রভাব ফেলে না, বরং কোম্পানির নিট সম্পদ ও হিসাব-নিকাশে পরিবর্তন আনতে পারে।
৩০ জুলাই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে যমুনা ব্যাংক। ৩৫ কোটি ১৪ লাখ চার হাজার টাকায় কোম্পানিটির এক কোটি ৭১ লাখ ৭৬ হাজার শেয়ার হাতবদল হয়েছে এ দিন। ৩৪ কোটি ৮৬ লাখ ৫০ হাজার টাকায় এক কোটি ৩৮ লাখ ৯৬ হাজার শেয়ার বেচাকেনা করে লেনদেনের দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে একই খাতের সিটি ব্যাংক। ৩৪ কোটি ৪২ লাখ ৬৩ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন করে তালিকার তৃতীয় স্থান দখলে রাখে ব্র্যাক ব্যাংক। ডিএসইর লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে আরো ছিলÑ স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা, ঢাকা ব্যাংক, ইস্টার্ন হাউজিং, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ও মিডল্যান্ড ব্যাংক।
এ দিন লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৯৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৫৩টির দর বেড়েছে। দর বৃদ্ধির শীর্ষে ছিল বস্ত্র খাতের রহিম টেক্সটাইল মিলস পিএলসি। ৩০ জুলাই ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি ঘটে কোম্পানিটির। ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি পেয়ে এ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে রসায়ন খাতের কোম্পানি স্যালভো কেমিক্যালস। ডিএসইর মূল্যবৃদ্ধিতে শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকায় আরো ছিল যথাক্রমে সাউথইস্ট ব্যাংক, রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স, তমিজ উদ্দিন টেক্সটাইলস, সিম টেক্সটাইলস, দেশ গার্মেন্ট, ড্রাগন সোয়েটার অ্যান্ড স্পিনিংং মিলস, প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড।
৩০ জুলাই ডিএসইর লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৯৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৭টির দর কমেছে। আর ৮ দশমিক ৮২ শতাংশ দর হারিয়ে দরপতনের শীর্ষে উঠে এসেছে মিডল্যান্ড ব্যাংক। ৮ দশমিক ৮১ শতাংশ দর হারিয়ে এ তালিকার দ্বিতীয় স্থানে জায়গা করে নেয় এসইএমএল লেকচার ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট ফান্ড। ৮ দশমিক ১১ শতাংশ দরপতন ঘটলে এ তালিকায় তৃতীয় স্থানে চলে আসে ফারইস্ট ফাইন্যান্স ও ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।
ডিএসইর দরপতনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকায় আরো ছিল যথাক্রমে এনআরবি ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানি, পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স, রতনপুর স্টিলস ও এল আর গ্লোবাল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড। ●
অকা/পুঁবা/ফর/বিকাল/৩১ জুলাই, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 4 months আগে

