অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় শিল্প চামড়া খাত। বৈশ্বিক বাজারেও চামড়াজাত পণ্যের বেশ বড় চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এই খাতের একটি বড় সমস্যা হলো, দেশের প্রক্রিয়াজাত চামড়ার আন্তর্জাতিক মান না থাকা। কিন্তু আন্তর্জাতিক লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ না থাকা, ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা, কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারের (সিইটিপি) ত্রুটি ও পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ব্যবস্থায় ঘাটতি- এসব সমস্যার কারণে বাংলাদেশের চামড়াশিল্প পিছিয়ে পড়ছে বলে মনে করেন এই খাতের উদ্যোক্তারা।

দেশে নবমবারের মতো আয়োজিত ‘বাংলাদেশ লেদার অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপো’ শীর্ষক প্রদর্শনীতে উদ্যোক্তারা এ কথাগুলো বলেন। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ), লেদার ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড টেকনোলজিস্ট সোসাইটি বাংলাদেশ (এলইটিএসইবি) ও লিমরা এক্সিবিশনস যৌথভাবে রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় প্রদর্শনীটির আয়োজন করেছে। এতে স্বাগতিক বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের মোট ১৩০টির বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে চামড়াজাত পণ্য, চামড়ার জুতা, খেলার জুতা, ব্যাকপ্যাক ও বিভিন্ন কাঁচামাল উৎপাদক। সেই সঙ্গে রয়েছে চামড়াশিল্পে ব্যবহৃত স্কাইবিং, স্ট্যাম্পিং, প্রিন্টিং, লেমিনেশন, সুইং, ফিউজিং, কনভেয়ার, লাস্টিং ও ফিনিশিং মেশিন। এ ছাড়া চামড়াশিল্পে ব্যবহৃত আঠা, সিলিকা জেলসহ নানা ধরনের চামড়াজাত পণ্যও প্রদর্শিত হচ্ছে।

২৪ জুলাই শুরু হওয়া এ প্রদর্শনী ২৬ জুলাই প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত।

প্রদর্শনীতে দেশীয় প্রতিষ্ঠান রিফ লেদার লিমিটেডের পরিচালক মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘দেশে চামড়ার অভাব নেই। যদি আমাদের এলডব্লিউজি সনদ থাকত, তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারে আরও বড় পরিসরে রফতানি করা যেত।’ তিনি জানান, এ বছর গরুর লাম্পি রোগের কারণে প্রায় ৩০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়েছে। চামড়া কাটাছেঁড়ায় ত্রুটির কারণে নষ্ট হয়েছে আরও ১০ থেকে ১৫ শতাংশ চামড়া।

এ বি এস ট্যানারির এমডি ইমাম হোসেন বলেন, ‘আমরা এখন হয়তো ৪০ সেন্টে চামড়া বিক্রি করি, কিন্তু সার্টিফিকেশন পেলে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের কাছে ৩-৪ ডলারেও বিক্রি করা সম্ভব। সিইটিপি ও ট্যানারির কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিক উপায়ে না হলে আমাদের রফতানি বাড়ানো কঠিন হয়ে যাবে।’

প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান ছিলেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। তিনি বলেন, ‘চামড়া শিল্পনগরের আধুনিকায়ন, রফতানি প্রণোদনা, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ও গবেষণায় বিনিয়োগ এই খাতকে টেকসই উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে আমাদের চামড়া ও পাদুকা খাতকে বিশ্বমঞ্চে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য পরিবেশবান্ধব ট্যানারি ব্যবস্থা, আধুনিক যন্ত্রাংশ ও প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে।’

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক। তাদের সঙ্গে আমাদের সরকারের ভালোভাবে যোগাযোগ করতে হবে। আমাদের শুল্ক যেন প্রতিযোগী দেশ ভারত, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার চেয়ে বেশি না হয়। এটা নিশ্চিত করা গেলে আমাদের দেশের চামড়া খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীরাও এগিয়ে আসবেন। ●

অকা/শিবা/ফর/সকাল/২৫ জুলাই, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ

সর্বশেষ হালনাগাদ 3 months আগে

Leave A Reply

Exit mobile version