অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
চার কর্মদিবস টানা পতনের পর অবশেষে উন্নতি ঘটেছে পুঁজি বাজার সূচকের। ২৩ সেপ্টেম্বর দেশের দুই পুঁজি বাজারের মধ্যে ঢাকা বাজার সূচকের কিছুটা উন্নতি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম শেয়ার বাজারে সূচকের অবনতি ২৩ সেপ্টেম্বরেও অব্যাহত ছিল। ঢাকায় লেনদেনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সূচকের মাত্রাতিরিক্ত ওঠানামার মধ্য দিয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়। তবে উভয় বাজারেই কমেছে লেনদেন।
২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের উন্নতিতে লেনদেন শুরু হলেও তা টিকে থাকে কয়েক মিনিট মাত্র। এর পরই বিক্রয়চাপের কবলে পড়ে অস্থির আচরণ শুরু হয় ডিএসই সূচকের। বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রতি আধঘণ্টার ব্যবধানে সূচকের উত্থান পতনের মধ্য দিয়েই লেনদেন আগাচ্ছিল। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের সিদ্ধান্ত নেয়াও ছিল বেশ কঠিন, যা দিনশেষে বাজারটির লেনদেনের চিত্রে উঠে আসে। তবে লেনদেন শেষ হওয়ার আগমুহূর্তে সূচক ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে এবং লেনদেন শেষে সূচকের একটি অংশ টিকে যায়।
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৩ সেপ্টেম্বর ১০ দশমিক ৩২ পয়েন্ট উন্নতি ধরে রাখতে সক্ষম হয়। সকালে ৫ হাজার ৩৩৭ দশমিক ১৪ পয়েন্ট থেকে লেনদেন শুরু করা সূচকটি দিনশেষে পৌঁছে যায় ৫ হাজার ৩৪৭ দশমিক ৪৬ পয়েন্টে। এ সময় বাজারটির দুই বিশেষায়িত সূচক ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহর উন্নতি ঘটে যথাক্রমে ০ দশমিক ৬৭ ও ১ দশমিক ৮১ পয়েন্ট। তবে একই সময় দেশের দ্বিতীয় পুঁজি বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে সব সূচকেরই অবনতি ঘটে। এখানে প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৫৩ দশমিক ০২ পয়েন্ট অবনতির শিকার হয়। দুই বিশেষায়িত সূচক সিএসই-৩০ ও সিএসসিএক্স হারায় যথাক্রমে ২৬ দশমিক ৭৪ ও ৩০ দশমিক ০৪ পয়েন্ট।
সূচকের উন্নতি ঘটলেও ২৩ সেপ্টেম্বর লেনদেনের অবনতি ঘটে ঢাকা শেয়ার বাজারে। ডিএসই গতকাল ৪৬৭ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে যা আগের দিন অপেক্ষা ৭৭ কোটি টাকা কম। ২২ সেপ্টেম্বর ডিএসইর লেনদেন ছিল ৫৪৪ কোটি টাকা। লেনদেন কম হয় চট্টগ্রাম পুঁজি বাজারও। আগের দিন ২০ কোটি টাকার লেনদেন করা বাজারটিতে ২৩ সেপ্টেম্বর হয় ১২ কোটি টাকা।
এ দিকে প্রথমবারের মতো পুঁজি বাজারে তালিকাভুক্ত এবং নিয়মিত লেনদেন হওয়া ৩০টি কোম্পানির তালিকা প্রকাশ করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ যেগুলোর উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এদের মধ্যে বেসরকারি কোম্পানি যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানও। কিন্তু বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে এসব কোম্পানি নিয়ে বাজারে বিভিন্ন সময় কারসাজির সুযোগ নিচ্ছিল এক শ্রেণীর বিনিয়োগকারীরা। বাজারের কারসাজি ও গুজব ঠেকাতে এই যুগান্তকারী পদপে নিয়েছে ডিএসই। এই প্রতিষ্ঠানগুলো শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে মূলধন সংগ্রহ করলেও বর্তমানে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ। ডিএসইর একটি নির্ভরযোগ্য এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। বেসরকারি কোম্পানির পাশাপাশি এই তালিকায় দু'টি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিও রয়েছে।
ডিএসই সূত্রে জানা যায়, এ উদ্যোগটির প্রধান ল্য হলো বিনিয়োগকারীদের সচেতন করা। এসব বন্ধ কোম্পানি নিয়ে নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে শেয়ারের দাম বাড়ানো বা কমানোর মতো অনৈতিক কাজে লিপ্ত রয়েছে একটি গ্রুপ। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা তির মুখে পড়েন। ডিএসই কর্তৃপক্ষ মনে করে এই তালিকার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিগুলোর প্রকৃত অবস্থা জানতে পারবেন এবং ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ থেকে নিজেদের রা করতে পারবেন।
এ তালিকার নতুন সংযোজন হলো হামিদ ফ্যাব্রিক্স, যারা ২২ সেপ্টেম্বর থেকে তাদের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটি জানিয়েছে, দুই হিসাব বছর ধরে অপর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহের পাওয়ায় তাদের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সিএনজি ও এলএনজি ব্যবহার করেও কোনো লাভ হয়নি। তাই লেবার আইন ২০০৬ এবং বাংলাদেশ লেবার রুলস ২০১৫ অনুযায়ী, ২২ জুন থেকে কারখানাটি ‘লে-অফ’ ঘোষণা করা হয়েছে। গ্যাস সঙ্কট সমাধান হলে আবার উৎপাদন শুরু করার আশা করছে কোম্পানি।
এর আগে ১২ আগস্ট রহিমা ফুড করপোরেশনও তাদের নারকেল তেল ও কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাতকরণ প্লান্টের উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। কোম্পানিটি জানায়, বাজারে কাক্সিত অবস্থান তৈরি করতে না পারায় তারা সাময়িকভাবে উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। এটিকে তারা একটি শিণীয় অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখছে এবং দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্বের জন্য বিকল্প কৌশল খুঁজছে।
ডিএসই’র প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, বেশিরভাগ কোম্পানি ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে বন্ধ হয়েছে। তবে একটি কোম্পানি ২০০২ সাল থেকে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ছিল। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে উৎপাদন বন্ধ থাকায় বারাকা পাওয়ার এবং জাহীন স্পিনিং মিলসকে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নামিয়ে দেয়া হয়েছে।
ডিএসইর প্রকাশিত বন্ধ কোম্পানির তালিকায় রয়েছে অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স, অ্যারামিট সিমেন্ট, আজিজ পাইপস, বারাকা পাওয়ার, দুলামিয়া কটন মিলস, এমারাল্ড অয়েল, ফ্যামিলি টেক্স, জিবিবি পাওয়ার, জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনস, খুলনা পাওয়ার কোম্পানি, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, মেট্রো স্পিনিং মিলস, মিথুন নিটিং, নিউ লাইন কথিংস, নর্দার্ন জুট, নুরানি ডাইং, প্রাাইম টেক্সটাইল, আরএসআরএম, রিজেন্ট টেক্সটাইল, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকস, তুং হাই নিটিং, ইয়াকিন পলিমার, জাহিন স্পিনিং মিলস এবং দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হলো শ্যামপুর সুগার মিলস ও উসমানিয়া গ্লাস শীট ফ্যাক্টরিজ। ●
অকা/পুঁবা/ফর/সন্ধ্যা/২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 1 week আগে