অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে পুঁজি বাজারে লেনদেনের বড় ধরনের অবনতি ঘটেছে। গত সপ্তাহে (১৪ -১৮ সেপ্টে:) দেশের প্রধান পুঁজি বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হ্রাস পেয়েছে ৩৯ দশমিক ০২ শতাংশ। সপ্তাহে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয় ৩ হাজার ৫০৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা। অথচ এর আগের সপ্তাহে (০৯ সেপ্টে:-১৩ সেপ্টে:) লেনদেন ছিল ৫ হাজার ৭৪৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার একটি চিঠির কারণে হঠাৎ বাজারে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা তৈরি হয়, যা বাজারের স্বাভাাবিক গতিকে ব্যাহত করে। এতে বিক্রয়চাপ বাড়ার পাশাপাশি হ্রাস পায় বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণও। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পক্ষ থেকে পুঁজি বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে পুঁজি বাজারে বছরে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা মুনাফা করেছেন এমন বিনিয়োগকারীদের সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে বিএসইসি এ সম্পর্কিত তথ্য জানতে ১৪ সেপ্টেম্বর দুই স্টক এক্সচেঞ্জে চিঠি দেয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওই চিঠির কারণে গত রোববার বড় ধরনের সূচক হারায় বাজারটি। সপ্তাহের প্রায় পুরোটা সময়ই এ নেতিবাচক আচরণ ভর করে বাজারে। এর ফলে গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭৩ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট অবনতির শিকার হয়। ৫ হাজার ৫২৩ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট থেকে সপ্তাহ শুরু করা সূচকটি ১৮ সেপ্টেম্বর সপ্তাহান্তে নেমে আসে ৫ হাজার ৪৪৯ দশমিক ৯৩ পয়েন্টে। একই সময় ডিএসইর দুই বিশেষায়িত সূচক ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ হারায় যথাক্রমে ৪৩ দশমিক ৯৪ ও ১৮ দশমিক ১১ পয়েন্ট।
এ দিকে ডিএসই থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুসারে বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বিএসইসির পক্ষ থেকে শেয়ার বাজারে বড় বিনিয়োগকারীদের মুনাফার তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল, তা প্রশমিত হবে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা রায় এটি এক গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক পদপে। তা ছাড়া দেশের পুঁজি বাজার দীর্ঘদিনের মন্দায় আক্রান্ত থাকা এবং খুব বেশি সংবেদনশীল হওয়ায় এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্টেক হোল্ডারদের সাথে আলোচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।
ডিএসই থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে ১৪ সেপ্টেম্বর বিএসইসি থেকে চিঠি দেয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়। এর ধারাবাহিকতায় ১৮ সেপ্টেম্বর সকালে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ব্রোকারেজ হাউজগুলোর কাছে চিঠি পাঠালেও বিকেলেই নতুন বার্তা দিয়ে ওই নির্দেশনা স্থগিত করে দেয়।
অন্য দিকে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ প্রথম থেকেই সতর্ক অবস্থান নেয়। তারা জানায়, এমন সংবেদনশীল তথ্য চাওয়ার বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাথে আলোচনার আগে কোনো চিঠি ব্রোকারদের কাছে পাঠানো হবে না। ডিএসই কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থাই বাজারের আসল চালিকাশক্তি; তাই তাদের স্বার্থ রা করাই সর্বাগ্রে বিবেচ্য।
প্রসঙ্গত, জাতীয় বাজেটে শেয়ার বাজার থেকে মূলধনী মুনাফা ৫০ লাখ টাকা ছাড়ালে কর দেয়ার নিয়ম রয়েছে। এই কর সঠিকভাবে পরিশোধ হচ্ছে কি না তা যাচাইয়ের জন্য ২৫ আগস্ট জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিএসইসিকে একটি চিঠি দেয়। তারই ধারাবাহিকতায় কমিশন ডিএসই ও সিএসই থেকে তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়।
সিএসইর ব্রোকারেজ হাউজগুলোর প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, তারা সকালে সিএসইর নির্দেশনা পেলেও বিকেলের নতুন বার্তায় তথ্য পাঠানোর প্রয়োজনীয়তা আর নেই বলে জানানো হয়। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসবে বলেও তারা আশা প্রকাশ করেছেন।
বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, তথ্য সংগ্রহের চিঠির কারণে টানা দুই দিন শেয়ার বাজারে বড় ধরনের পতন হয়েছিল। তবে প্রক্রিয়াটি স্থগিত হওয়ায় আজ থেকে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে বলে তারা মনে করছেন।
গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির প্রতিদিন গড়ে শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩১ কোটি ৫৮ লাখ টাকার, যা ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ৪.৫০ শতাংশ। তালিকার দ্বিতীয় স্থানে ছিল সামিট অ্যালাইয়েন্স পোর্র্ট। গত সপ্তাহে তাদের প্রতিদিন গড়ে ২০ কোটি ৩৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এটি ডিএসইর মোট লেনদেনের ২.৯১ শতাংশ। এ সময় ডিএসইর লেনদেনের শীর্ষ দশ কোম্পানির মধ্যে ছিল যথাক্রমে রবি আজিয়াটা, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, টেকনো ড্রাগস, ওরিয়ন ইনফিউশন, সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস, লাভেলো আইসক্রিম, সী পার্ল বিচ রিসোর্ট ও ইনফরমেশন সিস্টেমস নেটওয়ার্ক (আইএসএন)।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে দর বৃদ্ধির তালিকায় প্রথমে ছিল বস্ত্র খাতের এনভয় টেক্সটাইলস। ১৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ দর বাড়ে কোম্পানিটির শেয়ারের। ১৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি পেয়ে এ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিল শ্যামপুর সুগার মিলস। ডিএসইর মূল্যবৃদ্ধিতে শীর্ষ দশ কোম্পানির অন্যগুলো ছিল যথাক্রমে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, টেকনো ড্রাগস, ক্রাউন সিমেন্ট, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, বিডি ফিন্যান্স, মিডল্যান্ড ব্যাংক, সামিট অ্যালাইয়েন্স পোর্ট ও মেট্রো স্পিনিং।
এ সময় ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি দর কমেছে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রাইম ফাইন্যান্সের। ২৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ দর হারায় কোম্পানিটি। ২৪ দশমিক ০৭ শতাংশ দর হারিয়ে এ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিল সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। দরপতনের শীর্ষ দশ কোম্পানির অন্যগুলো ছিল যথাক্রমে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সিএপিএম, বিডিবিএল, মিউচুয়াল ফান্ড, এক্সিম ব্যাংক, প্রিমিয়ার লিজিং, বিবিএস ক্যাবলস, মুন্নু ফেব্রিক্স, ডমিনেজ স্টিলস ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। ●
অকা/পুঁবা/ফর/বিকাল/২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 3 months আগে

