অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের রফতানির সবচেয়ে বড় বাজার, যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানি দ্বিগুণ হয়ে ২০২২ সালে ৯.৭৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। চীন থেকে সরে আসা ক্রয়াদেশের ভালো অংশ বাংলাদেশ পাওয়ায় এবং অপেক্ষাকৃত উচ্চ মূল্যের পোশাক তৈরি করায় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি দ্বিগুণ হয়েছে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ কমার্সের অধীনে অফিস অফ টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলস (ওটেক্সা) থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি প্রায় ২৮ শতাংশ বেড়ে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
একই সময়ে চীনের রফতানি না বেড়েছে কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ, যদিও চীন এখনও সেখানে শীর্ষ রফতানিকারক।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, "আমরা সময়মত এবং ক্রেতার চাহিদামত পণ্য তৈরি করে দেওয়ার ক্ষেত্রে ক্রেতার আস্থা অর্জন করতে সমর্থ হয়েছি। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের একটি অংশ চীন থেকে তাদের অর্ডার বাংলাদেশের আনছে।"
"এক সময় বাংলাদেশ কেবল বেসিক পণ্য তৈরি করতো, কিন্তু এখন হাই ভ্যালু অ্যাডেড পোশাক তৈরির সক্ষমতা অর্জন করেছে অনেক কারখানা। ফলে অন্যান্য দেশের মত যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা বাংলাদেশে আসছে," যোগ করেন তিনি।
ওটেক্সার তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্র যে শীর্ষ ১০টি দেশ থেকে পোশাক আমদানি করেছে, তারমধ্যে বাংলাদেশ থেকে করেছে সবচেয়ে বেশি হারে। আলোচ্য সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি বেড়েছে ৩৬.৩৮ শতাংশ। একই সময়ে প্রথম ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রফতানিকারক চীন ও ভিয়েতনামের রপ্তানি বেড়েছে যথাক্রমে ১০.৮৩ শতাংশ ও ২৭ শতাংশ হারে।
অবশ্য বিশ্বে পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হলেও মার্কিন বাজারে অবস্থান তৃতীয়।
ফলে শীর্ষ রফতানির বাজার হওয়া সত্ত্বেও রফতানিকারকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রফতানি আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রের যেসব ক্রেতা বা ব্র্যান্ড বাংলাদেশমুখী নয় কিংবা খুব সামান্য পরিমাণ আমদানি করে, ওইসব ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোয় গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ।
"বাংলাদেশ থেকে পণ্য নেয় বা সীমিত আকারে সোর্সিং করে এরকম কিছু মার্কিন ব্র্যান্ড এখনও আছে। তাই যখন আমরা আমাদের বাজারকে বৈচিত্র্যময় করার তাগিদ দেই, আমরা মনে করি, আমাদের কাছে এখনও বিদ্যমান বাজার ধরার বিশাল সুযোগ রয়েছে," বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, "যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানিতে বাংলাদেশের অংশ মাত্র ৯.৭৫ শতাংশ, তাই এখানে আমাদের অবদান আরও বাড়ানোর বিশাল সুযোগ রয়েছে।"
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ডেনিম আমদানিতে বাংলাদেশ শীর্ষস্থান অর্জন করেছে বলে জানান তিনি।
ওটেক্সার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ২০১৭ সাল থেকে পরবর্তী পাঁচ বছরে শীর্ষ রপ্তানিকারক চীনের রপ্তানি কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। একই সময়ে ভিয়েতনামের বেড়েছে ৫৮ শতাংশ।
বাংলাদেশের পরে দেশটিতে চতুর্থ রফতানিকারক ভারতের রফতানি বেড়েছে ৫৪ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ২৩ শতাংশ, কম্বোডিয়ার ১০২ শতাংশ, হন্ডুরাসের ২৯ শতাংশ, মেক্সিকোর ১১ শতাংশ এবং পাকিস্তানের বেড়েছে ১১৭ শতাংশ।
তবে, শীর্ষ ১০ রফতানিকারকের তালিকায় থাকা আরেক দেশ দক্ষিণ কোরিয়ার রফতানি এই পাঁচ বছরে বাড়েনি।
অকা/তৈপোশি/সকাল, ১০ আগস্ট, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 2 years আগে

