অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
চলতি বছরের ৯ মাসেই চা রফতানি গত বছরের দ্বিগুণ ছাড়িয়েছে। বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসেই ২১ লাখ ৮৭ হাজার কেজি চা পাতা রফতানি হয়েছে। ২০২৩ সালে ১০ লাখ ৪৫ হাজার কেজি চা পাতা রফতানি হয়। যদিও দুই যুগ আগে যে পরিমাণ চা পাতা বাংলাদেশ থেকে রফতানি হতো সে তুলনায় বর্তমান রফতানির পরিমান পাঁচ ভাগের এক ভাগের কাছাকাছি। তবুও চায়ের গুণগতমান বাড়ার কারণে রফতানি সাম্প্রতিক বছরগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি। রফতানি বাড়লেও মৌসুমের শুরুতে খরা পরিস্থিতির কারণে কমেছে চায়ের উৎপাদন।
চা বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরে চায়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ কোটি ৮০ লাখ (১০৮ মিলিয়ন) কেজি। কিন্তু আগস্ট পর্যন্ত চা উৎপাদন হয়েছে চার কোটি ৯৫ লাখ ৩২ হাজার (৪৯.৫৩২ মিলিয়ন) কেজি। বছরের মাত্র চার মাস বাকি থাকলেও চায়ের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও হয়নি। সূত্র মতে, এ বছর চায়ের উৎপাদন গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ পর্যন্ত কম। চা বোর্ড সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছর চায়ের উৎপাদন ১০ কোটি কেজিরও কম হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। চা বোর্ড সংশ্লিষ্টদের মতে, চলতি বছরের এপ্রিল-মে মাসে বৃষ্টিপাত তো হয়ইনি, বরং চা বাগান ও ক্ষুদ্রায়তন চা বাগানগুলো খরার কবলে পড়ে। ফলে চায়ের বহু গাছ মারা যায়, বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলের ক্ষুদ্রায়তন চাষিরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে চা উৎপাদনে ধাক্কা লাগে। তবে উৎপাদন কমার সাথে সাথে আভ্যন্তরীণ চাহিদাও কমেছে বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে ২০০১ সালের সাথে তুলনা করলে গত দুই দশকেরও বেশি সময়ের ব্যবধানে চায়ের উৎপাদন বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে; কিন্তু চা রফতানির পরিমাণ অনেকাংশেই কমেছে। অর্থাৎ, এই সময়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই চায়ের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। জানা যায়, ১৯৭০ সালে বাংলাদেশে চা বাগানের সংখ্যা ছিল ১৫০টি, বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ১৬৮টি।
বাংলাদেশ থেকে অতীতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চা বিদেশে রফতানি হলেও ২০০৭ সালের পর থেকে তা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে। ২০০৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত অধিকাংশ বছরগুলোতে চা রফতানির পরিমাণ ছিল ১০ লাখ কেজির নিচে। অথচ ২০০১ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে গড় চা রফতানির পরিমাণ ছিল প্রায় এক কোটি কেজির কাছাকাছি। মাঝে ২০২০ সালে রফতানির পরিমাণ ২১ লাখ ৭০ হাজার কেজি পর্যন্ত পৌঁছালেও এর পরের বছরই তা ছয় লাখ ৮০ হাজার কেজিতে নেমে আসে। তবে চলতি বছরে আবারো চা রফতানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ার তথ্য মিলছে। রফতানি বাড়ার পাশাপাশি রফতানির নতুন গন্তব্যও বাড়ছে বলে সূত্র জানায়।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত অর্থ বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো ভারতে চা রফতানি হয়েছে। এ ছাড়াও পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব অমিরাত, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, ওমান, বাহরাইন, মালয়েশিয়া, ভারত, জাপান, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, পোল্যান্ড, ব্রুনাই, ফ্রান্স, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ায় চা রফতানি হয়েছে।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো: আশরাফুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, রফতানির ক্ষেত্রে অন্যতম শর্ত হলো চায়ের গুণগতমান। সে জন্য চায়ের কোয়ালিটি কিভাবে বাড়ানো যায় সে লক্ষ্যে ২০২২ সালে টি টেস্টিং অ্যান্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল কোর্স চালু করা হয়। এ ছাড়া মটিভেশন এবং ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করি। এর ফলাফল হিসেবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে চায়ের মান বেড়েছে। স্বাভাবিক কারণেই গুণগত মানসম্পন্ন চায়ের বৈশ্বিক চাহিদা রয়েছে। ফলে চা রফতানি বেড়েছে। তিনি জানান, আমরা দেশের চাহিদা মিটিয়েই বিদেশে চা রফতানি করছি। সে জন্য চায়ের উৎপাদন বাড়ানোর দিকেও নজর দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে দেশে চায়ের চাহিদা সাড়ে ৯ কোটি (৯৫ মিলিয়ন) কেজি এবং গত বছরে উৎপাদন ছিল ১০ কোটি ৩০ লাখ (১০৩ মিলিয়ন) কেজি বলেও তিনি জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে চা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, একসময় মানুষ চা বলতে শুধু দুধ চা চিনত। মানুষ এখন দুধ চায়ের পাশাপাশি লিকার চা, সবুজ চা, সাদা চা পান করছে। দুধ চায়ের বিপরীতে লিকার চা এবং সবুজ চায়ের চাহিদা বাড়তে থাকায় স্বাভাবিকভাবে চা পাতার চাহিদাও কমছে। এ ছাড়া করোনা মহামারী এবং বৈশ্বিক যুদ্ধের কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই চা পান কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে কিছুটা হয়তো চাহিদা কমেছে। ●
অকা/পবা/ফর/সন্ধ্যা/৪ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 1 year আগে

