অর্থকাগজ প্রতিবেদন

বিদায়ী অর্থবছরের শেষ প্রান্তিক, অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুন—এই তিন মাস বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতের জন্য ছিল চ্যালেঞ্জপূর্ণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এই সময়ে তৈরি পোশাক রফতানি আয় দাঁড়িয়েছে ৯১১ কোটি মার্কিন ডলারে, যা আগের প্রান্তিকের তুলনায় ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ কম। অথচ সার্বিক অর্থবছর জুড়ে রফতানি আয় কিছুটা বেড়েছে। শেষ প্রান্তিকে এই পতনের পেছনে একাধিক জটিল কারণ একসঙ্গে কাজ করেছে, যার মধ্যে প্রধান হলো যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ নিয়ে অনিশ্চয়তা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত অর্থবছরের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের তৈরি পোশাক পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়, যা পরে সংশোধন করে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। যদিও কার্যকর হওয়ার আগে থেকেই বিদেশি ক্রেতারা নতুন অর্ডার দেওয়া থেকে বিরত ছিল এবং অনেকেই বিদ্যমান অর্ডার স্থগিত করে। এর ফলে উৎপাদন কার্যক্রম ও রফতানি চালান উভয়ই অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে। নতুন শুল্কহার ৩১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে এবং বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য এটি তুলনামূলকভাবে সহনীয়। কারণ, একই বাজারে বাংলাদেশের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামের ওপরও শুল্ক ২০ শতাংশ, ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ এবং চীনের ওপর ৩০ শতাংশ। ফলে এই পরিবর্তন বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান আংশিকভাবে বজায় রাখতে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

এর পাশাপাশি এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতির কারণে বন্দরে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়। পণ্যের চালান সময়মতো ছাড় না পাওয়ায় রফতানি কার্যক্রমে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটে, যা অনেক বিদেশি ক্রেতার আস্থা নষ্ট করেছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে পোশাকের চাহিদা কমে যাওয়া এবং ক্রেতাদের অর্ডার সংকোচনও রফতানি হ্রাসের আরেকটি কারণ। একই সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি ও রফতানি বাজারে বৈচিত্র্যের অভাব খাতটির জন্য অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চতুর্থ প্রান্তিকে তৈরি পোশাক রফতানিতে মূল্য সংযোজনের হারও কিছুটা কমেছে। এপ্রিল-জুন সময়ে ৯১১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানির বিপরীতে ৩৯৪ কোটি ডলারের কাঁচামাল আমদানি করা হয়েছে, ফলে মূল্য সংযোজন দাঁড়িয়েছে ৫৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আগের প্রান্তিকে এ হার ছিল ৫৮ দশমিক ৯০ শতাংশ। এটি ইঙ্গিত করে যে কাঁচামালের ওপর নির্ভরতা বেড়েছে অথবা উৎপাদন প্রক্রিয়ায় দক্ষতার ঘাটতি হয়েছে।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার সংশোধন স্বল্পমেয়াদে বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক হলেও দীর্ঘমেয়াদে বাজার বৈচিত্র্য, উৎপাদন দক্ষতা এবং অভ্যন্তরীণ প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমের দক্ষতা বাড়ানো না গেলে রফতানি প্রবৃদ্ধি টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অনিশ্চয়তা এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রেতাদের ব্যয় সংকোচন অব্যাহত থাকায় আগামী প্রান্তিকগুলোতেও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
অকা/তৈপোশি/ই/সকাল/১০ আগস্ট, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ

সর্বশেষ হালনাগাদ 4 months আগে

Leave A Reply

Exit mobile version