অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
সরকার সঞ্চয়পত্র ও মেয়াদি আমানতে (এফডিআর) বিনিয়োগকারীদের জন্য কর রিটার্ন সংক্রান্ত শর্তে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র ক্রয় বা এফডিআর রাখার ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা থাকবে না। আগে এই সীমা ছিল ৫ লাখ টাকা। অন্যদিকে, ২০ লাখ টাকার বেশি ব্যাংক ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
সম্প্রতি আইন, বিচার ও সংসদ-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ এ বিষয়ে একটি গেজেট প্রকাশ করেছে। এতে উল্লেখ করা হয়, “এ আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, দ্বৈত কর পরিহার চুক্তি প্রাধান্য পাবে।” ওই গেজেটের আলোকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের মাধ্যমে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক লুবাবা সাদিয়া বলেন, “আগে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হতো না। নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এই সীমা ১০ লাখ টাকা করা হয়েছে। এর বেশি হলে অবশ্যই রিটার্ন দিতে হবে।”
এদিকে, চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর নতুন হারে পাঁচটি সঞ্চয় স্কিমে মুনাফা সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ থেকে সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে জানুয়ারি মাসে সর্বোচ্চ হার ছিল ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত। অর্থাৎ ছয় মাসের ব্যবধানে মুনাফার হার গড়ে ০.৫ শতাংশের বেশি কমানো হয়েছে। মুনাফার হার কমানো স্কিমগুলোর মধ্যে রয়েছে পরিবার সঞ্চয়পত্র, পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পেনশনার সঞ্চয়পত্র এবং পোস্ট অফিস ফিক্সড ডিপোজিট বা ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক মেয়াদি হিসাব। তবে ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড এবং ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের সাধারণ হিসাবের মুনাফার হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে একাধিক অর্থনৈতিক কারণ রয়েছে। সরকারের লক্ষ্য করদাতার সংখ্যা বাড়ানো এবং কর ফাঁকি রোধ করা। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীদের কর রিটার্ন দাখিলের সীমা বাড়িয়ে সরকার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কিছুটা স্বস্তি দিলেও উচ্চমূল্যের বিনিয়োগকারীদের কর আওতায় আনতে চায়। পাশাপাশি, মুনাফার হার কমানোর সিদ্ধান্ত মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং সরকারি ঋণ ব্যয় কমানোর সঙ্গে সম্পর্কিত। বর্তমানে সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণের বড় অংশ আসে সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে। উচ্চ মুনাফার কারণে সরকারের সুদের বোঝা বাড়ছিল। নতুন হারে মুনাফা কিছুটা কমানোয় রাজস্ব ব্যয় চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সুবিধা হবে।
অন্যদিকে, ব্যাংকিং খাতে আমানতের প্রবাহ বাড়াতে চায় সরকার। কারণ সঞ্চয়পত্রের উচ্চ মুনাফা আমানতকারীদের ব্যাংক থেকে সঞ্চয়পত্রে টেনে নিচ্ছিল, ফলে ব্যাংকগুলো আমানত সংকটে পড়ছিল। নতুন হার ব্যাংকিং খাতকে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থায় ফেরাতে সহায়ক হতে পারে।
বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন নীতিমালা মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। ছোট বিনিয়োগকারীরা কর ছাড়ের সীমা বাড়ায় উপকৃত হবেন। কিন্তু বড় বিনিয়োগকারীদের জন্য করের শর্ত এবং মুনাফার হার কমানো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। অন্যদিকে, সঞ্চয়পত্রের বিকল্প হিসেবে শেয়ারবাজার বা ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদি এফডিআরের প্রতি আগ্রহ বাড়তে পারে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারের এই নীতি কাঠামো করজাল সম্প্রসারণ, বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ এবং আর্থিক খাতের ভারসাম্য রক্ষায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে এটি সঞ্চয়পত্রে উচ্চ মুনাফার আশায় থাকা বিনিয়োগকারীদের জন্য আয়ের সুযোগ কিছুটা সীমিত করবে। ●
অকা/ব্যাংখা/ই/সকাল/২৪ জুলাই, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 3 months আগে

