অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবসে ফের সংশোধন ঘটেছে পুঁজি বাজারে। তবে সংশোধনের খুব একটা প্রভাব দেখা যায়নি বাজারের লেনদেনে। এর আগে ৪ সেপ্টেম্বর দেশের দুই পুঁজি বাজারে সংশোধন ঘটলেও ৭ সেপ্টেম্বর সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে নতুন করে ঊর্ধ্বমুখী হয় পুঁজি বাজার সূচক। এ দিন ঢাকা শেয়ার বাজারে সাম্প্রতিক সময়ের সর্বোচ্চ লেনদেন নিষ্পত্তি হতে দেখা যায়। ৮ সেপ্টেম্বরও দিনের শুরুতে এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত ছিল। লেনদেনের প্রথম এক ঘণ্টা বেশ ভালো অবস্থান ধরে রাখে বাজার সূচক। তবে বেলা ১১টার পর থেকে বিক্রয়চাপ তৈরি হলে নিম্নমুখী হয় সূচক। এতে দিনশেষে ঢাকা বাজারে সূচকের কিছুটা মিশ্র প্রবণতা দেখা গেলেও উন্নতি ঘটে চট্টগ্রামে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৮ সেপ্টেম্বর ৮ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট হ্রাস পায়। ৫ হাজার ৬৩৬ দশমিক ১৫ পয়েন্ট থেকে দিন শুরু করা সূচকটি ৭ সেপ্টেম্বর দিনশেষে নেমে আসে ৫ হাজার ৬২৭ দশমিক ৫৯ পয়েন্টে। তবে দিনের শুরুতে ঊর্ধ্বমুখী সূচকটি বেলা ১১টা পর্যন্ত ৩৮ পয়েন্টের বেশি উন্নতি ঘটে। লেনদেনের এ পর্যায়ে বিক্রয়চাপের মুখে পড়লে নিম্নমুখী হয়ে ওঠে সূচকটি। লেনদেন শেষে ডিএসইএক্স ৮ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট অবনতি ঘটলেও ডিএসইর বিশেষায়িত সূচকের একটি ডিএসই-৩০ এ সময় ৩ দশমিক ৮৮ পয়েন্ট উন্নতি ধরে রাখতে সক্ষম হয়। একই সময় ডিএসইর অন্য বিশেষায়িত সূচক ডিএসই শরিয়াহ হারায় ৪ দশমিক ২৩ পয়েন্ট। তবে দেশের দ্বিতীয় পুঁজি বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) এ দিন সবগুলো সূচকই উন্নতি ধরে রাখতে সক্ষম হয়। এখানে সিএসই সার্বিক মূল্যসূচক ৪৮ দশমিক ১২ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়। সিএসইর বিশেষায়িত দুই সূচক সিএসই-৩০ ও সিএসসিএক্স সূচক দু’টি যথাক্রমে ৪৬ দশমিক ৫৩ ও ২৪ দশমিক ১৯ পয়েন্ট উন্নতি ধরে রাখতে সক্ষম হয়।
সংশোধনে সূচকের মিশ্র আচরণ সত্ত্বেও এ দিন ডিএসইর লেনদেনে বড় কোনো প্রভাব পড়েনি। ৮ সেপ্টেম্বর এক হাজার ৩৯৮ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে ডিএসই, যা আগের দিন অপেক্ষা ৪৩ কোটি টাকা কম। ৭ সেপ্টেম্বর ডিএসইর লেনদেন ছিল এক হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। তবে সূচকের উন্নতি ঘটলেও লেনদেন কিছুটা কমেছে চট্টগ্রাম শেয়ার বাজারে। এখানে আগের দিনের ১৮ কোটি টাকার স্থলে লেনদেন নেমে আসে ১৬ কোটি টাকায়।
এ দিকে পুঁজি বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এমজেএল বাংলাদেশ পিএলসির সহযোগী প্রতিষ্ঠান ওমেরা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড তরলকৃত গ্যাস বাজারজাতকারী ফরাসি কোম্পানি টোটালগ্যাসের বাংলাদেশের ব্যবসা অধিগ্রহণ করেছে। যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি প্রিমিয়ার এলপি গ্যাস লিমিটেড দেশে টোটালগ্যাসের ব্যানারে ব্যবসা পরিচালনা করতো। ওমেরা পেট্রোলিয়াম সম্প্রতি প্রিমিয়ার এলপি গ্যাসের প্রায় শতভাগ শেয়ার কিনে নেয়ার ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির সাথে একটি চুক্তি করেছে। ওমেরা পেট্রোলিয়ামের ৬২ শতাংশের মালিক মোবিল যমুনা লুব্রিকেন্টের পক্ষ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর ডিএসই ওয়েবসাইটে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, অধিগ্রহণকৃত কোম্পানির পুরো দায়সহ ৩২ মিলিয়ন ডলারে প্রিমিয়ার এলপি গ্যাসের ৯৯.৯৯৫ শতাংশ শেয়ার কিনবে ওমেরা পেট্রোলিয়াম, স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৩৯০ কোটি টাকা। এই ৩২ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ১৯ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে প্রিমিয়ার এলপি গ্যাস লিমিটেডের শেয়ার কেনায়, যার আওতায় থাকবে কোম্পানিটির সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ। অন্যদিকে কোম্পানিটির ব্যাংক ঋণসহ অন্যান্য দায় নিজের কাঁধে তুলে নেবে ওমেরা পেট্রোলিয়াম, যা শোধ করতে ব্যয় হবে ১৩ মিলিয়ন ডলার।
বর্তমানে ওমেরা পেট্রোলিয়াম এলপি গ্যাসের বাজারে বড় অংশীদার। আর মোট বাজারের ৫ শতাংশ নিয়šণ করে টোটালগ্যাস। আশা করা হচ্ছে টোটালগ্যাস তথা প্রিমিয়ার এলপি গ্যাস লিমিটেডকে অধিগ্রহণ করার পর কোম্পানিটির মার্কেট শেয়ার বেড়ে ২২ শতাংশ থেকে ২৭ শতাংশে উন্নীত হবে।
গত কয়েক বছর ধরে টোটালগ্যাস তথা প্রিমিয়ার এলপি গ্যাস টানা লোকসান দিয়ে যাচ্ছে। বার্ষিক লোকসানের পরিমাণ ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকা। এমন অবস্থায় কোম্পানির মালিকরা ব্যবসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেয়। এর অংশ হিসেবে গত কয়েক মাস ধরে ওমেরা পেট্রোলিয়ামের কাছে কোম্পানির ব্যবসা বিক্রি করার বিষয়ে আলোচনা চলছিল। সম্প্রতি আলোচনায় চূড়ান্ত মতৈক্য হলে কোম্পানি দু’টি এ বিষয়ে একটি চুক্তি করে। প্রিমিয়ার এলপি গ্যাস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঞ্জুর মোরশেদ সিদ্দিকী ও ওমেরা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তানজিম চৌধুরী নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পে চ্রক্তিতে সই করেন। ওমেরা পেট্রোলিয়ামের পরিচালক আজম জে চৌধুরীসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
২০০২ সালে টোটালগ্যাস বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই দেশের শীর্ষ তিনটি এলপিজি আমদানিকারক ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে স্থান করে নেয়। তবে বেশি দিন এ অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি কোম্পানিটি। স্থানীয় কোম্পানিগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় ক্রমেই পিছিয়ে পড়তে থাকে। বাংলাদেশে টোটালগ্যাসের কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে এলপিজি আমদানি, সংরণ, বোতলজাতকরণ এবং ১২ কেজি, ১৫ কেজি ও ৩৩ কেজি সিলিন্ডারে বাজারজাতকরণ। শিল্প খাতের জন্য তারা বাল্ক বা পাইকারি সরবরাহও করে থাকে। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে তাদের এক লাখ টন ধারণমতার টার্মিনাল এবং বগুড়ায় একটি সেকেন্ডারি স্থাপনাও রয়েছে।
অন্য দিকে ওমেরা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড দেশের দুই পুঁজি বাজারে তালিকাভুক্ত এমজেএল বাংলাদেশ পিএলসিরর একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। ওমেরার ৬২ শেয়ারের মালিক এমজেএল। ২০১৫ সালে এলপি গ্যাসের বাজারে পা রাখে ওমেরা পেট্রোলিয়াম। আগ্রাসী বিনিয়োগ আর কার্যকর বিপণন কৌশলের বদৌলতে এক দশকের মধ্যে দেশের শীর্ষ এলপিজি বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানে উন্নীত হয়। জানা যায়, ২০১০ সালে দেশে এলপিজির বার্ষিক চাহিদা ছিল ৭০ হাজার টন, বর্তমানে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৭ লাখ টনে। প্রতি বছর এই খাত ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হারে বাড়ছে। সরকারের ঘোষণা অনুসারে ভবিষ্যতে গৃহস্থালি তথা বাসাবাড়িতে গ্যাসের সংযোগ বন্ধ ঘোষণায় শহর এলাকায় মানুষের ঘনত্ব বৃদ্ধির সাথে এলপি গ্যাসের বাজারও দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। ●
অকা/পুঁবা/ফর/রাত/৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 5 days আগে