অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
বড় ধরনের সংশোধন ঘটেছে দেশের পুঁজি বাজারে। সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজি বাজারগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার পর সূচকের যতটুকু উন্নতি ঘটেছে সে তুলনায় বাজারগুলোতে খুব বেশি সংশোধনের ঘটনা ঘটেনি। এ সময় ঢাকা শেয়ার বাজারে হাজার পয়েন্টের বেশি সূচক বেড়েছে।
চট্টগ্রাম শেয়ার বাজারে সূচকের উন্নতি ঘটেছে আড়াই হাজার পয়েন্টেরও বেশি। এ সময় বাজারে কমবেশি সংশোধনের ঘটনা ঘটলেও একদিনে বড় ধরনের সূচক হারায়নি। ৯ সেপ্টেম্বর ছিল তার কিছুটা ব্যতিক্রম। এদিন দুই পুঁজি বাজারই বড় আকারের সূচক হারায়। এতে দরপতনের শিকার হয় লেনদেন হওয়া কোম্পানির ৭৬ শতাংশের বেশি। দীর্ঘদিন সূচকের উন্নতি ঘটায় মূল্যস্তরে যে পরিবর্তন ঘটেছে তা থেকে বিনিয়োগকারীরা মুনাফা তুলে নিতে গেলে এ সংশোধন ঘটেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অন্যান্য দিনগুলোর মতো ৯ সেপ্টেম্বর সূচকের উন্নতিতে লেনদেন শুরু করে দেশের দুই পুঁজি বাজার। সকাল সোয়া ১০টার দিকেই প্রথমে বাজারগুলোতে বিক্রয়চাপ তৈরি হয়। অন্যান্য দিনগুলোতে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ এ চাপ সামলে নিলেও ৯ সেপ্টেম্বর লেনদেন শেষ হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। এতে বড় ধরনের সূচক হারায় বাজারগুলো। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৮৯ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট হারায় ৯ সেপ্টেম্বর। ৫ হাজার ৬২৭ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট থেকে লেনদেন শুরু করা সূচকটি ৯ সেপ্টেম্বর দিনশেষে নেমে আসে ৫ হাজার ৫৩৮ দশমিক ২৬ পয়েন্টে। ডিএসইর দুই বিশেষায়িত সূচক ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ একই সময় যথাক্রমে ৩৯ দশমিক ১৫ ও ২১ দশমিক ২২ পয়েন্ট হারায়।
দেশের দ্বিতীয় পুঁজি বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ৯ সেপ্টেম্বর ২০২ দশমিক ৪৭ পয়েন্ট হারায়। ১৫ হাজার ৭৭৩ দশমিক ০৬ পয়েন্ট থেকে যাত্রা করা সূচকটি ৯ সেপ্টেম্বর দিনশেষে ১৫ হাজার ৫৭০ দশমিক ৫৮ পয়েন্টে স্থির হয়। বাজারটির বিশেষায়িত দুই সূচক সিএসই-৩০ ও সিএসসিএক্স সূচকের অবনতি ঘটে যথাক্রমে ২০৬ দশমিক ৯৪ ও ১২৭ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট।
পুঁজি বাজার সংশ্লিষ্টরা ৯ সেপ্টেম্বরের বাজার আচরণকে স্বভাবিক বলেই মনে করছেন। তাদের মতে, এক দিনে সূচকের বড় ধরনের অবনতি ঘটলেও তাতে কোনো অস্বাভাবিকতা নেই। বিনিয়োগকারীদের মনাফা তুলে নেয়ার কারণেই এটা ঘটেছে। তারা মনে করেন, জুন মাস থেকে পুঁজি বাজারগুলো স্বাভাবিক ধারায় ফেরা শুরু করেছে। আর সেই থেকে ঢাকা শেয়ার বাজারের সূচকের উন্নতি ঘটেছে ১ হাজার পয়েন্টের বেশি। ২৮ মে ডিএসইর প্রধান সূচকটির অবস্থান ছিল ৪ হাজার ৬১৫ দশমিক ৪০ পয়েন্টে। আর ৮ সেপ্টেম্বর সূচকটির অবস্থান ছিল ৫ হাজার ৬২৭ দশমিক ৫৯ পয়েন্টে। একইভাবে উল্লেখিত সময়ে চট্টগ্রাম শেয়ার বাজারের প্রধাসন সূচক সিএসই সার্বিক সূচকের উন্নতি ঘটেছে আড়াই হাজার পয়েন্টের বেশি। ২৮ মে সিএসই সার্বিক সূচকটি অবস্থান করছিল ১৩ হাজার ২৫ দশমিক ৫৫ পয়েন্টে। আর ৮ সেপ্টেম্বর সূচকটি পৌঁছে যায় ১৫ হাজার ৭৭৩ দশমিক ০৬ পয়েন্টে। এ সময়ের মধ্যে দুই বাজারেই কমবেশি সংশোধন ঘটলেও সে তুলনায় সূচকের যথেষ্ট উন্নতি ঘটেছে যেটি বাজারের সংশোধনকে অনিবার্য করে তুলেছে।
বেসরকারি পূবালি ব্যাংক সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসান উল্যা নয়া দিগন্তকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে যে পরিমাণ সূচকের উন্নতি ঘটেছে তাতে বিনিয়োগকারীদের জন্য মুনাফা তুলে নেয়ার সুযোগ তৈরি হয়। আর তারা এ সুযোগকে কাজে লাগান। এখান থেকে বাজার আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে অথবা সূচকের আরো কিছুটা অবনতিও ঘটতে পারে। এভাবেই বাজার টেকসই হয়। এতে ঘাবড়াবার কোনো কারণ নেই। সূচকের টানা উন্নতির পর যথাসময়ে বাজারে সংশোধন না হলে টেকসই বাজার আশা করা যায় না।
ঢাকা স্টকে ৯ সেপ্টেম্বর লেনদেন হওয়া ৪০১টি কোম্পানি ও ফান্ডের মধ্যে দরপতনের শিকার ছিল ৩০৫টি। এ দিন মূল্যবৃদ্ধি পায় মাত্র ৬৮টি সিকিউরিটিজের। অপরিবর্তিত ছিল ২৮টির দর। অপর দিকে চট্টগ্রাম স্টকে লেনদেন হওয়া ২৪৩টি সিকিউরিটিজের মধ্যে ৫২টির মূল্যবৃদ্ধির বিপরীতে দর হারায় ১৬৮টি। এখানে ২৩টি সিকিউরিটিজের দর ছিল অপরিবর্তিত।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ৯ সেপ্টেম্বর লেনদেনের শীর্ষে ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি ওরিয়ন ইনফিউশন। ৫০ কোটি ১৩ লাখ টাকায় কোম্পানিটির ৯ লাখ ৬৮ হাজার শেয়ার হাতবদল হয় ৯ সেপ্টেম্বর। ৩৯ কোটি ২৪ লাখ টাকায় ১ কোটি ২২ লাখ শেয়ার বেচাকেনা করে রবি অজিয়াটা ছিল দিনের দ্বিতীয় কোম্পানি। ডিএসইর লেনদেনে শীর্ষ দশ কোম্পানির তালিকার অন্যগুলো ছিল যথাক্রমে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, সিটি ব্যাংক, ই জেনারেশন, এমজেএল বিডি, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, রূপালি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, আইটি কন্সালট্যান্ট ও মালেক স্পিনিং।
ডিএসইতে ৯ সেপ্টেম্বর মূল্যবৃদ্ধিতে শীর্ষ কোম্পানি ছিল তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি ইনফরমেশন সিস্টেমস নেটওয়ার্ক। ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি ঘটে কোম্পানিটির। ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি পেয়ে একই খাতের ইনটেক অনলাইন ছিল এ তালিকার দ্বিতীয় কোম্পানি। মূল্যবৃদ্ধিতে ডিএসইর শীর্ষ দশ কোম্পানির অন্যগুলো ছিল যথাক্রমে সিএপিএম বিডিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, তমিজ উদ্দিন টেক্সটাইলস, ই জেনারেশন, এস আলম কোল্ডরোল স্টিলস, রূপালি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সিএপিএম আইবিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড ও এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ।
দিনের দরপতনের শীর্ষ কোম্পানি ছিল ওরিয়ন ইনফিউশন। ৯ সেপ্টেম্বর ৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ দরপতন ঘটে ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানিটির। দিনের বেশির ভাগ সময় এ কোম্পানিটির শেয়ারের কোন ক্রেতা ছিল না। যৌক্তিক কোনো কারণ না থাকার পরও সাম্প্রতিক সময়ে কোম্পানিটির ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারের দর ৬০০ টাকা কাছাকাছি পৌঁছে যায়। গত দুই দিনের পতনের পর ৯ সেপ্টেম্বর দিনের সার্কিট ব্রেকারের সর্বনিম্ন দর ৫০৫ টাকায়ও লেনদেনের শেষ দিকে কোনো ক্রেতা পায়নি কোম্পানিটি। ৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ দর হারিয়ে ৯ সেপ্টেম্বর এ তালিকায় দ্বিতীয় কোম্পানি ছিল আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ফার্স্ট ফিন্যান্স। ডিএসইর দরপতনের শীর্ষ দশ কোম্পানির তালিকায় আরো ছিল যথাক্রমে আরামিট সিমেন্ট, সাফকো স্পিনিং মিলস, নাহি অ্যালুমিনিয়াম কমপোজিট, জাহিন টেক্সটাইলস, ওরিয়ন ফার্মা, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, ইবিএল এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ড ও গোল্ডেন হারভেস্ট। ●
অকা/পুঁবা/ফর/রাত/৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 4 days আগে