অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
দীর্ঘদিনের মন্দা কাটিয়ে সম্প্রতি দেশের পুঁজি বাজারগুলো ইতিবাচক ধারায় ফিরলেও স্বাভাবিক আচরণে ফিরছে না বাজার। বাজার যেন আগের সেই কারসাজি চক্রের হাতেই বন্দী হয়ে পড়েছে। পুঁজি বাজারের সাম্প্রতিক চিত্র দেখলে তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এখানে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলো প্রায় প্রতিদিনই কমবেশি দরপতনের শিকার হচ্ছে। অপর দিকে লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বেড়ে চলেছে মৌলভিত্তিহীন কোম্পানিগুলোর শেয়ারের। আর এ কোম্পানিগুলোর শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে কাজ করছে শুধু স্বল্প মূলধন। এদের কারণে হালে পানি পাচ্ছে না মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি।
সাম্প্রতিক সময়ে বাজার আচরণ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সবার মাঝে ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়। শুরুতে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিগুলোকে বিনিয়োগকারীরা নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেন। কিন্তু ধীরে ধীরে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। লেনদেন ও সূচকের উন্নতি হওয়া শুরু করলে দুষ্ট চক্রের কবলে পড়ে যায় বাজারগুলো। শুরু হয় স্বল্প মূলধনের বেশ কিছু কোম্পানি নিয়ে টানা হেচড়া। আর গত দুইমাসে এ ধরনের কোম্পানিগুলোর কোনো কোনোটির দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ৩০০ শতাংশ। অথচ এ সময় কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে উৎপাদন ও ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড নিয়ে সন্তোষজনক বা সংবেদনশীল কোনো তথ্য প্রকাশ হতেও দেখা যায়নি।
অপর দিকে, যেসব কোম্পানির উৎপাদন কর্মকাণ্ড, লভ্যাংশ প্রদান ও আয় নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বরাবরই ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে সেসব মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানি প্রতিদিনই দরপতনের শিকার হচ্ছে। ২০২৪-২৫ অর্থ বছর শেষে ব্যাংকিং খাতের বেশ কিছু কোম্পানি ভালো আয় ও লভ্যাংশ প্রদান করলে বিনিয়োগকারীদের মনোযোগ পায়। কিন্তু সম্প্রতি এ খাতটিও মার খাচ্ছে দুর্বল কোম্পানিগুলোর কাছে। পুঁজি বাজারের এ ধরনের আচরণ প্রকৃত বিনিয়োগকারীদের ক্রমেই হতাশায় ফেলছে। বাজারের অস্বাভাবিক আচরণে তারা বাজার থেকে ধীরে ধীরে হাত গুটিয়ে নিচ্ছেন।
দুর্গাপূজার সরকারি ছুটির কারণে চলতি সপ্তাহে পুঁজি বাজারগুলোতে লেনদেন হয়েছে মোট তিন কর্মদিবস। এ তিন দিনেই দেশের প্রধান পুঁজি বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ দশ কোম্পানির ছয়টিই ছিল ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে দুর্বল কোম্পানির। এ সময় ডিএসইর মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে উঠে আসে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। উল্লিখিত সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতিদিনই দশ শতাংশ করে বেড়েছে কোম্পানিটির শেয়ারদর। এ সময় মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় দ্বিতীয় কোম্পানি ছিল সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকটির মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ২৯ দশমিক ৪১ শতাংশ। ২৯ দশমিক ০৩ শতাংশ দাম বেড়ে এক্সিম ব্যাংক উঠে আসে তৃতীয় অবস্থানে। এ তালিকায় শীর্ষ দশ কোম্পানি ছিল যথাক্রমে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, কে অ্যান্ড কিউ, ফার ইস্ট ফিন্যান্স ও ন্যাশনাল ফিড মিলস লি.।
এ দিকে পুঁজি বাজারে ব্যাংকিং খাতে তালিকাভুক্ত তিনটি কোম্পানি ব্র্যাক ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্সিয়াল ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংককে বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে মোট ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দিয়েছে পুঁজি বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ৩০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত কমিশনের ৯৭৫তম সভায় ব্যাংকগুলোর বন্ড ইস্যু করার প্রস্তাব ট্রাস্টি সনদ জমা দেয়ার শর্ত সাপেে অনুমোদন করা হয়েছে। কমিশনের সহকারী পরিচালক মো. মোহাইমেনুল হক স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে ব্র্যাক ব্যাংকের বন্ড সম্পর্কে বলা হয়েছে রেফারেন্স রেটের সাথে ২.৫ শতাংশ কুপন মার্জিন যোগ হয়ে বন্ডটির কুপন রেট নির্ধারিত হবে। আন-সিকিউরড, নন-কনভার্টিবল, সম্পূর্ণ রিডিমেবল, কুপন বেয়ারিং, ফোটিং রেট, সোস্যাল সাব-অর্ডিনেট বন্ড। এই বন্ডটি প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নিকট ইস্যু করা হবে। এ বন্ডটির প্রতি ইউনিটের অভিহিত মূল্য ১০ লাখ টাকা
বন্ডটির মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ দ্বারা ব্যাংকটি তার টায়ার-২ মূলধনের ভিত্তি শক্তিশালী করবে। আলোচিত বন্ডের ট্রাস্টি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। আর এর অ্যারেঞ্জারের দায়িত্বে থাকবে ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। বন্ডটি অল্টার্নেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে তালিকাভুক্ত হবে।
অপর দিকে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসির (ইউসিবি) ৮০০ কোটি টাকার বন্ডের ক্ষেত্রে জানা গেছে, রেফারেন্স রেটের সাথে ৩ শতাংশ কুপন মার্জিন যোগ হয়ে বন্ডটির কুপন রেট নির্ধারিত হবে। আন-সিকিউরড, নন-কনভার্টিবল, রিডিমেবল, ফোটিং রেট সাব-অর্ডিনেট এই বন্ডটির প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নিকট ইস্যু করা হবে। এ বন্ডটির প্রতি ইউনিটের অভিহিত মূল্য এক লাখ টাকা। বন্ডটির মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ দ্বারা ব্যাংকটি তার টায়ার-২ মূলধনের ভিত্তি আন্ডার ব্যাসেল ৩ শক্তিশালী করবে।
আলোচিত বন্ডের ট্রাস্টি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে ডিবিএইচ ফাইন্যান্স পিএলসি। আর এর অ্যারেঞ্জারের দায়িত্বে থাকবে ইউসিবি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। এই বন্ডটিও অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে তালিকাভুক্ত হবে।
এ ছাড়া ট্রাস্ট ব্যাংকের ৫০০ কোটি টাকার বন্ডের ক্ষেত্রে রেফারেন্স রেটের সাথে ৩ শতাংশ কুপন মার্জিন যোগ হয়ে বন্ডটির কুপন রেট নির্ধারিত হবে। আন-সিকিউরড, নন-কনভার্টিবল, রিডিমেবল, ফোটিং রেট সাব-অর্ডিনেট এই বন্ডটির প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নিকট ইস্যু করা হবে। এ বন্ডটির প্রতি ইউনিটের অভিহিত মূল্য এক লাখ টাকা। বন্ডটির মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ দ্বারা ব্যাংকটি তার টায়ার-২ মূলধনের ভিত্তি আন্ডার ব্যাসেল ৩ শক্তিশালী করবে।
আলোচিত বন্ডের ট্রাস্টি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে ডিবিএইচ ফাইন্যান্স পিএলসি। আর এর অ্যারেঞ্জারের দায়িত্বে থাকবে ইউসিবি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং ট্রাস্ট ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। বন্ডটি অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে তালিকাভুক্ত হবে। ●
অকা/পুঁবা/ফর/বিকাল/২ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 2 days আগে