অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দরে আটকা পড়েছে ভারতে রফতানির উদ্দেশ্যে যাওয়া বাংলাদেশি পণ্যের যানবাহন। যশোরের বেনাপোল বন্দরে ৩৬ ট্রাক তৈরি পোশাক ও লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরে ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকা পড়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ১৭ মে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, শুধু ভারতের নব সেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামে স্থল কাস্টমস স্টেশন (এলসিএস) বা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট (আইসিপি) দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাবপত্র রপ্তানি করা যাবে না। পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন বা এলসিএসের জন্যও এটি প্রযোজ্য হবে।
ভারতের বিধিনিষেধে বুড়িমারী স্থলবন্দরে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকা পড়েছে। তবে বন্দরে ভুটান থেকে পাথর আমদানি এবং ভারত ও নেপালে অন্যান্য পণ্য রফতানি স্বাভাবিক আছে। ১৭ মে রাতের দিকে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য স্থলবন্দরে আসে। ১৮ মে সীমান্ত পার হয়ে ওপারে ভারতের চ্যাংড়াবান্দা স্থলবন্দরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিধিনিষেধের কারণে ট্রাকগুলো পাঠানো সম্ভব হয়নি। বুড়িমারী স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রতিনিধি রেফায়েত হোসেন বলেন, ভারতে রফতানির জন্য ১৭ মে রাতে খাদ্যপণ্য নিয়ে ১৭টি ট্রাক বন্দরে এসেছিল। ১৮ মে পণ্যগুলো ভারতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওপার থেকে আমদানি বিধিনিষেধের কারণে কিয়ারেন্স না পাওয়ায় পণ্যগুলো পাঠানো সম্ভব হয়নি।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের ব্যবস্থাপক ও ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ১৮ মে বেলা তিনটা পর্যন্ত ভুটান থেকে বন্দরে ১৮৭ ট্রাক পাথর আমদানি হয়েছে। আর ১০ ট্রাক কটন র্যাগস (ঝুট) এবং ৯ ট্রাক পলিস্টার পেট গ্রানিউলস (প্লাস্টিক দানা) ভারতে রপ্তানি হয়েছে। পাশাপাশি ১৮ ট্রাক আলু, ১৪ ট্রাক পাট, ৪ ট্রাক কোমল পানীয় ও একটি ট্রাকে বৈদ্যুতিক পাখা নেপালে রফতানি হয়েছে।
যশোরের বেনাপোল বন্দরে আটকে গেছে তৈরি পোশাকবাহী ৩৬ ট্রাক পণ্য। ১৭ মে রাতে পণ্যগুলো বন্দরে আসে। বিধিনিষেধের কারণে পণ্যের চালান ভারতে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে পণ্যের রফতানি নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। চালানগুলো বেনাপোল থেকে ফিরিয়ে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের দিকে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপ। ঢাকার তৈরি পোশাক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান জেকে এন্টারপ্রাইজের মালিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে এক ট্রাক তৈরি পোশাক কলকাতায় পৌঁছাতে শুল্কায়ন, ট্রাক ভাড়াসহ সব মিলিয়ে ৬ লাখ টাকা খরচ হয়। সর্বোচ্চ তিন দিনের মধ্যে চালান গন্তব্যে পৌঁছে যায়। সেখানে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এক ট্রাক পণ্য কলকাতায় পাঠাতে প্রায় ১২ লাখ টাকা খরচ হবে। সময় লাগবে ২০ থেকে ২৫ দিন। এতে ছোট উদ্যোক্তারা মার খাবে। প্রায় ৩৫০টি তৈরি পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ভারতে রফতানির জন্য আনা প্রাণ-আরএফএলের গ্রুপের এক ট্রাক প্লাস্টিক পণ্য আটকে গেছে। ট্রাকটিতে প্রায় ৫ লাখ ৪৭ হাজার টাকার পিভিসি দরজা ছিল। ১৮ মে বিকেলে ট্রাকটি ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছিল। তবে বন্দরে ভুটান থেকে পাথর আমদানি এবং ভারত ও নেপালে অন্যান্য পণ্য রফতানি স্বাভাবিক আছে।
স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মো. সুমন আল মামুন বলেন, ‘ভারতে রফতানির জন্য আমাদের মাধ্যমে ১৭ মে সন্ধ্যায় এক ট্রাক আরএফএল পিভিসি ডোর বন্দরে এসেছিল। ১৮ মে এসব পণ্য ভারতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওপারে আমদানি বিধিনিষেধের কারণে কিয়ারেন্স পাওয়া যায়নি।’
আখাউড়া বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে রফতানি হওয়া প্রধান পণ্যের মধ্যে আছে সিমেন্ট, তাজা মাছ ও শুঁটকি, পাথর, বর্জ্য তুলা, আমের পানীয়, প্লাস্টিকের ফার্নিচার, মেলামাইনসামগ্রী, পিভিসি পাইপ ও দরজা, থ্রেসিং মেশিন এবং ডিফরমেট বার। আমদানির মধ্যে আছে পেঁয়াজ, আদা, পাথর, জিরা, ডাল ও কাজুবাদাম। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে এই বন্দর দিয়ে ৫৪ হাজার ৪৪২ দশমিক ২২ টন পণ্য রফতানি হয়েছে, যার বাজারমূল্য ছিল ৪২৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম ১০ মাসে রফতানি হয়েছে ৩৮ হাজার ৮৮৭ দশমিক ১৩ টন পণ্য, যার বাজারমূল্য ৪৫৩ কোটি টাকার বেশি।
আখাউড়া বন্দরের ব্যবসায়ী আবু সুফিয়ান বলেন, দু’একটি পণ্য বাদে সব রফতানিযোগ্য পণ্য এক প্রজ্ঞাপনে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রাণ, আরএফএল, হাশিম ফুডসের মতো বড় বড় কোম্পানির পণ্য নিষিদ্ধের আওতায় পড়েছে। ছোট-বড় সব ব্যবসায়ীর রফতানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
সাতীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে রফতানির তুলনায় আমদানি হয় বেশি। প্রতি মাসে সব মিলিয়ে ১৭০ থেকে ১৭৫ ট্রাক তৈরি পোশাক ভারতে যায়। তা ছাড়া ভারতের বিধিনিষেধ আরোপ করা বন্দরগুলোর মধ্যে ভোমরার ওপারে পশ্চিমবঙ্গের ঘোজাডাঙ্গা বন্দরের নাম নেই। এমন পরিস্থিতিতে ভোমরা বন্দরের কার্যক্রম প্রায় স্বাভাবিক আছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও কাস্টমস কর্মকর্তারা। ●
অকা/বাণিজ্য/ফর/রাত/১৮ মে, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 7 months আগে

