Close Menu
অর্থকাগজঅর্থকাগজ
    • ব্যাংক
    • বীমা
    • পুঁজি বাজার
    • নির্বাচিত লেখা
    • আলাপন
    • পরিবেশ
    • আরও
      • আর্থিক খাত
      • আবাসন খাত
      • তৈরি পোশাক শিল্প
      • ওষুধ শিল্প
      • কৃষি শিল্প
      • ই-কমার্স
      • ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প
      • চামড়া শিল্প
      • তথ্য ও প্রযুক্তি
      • পর্যটন
      • বিশেষ প্রতিবেদন
      • বাণিজ্য
      • প্রবাসী আয়
      • পোলট্রি খাত
      • বাজার
      • শিক্ষা খাত
      • শিল্প খাত
      • রাজস্ব
      • মৎস্য খাত
      • শ্রম বাজার
      • স্বাস্থ্য অর্থনীতি
      • হিমায়িত খাদ্য
      • যোগাযোগ
      • পরিবহন খাত
      • নগর দর্পন
      • বিশ্ব অর্থনীতি
      • ভিনদেশ
    Facebook X (Twitter) Instagram YouTube LinkedIn WhatsApp
    অর্থকাগজঅর্থকাগজ
    • ব্যাংক
    • বীমা
    • পুঁজি বাজার
    • নির্বাচিত লেখা
    • আলাপন
    • পরিবেশ
    • আরও
          • আর্থিক খাত
          • ওষুধ শিল্প
          • চামড়া শিল্প
          • বাণিজ্য
          • বাজার
          • মৎস্য খাত
          • যোগাযোগ
          • হিমায়িত খাদ্য
          • বিশেষ প্রতিবেদন
          • তথ্য ও প্রযুক্তি
          • প্রবাসী আয়
          • শিক্ষা খাত
          • কৃষি শিল্প
          • শ্রম বাজার
          • পরিবহন খাত
          • ভিনদেশ
          • রাজস্ব
          • বিশ্ব অর্থনীতি
          • আবাসন খাত
          • ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প
          • ই-কমার্স
          • পর্যটন
          • পোলট্রি খাত
          • শিল্প খাত
          • স্বাস্থ্য অর্থনীতি
          • তৈরি পোশাক শিল্প
          • নগর দর্পন
    বুধবার, ২ পৌষ, ১৪৩২ | ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫
    অর্থকাগজঅর্থকাগজ

    বর্জ্য পরিবেশ দূষণে মারাত্মক ক্ষতি

    জুলাই ১৭, ২০২৪ ৩:০০ অপরাহ্ণUpdated:জুলাই ১৭, ২০২৪ ৩:০০ অপরাহ্ণ37
    শেয়ার
    Facebook Twitter LinkedIn Email WhatsApp Copy Link
    প্রণব মজুমদার ●
    দেশে বর্তমানে প্রতি বছর মাথাপিছু ১৫০ কিলোগ্রাম এবং সর্বমোট ২২.৪ মিলিয়ন টন বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের আশংকা, ২০২৫ সাল নাগাদ মাথাপিছু বর্জ্য সৃষ্টির হার হবে ২২০ কিলোগ্রাম এবং মোট বর্জ্যের পরিমাণ ৪৭ হাজার ৬৪ টনে গিয়ে দাঁড়াবে, যা পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে। বর্জ্য বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। কঠিন, তরল, বায়বীয়। কঠিন বর্জ্যের পরিমাণই বেশি। মানুষের ব্যবহার্য জিনিসপত্র যখন অকেজো অথবা অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে তখন এগুলো কঠিন বর্জ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। উৎস অনুসারে কঠিন বর্জ্য বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। গৃহস্থালি বর্জ্য, শিল্প কারখানার বর্জ্য, শহরাঞ্চলের বর্জ্য, হাসপাতালে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি, বিপজ্জনক বর্জ্য, কৃষি বর্জ্য ও প্লাস্টিক উল্লেখযোগ্য। যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে প্রতিনিয়ত পরিবেশের উপাদান ও বসবাসরত জীবের ক্ষতি হচ্ছে। 
    পরিবেশের প্রধান তিনটি উপাদান হচ্ছে মাটি, পানি ও বায়ু। কঠিন বর্জ্যরে কারণে পরিবেশের এ সব উপাদান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মানুষ যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলে রাখে যার বেশির ভাগই কঠিন বর্জ্য। এগুলো মাটির সঙ্গে মিশে মাটিতে বসবাসরত অণুজীবকে ক্ষতিগ্রস্ত করে মাটির ক্ষারকত্ব হ্রাস-বৃদ্ধি করে এবং কৃষি জমির ক্ষতিসাধন করে এবং এর বন্ধন দুর্বল করে দেয়। আর এই বর্জ্য পদার্থ চুইয়ে গিয়ে ভূগর্ভস্থ পানির ক্ষতিসাধন করে। এ ছাড়া বৃষ্টির সময় এসব বর্জ্য খাল-বিল-নদী-নালার পানির সঙ্গে মিশে গিয়ে পানি দূষণ করে। এতে মানুষ, জলজ প্রাণী রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে বাতাস দূষিত করে। এ ছাড়া মিথেন কার্বন-ডাই-অক্সাইড ইত্যাদিসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর গ্যাস বায়ুতে মিশে বায়ু দূষণ করে। কঠিন বর্জ্যরে সবচেয়ে বড় উৎস হচ্ছে শহরাঞ্চলের বর্জ্য। শহরের বর্জ্যগুলো বাসাবাড়ি, হাসপাতাল, কলকারখানা ইত্যাদি থেকে উৎপন্ন হয়। রান্নাঘরের বর্জ্য থেকে শুরু করে পরিধেয়, প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ, প্লাস্টিক, কাগজ, ব্যাটারিসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর বর্জ্যও উৎপন্ন হয়।
    দেশের অধিকাংশ পৌর এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সেকেলের। রাস্তার পাশে ডাস্টবিনগুলো ময়লা আবর্জনায় উপচানো থাকে। তীব্র দুর্গন্ধ ছড়ায়। পরিবেশ নোংরা হয়ে থাকে। পৌর কর্তৃপক্ষ সেখান থেকে ময়লা সরিয়ে শহরের আশপাশের খাল বা খানাখন্দে ফেলে রাখে। সেখান থেকে নতুন করে আরো বিশদ আকারে জীবাণু ও দুর্গন্ধ ছড়ায়। শহরের কল-কারখানাগুলো থেকে প্রতিনিয়ত বিষাক্ত বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এগুলোর ব্যবস্থাপনা ব্যয়বহুল বলে অনেক প্রতিষ্ঠান এগুলো মুক্তভাবে শহরের খাল-বিল নদী-নালায় ফেলে দেয়। এগুলোর মধ্যে কাপড়ের রঙ, চামড়া শিল্পে উৎপন্ন বর্জ্য, বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, কলকব্জা এসব উল্লেখযোগ্য। সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে উৎপন্ন চামড়ার উচ্ছিষ্ট, ঝিল্লিসহ কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো পদক্ষেপ এখনো সম্পূর্ণরূপে গৃহীত হয়নি। কোরবানির ঈদে এ ধরনের বর্জ্যরে পরিমাণ বেড়েছে। এ ছাড়া কোরবানির পশুর রক্ত, মল, খাবারের উচ্ছিষ্টাংশ যত্রতত্র ফেলে রাখলে পানি বায়ু দূষিত হয়। শহরগুলোতে বর্ষা মৌসুমেও অবকাঠামো নির্মাণের কাজ অধিক হারে চলছে। এ কাজের প্রয়োজনীয় উপাদান ইট, বালু, সিমেন্ট ইত্যাদি রাস্তাঘাটে রেখে রাস্তা বন্ধ করে রাখা হয়। এসব থেকে উৎপন্ন বর্জ্যগুলোর ব্যবস্থাপনার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। দেখা যায়, কাজ শেষে ময়লার ভাগাড়ে এসব ইট, বালু, নুড়ির স্তূপ পড়ে থাকে। এগুলো শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা নষ্ট করে। ফলে শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। কিছুদিন আগে চলতি মৌসুমে পরিস্থিতি ঢাকা ও চট্টগ্রামে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। শহরবাসী সম্মুখীন হয় কৃত্রিম বন্যার। এতে করে মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় কাজ কর্মজীবন ব্যাহত হয়। হাসপাতালগুলোতেও কঠিন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। ব্যবহৃত ওষুধের প্যাকেট, সুচ, সিরিঞ্জ, ছুরি-কাঁচি ইত্যাদি বর্জ্য বিপজ্জনক এবং কিছু ক্ষেত্রে সংক্রামক রোগের বাহকও বটে। তাই এসব বর্জ্য ঢাকনাসহ বাক্সে রেখে আলাদাভাবে ব্যবস্থাপনা করা উচিত। করোনা পরিস্থিতিতে মেডিক্যাল বর্জ্যে নতুন কিছু উপাদান সংযোজিত হয়েছিল যেমন মাস্ক, পিপিই, টেস্ট কিট ইত্যাদি।
    এসব বর্জ্য ব্যবহারের পর যেখানে সেখানে ফেলা উচিত নয়। কারণ এগুলোর দ্বারা সুস্থ মানুষ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তা ছাড়া পিপিই প্লাস্টিক হওয়ায় সহজে নষ্ট হয় না। যথাসম্ভব এগুলো পুড়িয়ে ফেলতে হবে। কিন্তু মানুষ অসচেতনভাবে যেখানে সেখানে এসব বর্জ্য ফেলছে এবং কফ থুথু ফেলে পরিবেশকে দূষিত করে সংক্রমণ বাড়াচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে কৃষি বর্জ্যও কঠিন বর্জ্যরে অন্তর্ভুক্ত। কৃষি জমিতে ব্যবহৃত সার, কীটনাশক এগুলো পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। অধিকহারে পেস্টিসাইড ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। ব্যবহৃত রাসায়নিকের ক্ষতিকর প্রভাব খাদ্য শৃঙ্খলে ঢুকে পড়ছে। কৃষিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন গৃহপালিত পশুর থেকেও কঠিন বর্জ্য সৃষ্টি হয়। একটি গরু দৈনিক প্রায় ১২-১৫ কেজি, ছাগল ও ভেড়া ১.৫-২ কেজি, লেয়ার ১০০-১৫০ গ্রাম, ব্রয়লার ১০০-২০০ গ্রাম বর্জ্য উৎপন্ন করে থাকে। বিভিন্ন রোগ সৃষ্টিকারী অণুজীব ও গ্রিনহাউজ গ্যাস উৎপাদনের উল্লেখযোগ্য মাধ্যম হচ্ছে এই বর্জ্য। এ বর্জ্য থেকে উৎপন্ন দুর্গন্ধ মানুষ ও পশুপাখির বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে যেমনÑ অস্থি সমস্যা,ক্ষুধামন্দা ইত্যাদি। ক্ষতিকর গ্যাসগুলোর মাত্রাতিরিক্ত সেবন মানুষ ও পশুপাখির মৃত্যুর কারণ হতে পারে। বিপুল পরিমাণ গোবর কৃষি জমিতে প্রয়োগ করার ফলে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া ভূগর্ভস্থ পানিতে প্রবেশ করছে, যা পানি দূষণ ও জনগণের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। পশুসম্পদ বর্জ্য থেকে উৎপাদিত মিথেন বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য ১৫ শতাংশ দায়ী। একটি গবাদিপশু বছরে প্রায় ৭০-১২০ কেজি মিথেন নির্গমন করে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে মিথেন, কার্বন-ডাই অক্সাইড থেকে ২৩ গুণ বেশি দায়ী। কঠিন বর্জ্যরে মধ্যে বেশ কিছু বিপজ্জনক বর্জ্য রয়েছে এর মধ্যে ইলেকট্রনিক বর্জ্য ও তেজস্ক্রিয় বর্জ্য প্রধান। এ বর্জ্যগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সায়ানাইড বর্জ্য, অ্যাসবেস্টস, রাসায়নিক, বিভিন্ন ধরনের রঞ্জক, ভারী ধাতু ইত্যাদি। এ ধরনের বর্জ্য উদ্ভিদ ও প্রাণীর জন্য বিষাক্ত, ক্ষয়কারী, বিস্ফোরক হিসেবে অত্যন্ত সক্রিয়। আর্সেনিক ধাতু পানিতে মিশে আর্সেনিকোসিস, ক্যাডমিয়ামের প্রভাবে ইটাই ইটাই রোগ হয়। জাপানের মিনামাতা উপসাগরের কাছে পারদ ব্যবহার করে পারদটি উপসাগরে ফেলে দেয়া হতো যা মাছের টিস্যুতে প্রবেশ করত। সে অঞ্চলের লোকদের মিনামাটা রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি রোগ যেমন হাঁপানি, জন্মগত ত্রুটি, ক্যান্সার, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, শৈশব ক্যান্সার, সিওপিডি, সংক্রামক ব্যাধি, কম জন্মের ওজন এবং প্রাকপ্রসবের মতো রোগের জন্ম দিতে পারে। মাছির দ্বারা পানি এবং খাদ্য দূষণের ফলে আমাশয়, ডায়রিয়া এবং অ্যামিবিক আমাশয় হয়। সংক্রামক রোগ প্লেগ, সালমোনেলোসিস, ট্রাইচিনোসিস, এন্ডেমিক টাইফাস ইত্যাদির মতো রোগ ছড়াতে পারে। শক্ত বর্জ্য দ্বারা ড্রেন ও গলির খাঁজগুলো জলাবদ্ধতার ফলে মশার প্রজননকে সহায়তা করে এবং ম্যালেরিয়া ও ডেংগু রোগ ছড়িয়ে পড়ে। কঠিন বর্জ্য প্লাস্টিক, পলিথিন ইত্যাদি পরিবেশের অনেক ক্ষতিসাধন করে।
    প্লাস্টিক হলো ইথিলিনের পলিমার। সাধারণত এ ধরনের দ্রব্য ভাঙতে প্রকৃতির অনেক সময় লেগে যায় তাই এগুলো সহজে পরিবেশের উপাদানের সঙ্গে মিশে না। সামুদ্রিক এবং উপকূলীয় অঞ্চলের মতো কিছু বাস্তুতন্ত্রগুলো প্লাস্টিক দ্বারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এটি মাছ, সিল, কচ্ছপ, তিমি এবং অন্যান্য অনেক জলজপ্রাণীকে প্রভাবিত করে। সামুদ্রিক প্রাণীগুলো প্লাস্টিকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে এবং অনেক সময় খেয়ে ফেলে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে। কারণ জলজ প্রাণী এটি পরিপাক করতে পারে না। কিছু প্রজাতির পাকস্থলীতে যে পরিমাণ পদার্থ খাওয়া হয় তা ভেঙে ফেলার জন্য উচ্চতর মাত্রা থাকে না। তবে কিছু প্রাণী রয়েছে যারা প্লাস্টিকের টুকরো ১০০ বছর ধরে রাখতে সক্ষম। যখন জীববৈচিত্র্যের কথা আসে আমাদের বর্জ্য সমস্যাটি বিশ্বের প্রজাতির স্বাস্থ্যকে মারাত্মকভাবে জর্জরিত করে। কঠিন বর্জ্য স্যাঁতস্যাঁতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর পরিবেশকল্পরিস্থিতি মারাত্মকভাবে নষ্ট করছে। বিশ্ব পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশেও গত কয়েক দশকে অবনতি দ্রুত গতিতে চলছে। আমরা যেভাবে বর্জ্য নিষ্পত্তি করি তা হতাশাব্যঞ্জক। আমাদের চারপাশের পরিবেশের এ বিপর্যয়ের একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে বায়ু দূষণ। বায়ু দূষণের কারণে বিশ্বে প্রতি বছর ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। পৃথিবীর ৯১ শতাংশ মানুষ এমন জায়গায় বসবাস করে যেখানে বায়ু দূষণের মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে বেশি। বিশ্বজুড়ে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জন দূষিত বায়ু সেবন করে। আমাদের দেশে বায়ু দূষণের বড় কারণ সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব। জলবায়ু পরিবর্তন হয়ে বেড়ে গেছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বাংলাদেশে ২২ শতাংশ মানুষ বাতাসে ভাসমান বস্তুকণা ও ৩০ শতাংশ মানুষ জ্বালানি সংশ্লিষ্ট দূষণের শিকার। প্রকৃতির জীববৈচিত্র্য ও ভারসাম্য রক্ষার্থে এখনি সবাইকে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
    ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এর অনুমান, ২০৫০ সাল নাগাদ সাগরে মাছের চেয়ে প্লাস্টিক বর্জ্য বেশি হতে পারে। বিজ্ঞানীদের গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, সামুদ্রিক মাছ ও জলজ প্রাণী যাদের নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রয়েছে, তারা বছরে প্রায় ১১ হাজার প্লাস্টিক পণ্যের ক্ষুদ্র অংশ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করছে। এসব প্লাস্টিক বর্জ্যরে বেশির ভাগই বিষাক্ত, ক্ষতিকর এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ।
    প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার করার প্রযুক্তি অনেকটুকু এগোলেও কড়া আইনি বাধ্যবাধকতা, সামাজিক সচেতনতার অভাবে অগ্রগতি কম। ২০১০ সালের তথ্য অনুযায়ী, জাপানে প্রায় ৭৭ শতাংশ প্লাস্টিক পণ্য পুনর্ব্যবহার করা সম্ভব হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আইনের কড়াকড়ি প্রয়োগ, জনসচেতনতা ও প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদকদের সামাজিক দায়বদ্ধ সহযোগিতা ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বাড়লে ‘পচনশীল’ প্লাস্টিক তৈরির গবেষণা আরও দ্রুত এগিয়ে নেওয়া যায় এবং তার প্রয়োগ নিশ্চিত করা সম্ভব।
    ই-বর্জ্য হচ্ছে ইলেকট্রনিক বর্জ্য। যেমন-পরিত্যক্ত টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ক্যামেরা, এয়ারকন্ডিশনার, মাইক্রোওভেন, সিএফএল বাল্ব, ওয়াশিং মেশিন, সেলফোন, ডিভিডি প্লেয়ার, ইলেকট্রনিক খেলনা সামগ্রী ইত্যাদি। এসব নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যবহারের পর যখন নষ্ট হয়ে যায়, তখনই এটি বর্জ্যে পরিণত হয়, যা ই-বর্জ্য নামে পরিচিত। সাধারণ দৃষ্টিতে এগুলোকে চিরাচরিত বর্জ্য মনে হলেও আসলে কিন্তু তা নয়। ই-বর্জ্যরে রয়েছে মারাত্মক রেডিয়েশন, যা বিভিন্নভাবে পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক সামগ্রীতে নানা ধরনের উপাদান থাকে। যেমন-ক্যাডমিয়াম, লিডঅক্সাইড, সিসা, কার্বন, সিলিকন, বেরিলিয়াম, ফাইবার গ্লাস, পারদসহ নানা ধাতব উপাদান। ইলেকট্রনিক সামগ্রী নষ্ট হয়ে গেলেও উপাদানগুলো নিঃশেষ হয় না, বর্জ্যরে মধ্যেই থেকে যায়। এগুলো পচনশীল নয় বিধায় পরিবেশের যথেষ্ট ক্ষতি করে। ফলে মাটি, গাছপালা, ফসল ও জীববৈচিত্র্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়ে। এ প্রভাবের কারণে জলবায়ুর পরিবর্তনও ঘটতে থাকে ধীরে ধীরে।
    আমরা দেখতে পাচ্ছি, পুরোনো ইলেকট্রনিক সামগ্রী যখন ভাঙারির দোকানে স্থান পায়, তখন দোকানির প্রয়োজনে এ বর্জ্যগুলোকে রোদের তাপে শুকিয়ে নেওয়া হয়। অথবা অনেকে বর্জ্যগুলোকে দোকানে না রেখে রাস্তার পাশে ফেলে রাখে। আর বিপদ তখনই ঘটতে থাকে। রোদের তাপে ‘ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট’, যেটি আমাদের কাছে ‘আইসি’ নামে পরিচিত, তা থেকে মারাত্মক বিকিরণ নির্গত হতে থাকে। শুধু রোদেই নয়, এটি মাটির নিচে চাপা দিলে কিংবা পানিতে ফেলে দিলেও ক্ষতিকর বিকিরণ নির্গত হতে থাকে। শুধু তা-ই নয়, এক চা-চামচ পরিমাণ পারদ ২০ একরের একটি জলাশয়ের পানি আজীবনের জন্য ব্যবহারের অনুপযোগী করে ফেলতে পারে। আর যত্রতত্র ফেলে রাখার কারণে ই-বর্জ্যরে রেডিয়েশন রিসাইকেলের মাধ্যমে মানবদেহে দ্রুত প্রবেশ করে। এটি মানুষের ত্বক, কিডনি, ফুসফুস, হৃদযন্ত্র, স্নায়ুতন্ত্র, যকৃত, মায়েদের স্তন ও মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি করে।
    বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সমীক্ষায় জানা যায়, দেশে বছরে প্রায় ১০ মিলিয়ন মেট্রিক টন ই-বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে জাহাজ ভাঙা থেকেই উৎপাদন হচ্ছে ৮০ শতাংশ বর্জ্য, বাকি ২০ শতাংশের মধ্যে কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও সেলফোন সেট থেকে বেশি ই-বর্জ্য উৎপাদন হচ্ছে। আমাদের দেশে ই-বর্জ্যরে রিসাইক্লিং ব্যবস্থা না থাকায় এসব বিষফোঁড়ায় পরিণত হচ্ছে। অথচ উন্নত বিশ্বে রিসাইক্লিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও অনেকে কৌশলে দরিদ্র দেশে ই-বর্জ্য পাঠিয়ে দিচ্ছে। তাদের ইলেকট্রনিক পণ্যসামগ্রী একটু নষ্ট হলে কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ হলে সেটি মেরামত না করেই বাড়ির সামনের ডাস্টবিনে ফেলে রাখে। আর সেগুলো দরিদ্র দেশের লোকেরা কুড়িয়ে সামান্য মেরামত করে নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়। অনেক সময় মেরামতেরও প্রয়োজন পড়ে না। যারা এমনটি করছেন, তারা ঘুণাক্ষরেও টের পাচ্ছেন না দেশের মানুষের কী ক্ষতি করছেন তারা। শুধু কুড়িয়ে পাঠানোই নয়, অনেক ক্ষেত্রে কম্পিউটার কিংবা অন্যান্য ইলেট্রনিক সামগ্রীর খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি করা হচ্ছে, যা থাকে মেয়াদোত্তীর্ণ। অথচ সেসব পণ্যসামগ্রী আমাদের দেশে দিব্যি ব্যবহৃত হচ্ছে। এর প্রভাবে ধীরে ধীরে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে, জলবায়ুরও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে, যা আমরা তাৎক্ষণিকভাবে টের পাচ্ছি না। ই-বর্জ্যরে দূষণ অনেকটা মোবাইল ফোন টাওয়ার থেকে নির্গত অদৃশ্য দূষণের মতো। অর্থাৎ ক্ষতি হচ্ছে, কিন্তু কারণ নিরূপণ করা যাচ্ছে না। ফলে ই-বর্জ্যরে রেডিয়েশনে আমরা মারাত্মক রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হলেও সেটি চাপা থেকে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে চিকিৎসকরাও আমাদের সতর্ক করতে পারছেন না। কারণ তারা রোগ শনাক্ত করতে সক্ষম হলেও রোগের উৎপত্তি ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। ফলে ওই রোগী কিছুটা সুস্থ হলেও পরিবেশ বিনষ্ট ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধ হচ্ছে না। পাশাপাশি অন্য কেউ রোগাক্রাস্ত হচ্ছেন, যা স্বাভাবিক প্রক্রিয়াই মনে করছেন অনেকেই।
    বিষয়টি নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে দ্রুত। ই-বর্জ্যের রেডিয়েশন-দূষণ থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের খুব দ্রুত রিসাইক্লিং কারখানা গড়ে তুলতে হবে- যে কারখানায় ই-বর্জ্য প্রসেস করে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী যন্ত্রাংশ তৈরি করা যাবে।
    ই-বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার, ধ্বংস ও পরিবেশে মিশে যাচ্ছে কী পরিমাণে, তার সুনির্দিষ্ট হালনাগাদ কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে ২০১৮ সালে পরিবেশ অধিদপ্তর একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছিল। এতে বলা হয়েছিল, ওই বছর দেশে চার লাখ টন বৈদ্যুতিক ও অবৈদ্যুতিক বর্জ্য জমেছে। এর মধ্যে মাত্র ৩ শতাংশ রিসাইক্লিং শিল্পে ব্যবহার করা হয়। বাকি ৯৭ শতাংশ বর্জ্যের ভাগাড়ে ঠাঁই হয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশে প্রতি বছর ২০ শতাংশ হারে ই-বর্জ্য বাড়ছে। ২০৩৫ সাল নাগাদ এই ই-বর্জ্য বছরে ৪৬ লাখ টনে পৌঁছবে। ●
    অকা/পরিবেশ/বিপ্র/রাত, ১৭ জুলাই, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ
    লেখক কথাসাহিত্যিক, কবি ও অর্থকাগজ সম্পাদক
    reporterpranab@gmail.com
     
     

    সর্বশেষ হালনাগাদ 1 year আগে

    ই-বর্জ্য জলবায়ু পলিথিন প্লাস্টিক বর্জ্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

    এই বিষয়ে আরও সংবাদ

    লোকসান ও সংকটে শেয়ার বাজারে ৫৭ কোম্পানির শূন্য ডিভিডেন্ড

    পুঁজি বাজারে গতি ফেরাতে ১৩ হাজার কোটি টাকার তহবিল ও কাঠামোগত সংস্কারের সুপারিশ

    আমানতকারীর আস্থা ফেরাতে চড়া মুনাফা ও বীমা ফেরতের পথে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক

    খেলাপি ঋণের লাগামহীন উল্লম্ফনে বৈশ্বিক ঝুঁকিতে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত

    কর কাঠামোর বৈষম্য, গ্রে মার্কেটের দাপট এবং বাজারের অদক্ষতা
    বাংলাদেশে স্মার্টফোনের অস্বাভাবিক দাম

    কৃত্রিম মুনাফায় বোনাস বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর বিধিনিষেধ

    Leave A Reply Cancel Reply

    সাম্প্রতিক সংবাদ

    লোকসান ও সংকটে শেয়ার বাজারে ৫৭ কোম্পানির শূন্য ডিভিডেন্ড

    রমজানকেন্দ্রিক আমদানি চাপে বাণিজ্য ঘাটতি ৭.৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাল

    ইইউ ও উদীয়মান বাজারে দুর্বলতায় চাপ বাড়ছে পোশাক রফতানিতে

    পুঁজি বাজারে গতি ফেরাতে ১৩ হাজার কোটি টাকার তহবিল ও কাঠামোগত সংস্কারের সুপারিশ

    সিন্ডিকেটের কারসাজিতে পেঁয়াজের বাজারে অস্বস্তি

    আমানতকারীর আস্থা ফেরাতে চড়া মুনাফা ও বীমা ফেরতের পথে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক

    অর্থনৈতিক চাপ ও অর্থায়ন সংকটে দিশাহারা দেশের এসএমই খাত

    খেলাপি ঋণের লাগামহীন উল্লম্ফনে বৈশ্বিক ঝুঁকিতে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত

    কর কাঠামোর বৈষম্য, গ্রে মার্কেটের দাপট এবং বাজারের অদক্ষতা
    বাংলাদেশে স্মার্টফোনের অস্বাভাবিক দাম

    পুঁজি বাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ-রসায়ন খাতে মিশ্র চিত্র

    কৃত্রিম মুনাফায় বোনাস বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর বিধিনিষেধ

    সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকে আমানত ফেরত – ধাপে উত্তোলন স্কিম চূড়ান্ত

    চাহিদা কমায় বাজারে মন্থরতার ছায়া
    নিলামে ডলার কেনায় স্থিতিশীলতা

    অনলাইন ভ্যাট রিফান্ডে স্থবিরতা

    নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি আবারও ঊর্ধ্বমুখী

    রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও এনবিএফআই সংকটে শেয়ার বাজারে টানা দরপতন

    জামানতহীন ঋণ বন্ধে আইএমএফের চাপ

    শেয়ার বাজারে দীর্ঘমেয়াদি মন্দা

    খেলাপি ঋণ সংকটে আংশিক অবলোপন নীতি

    চার মাসের ধারাবাহিক পতনে উদ্বেগ বাড়ছে
    রফতানি আয় টানা চাপে

    সম্পাদক প্রণব কুমার মজুমদার

    সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় - ৬২/১, পুরানা পল্টন (দোতলা), দৈনিক বাংলার মোড়, পল্টন, ঢাকা, বাংলাদেশ।

    বিটিসিএল ফোন +৮৮০২৪১০৫১৪৫০ +৮৮০২৪১০৫১৪৫১ +৮৮০১৫৫২৫৪১৬১৯ (বিকাশ) +৮৮০১৭১৩১৮০০৫৩

    ইমেইল - arthakagaj@gmail.com

    Editor PRANAB K. MAJUMDER
    Editorial & Commercial Office - 62/1, Purana Paltan (1st Floor), Dainik Bangla Crossing, Paltan, Dhaka, Bangladesh.
    BTCL Phone +880241051450 +880241051451 +8801552541619 (bkash) +8801713180053
    Email - arthakagaj@gmail.com

    ২০২৪
    অর্থকাগজ
    | আমাদের বৃত্তান্ত | গোপনীয়তা নীতি | শর্তাবলি ও নীতিমালা | প্রচার | বিজ্ঞাপন | বিজ্ঞপ্তি | যোগাযোগ

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.