অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
গত সপ্তাহের শুরুতে দেশের দুই পুঁজি বাজারে বিক্রয়চাপ ব্যাপক আকার ধারণ করলেও শেষদিকে এসে নেতিবাচক প্রবণতা কিছুটা কাটিয়ে ওঠে। এ সময় বাজারগুলোর সূচক ও লেনদেনের উন্নতি ঘটতে দেখা যায়। কিন্তু ২৮ সেপ্টেম্বর নতুন সপ্তাহের শুরুতে বিক্রয়চাপ অস্থির করে তোলে বাজারগুলোকে। দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দুই পুঁজি বাজারেই সূচকগুলো ছিল ওঠানামার মধ্যে এবং দিনশেষে দুই বাজারেই সব সূচকের বড় ধরনের অবনতি ঘটে। একই সাথে হ্রাস পায় লেনদেনও।
দেশের প্রধান পুঁজি বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৮ সেপ্টেম্বর ৩৫ দশমিক ০৫ পয়েন্ট অবনতির শিকার হয়। ৫ হাজার ৪১৫ দশমিক ১৩ পয়েন্ট থেকে লেনদেন শুরু করা সূচকটি ২৮ সেপ্টেম্বর দিনশেষে নেমে আসে ৫ হাজর ৩৮০ দশমিক ০৭ পয়েন্টে। এ সময় ডিএসইর দুই বিশেষায়িত সূচক ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহর অবনতি ঘটে যথাক্রমে ১৭ দশমিক ০৯ ও ৬ দশমিক ৭১ পয়েন্ট। দেশের দ্বিতীয় পুঁজি বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই এ দিন ৬৫ দশমিক ১৩ পয়েন্ট হারায়। ১৫ হাজার ৮৮ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট থেকে সূচকটি স্থির হয় ১৫ হাজার ২৩ দশমিক ৫১ পয়েন্টে। একই সময় বাজারটির দুই বিশেষায়িত সূচক সিএসই-৩০ ও সিএসসিএক্স সূচক হারায় যথাক্রমে ৫৬ দশমিক ৯০ ও ৩৬ দশমিক ৪৬ পয়েন্ট।
সপ্তাহের শুরুতে সূচকের এ আচরণ বিনিয়োগকারীদের হতাশ করে। আবার হাত গুটিয়ে নেন তারা। এতে হ্রাস পায় লেনদেন। ঢাকা শেয়ার বাজার ৫৬৪ কোটি টকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে যা আগের দিন অপেক্ষা ১৪৪ কোটি টাকা কম। ২৫ সেপ্টেম্বর ডিএসইর লেনদেন ছিল ৭০৮ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম শেয়ার বাজারের লেনদেন নেমে আসে ২১ কোটি টাকা থেকে ১৩ কোটি টাকায়।
এ দিকে পুঁজি বাজারের স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ ঘোষণার সময় এলে বাজার আচরণে বরাবরই ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যায়। তালিকাভুক্ত কিছু কিছু কোম্পানি ইতোমধ্যেই বিগত অর্থ বছরের লভ্যাংশ ঘোষণা করতে শুরু করেছে যার বেশির ভাগই আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ভালো। কিন্তু তা সংশ্লিষ্ট কোম্পানি ছাড়া অন্যগুলোকে প্রভাবিত করতে পারছে না। যেমন ওয়ালটন হাইটেক হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ সম্প্রতি ১৭৫ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণার পরও কোম্পানিটির শেয়ারদর হ্রাস পায়। একইভাবে ইস্টার্ন হাউজিং ও এনভয় টেক্সটাইলের মতো কোম্পানি গতবারের চাইতে ভালো লভ্যাংশ ঘোষণা করার পর দরপতন থামাতে পারেনি। ২৮ সেপ্টেম্বর এপেক্স গ্রুপের কোম্পানি এপেক্স ফুট ওয়্যার নগদ ও বোনাস মিলে ৫০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করলে তার কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়ে একই গ্রুপের আরো দু’টি কোম্পানির শেয়ারদরে। গত বছর কোম্পানিটি নগদ ও বোনাস মিলিয়ে ৪৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিলেও এবার লভ্যাংশ নগদ ও বোনাস মিলিয়ে ৫০ শতাংশ।
সাধারণত পুঁজি বাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকেন। তারা নিজেদের সক্ষমতা ব্যবহার করে ভালো কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগের মাধ্যমে লভ্যাংশ আয়কে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। অপর দিকে সাধারণ তথা ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের বেশির ভাগেরই লক্ষ্য থাকে ক্যাপিটাল গেইন বা পুঁজি বৃদ্ধি। সচরাচর লভ্যাংশ ঘোষণার সময় হলে কোম্পানিগুলোর শেয়ারদরের মূল্যস্তরে যে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে তা থেকেই তারা মুনাফা তুলে নিয়ে পুঁজি বৃদ্ধি করেন। তাই অনেক ক্ষেত্রে লভ্যাংশ ঘোষণা তাদের বিনিয়োগকে প্রভাবিত করে না।
২৮ সেপ্টেম্বরও ঢাকা শেয়ার বাজারে লেনদেনের শীর্ষে ছিল সামিট অ্যালাইয়েন্স পোর্ট। এর আগে ২৫ সেপ্টেম্বরও কোম্পানিটিই লেনদেনের শীর্ষে ছিল । ২৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকায় কোম্পানিটির ৫৯ লাখ ৬৫ হাজার শেয়ার হতবদল হয় ২৮ সেপ্টেম্বর। ২০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় ৩ লাখ ৯৭ হাজার শেয়ার বেচাকেনা করে ওরিয়ন ইনফিউশন উঠে আসে এ তালিকার দ্বিতীয় স্থানে। ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষ দশ কোম্পানির অন্যগুলো ছিল যথাক্রমে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার, ফার ইস্ট নিটিং অ্যান্ড ডাইং, এনভয় টেক্সটাইলস, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সিভিও পেট্রো সিনথেটিকস ও আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ।
এ দিকে, যে পাঁচটি ইসলামী ব্যাংককে একীভূত করার কথা হচ্ছে সেগুলো ব্যাপক দরপতনের শিকার হলেও দু’দিন থেকে আবার এদের মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে। ২৮ সেপ্টেম্বর ডিএসইর মূল্যবৃদ্ধির তালিকার শীর্ষ কোম্পানি ছিল এ ব্যাংকগুলোর একটি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। এ দিন ১০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি ঘটে কোম্পানিটির। ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি পাওয়া অ্যাপেক্স স্পিনিং ছিল এ তালিকার দ্বিতীয়। ডিএসইর মূল্যবৃদ্ধিতে শীর্ষ দশে ছিল যথাক্রমে এক্সিম ব্যাংক, স্যোশাল ইসলামী ব্যাংক, অ্যাপেক্স ফুড, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, দেশ গার্মেন্টস, রহিম টেক্সটাইলস, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার ও জিকিউ বলপেন ইন্ডাস্ট্রিজ।
দিনের দরপতনের শীর্ষে ছিল স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকস। কোম্পানিটির ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ দরপতন ঘটে ২৮ সেপ্টেম্বর। সম্প্রতি ডিএসই কর্তৃপক্ষ উৎপাদন বন্ধ থাকা ৩০টি কোম্পানির তালিকা প্রকাশ করলেও তালিকায় থাকা এ কোম্পানিটি প্রায় প্রতিদিনই কমবেশি দর হারাচ্ছে। ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ দর হারিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিল তথ্য প্রযুক্তি খাতের ইনটেক অনলাইন। ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ দর হারায় কোম্পানিটি। এ ছাড়া ডিএসইর দরপতনে শীর্ষ দশে ছিল যথাক্রমে মিথুন নিটিং, সিএপিএম বিডিবিএল, ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, নর্দার্ন ইন্স্যুরেন্স, জাহিন টেক্সটাইলস, এটলাস বাংলাদেশ, ইনফরমেশন সিস্টেমস নেটওয়ার্ক, আইসিবি এএমসিএল সেকেন্ড মিউচুয়াল ফান্ড ও সিলভা ফার্মা। ●
অকা/পুঁবা/ফর/বিকাল/২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 4 days আগে