অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ৩৫ শতাংশ শুল্ক চূড়ান্ত নয় বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, ওয়ান টু ওয়ান নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে এটি ঠিক হবে। এ লক্ষে ৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দফতরের (ইউএসটিআর) কর্মকর্তাদের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রতিনিধিদের বৈঠক হবে।
অন্য দিকে বাণিজ্য সচিব মাহবুুবুর রহমান বলেছেন, খাদ্য পণ্য ও অস্ত্র কেনায় যুক্তরাষ্ট্রকে প্রাধান্য দেয়া হবে। সরকারি খাতে ফুড ড্রিংস কেনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রাধান্য থাকবে।
৮ জুলাই সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তারা পৃথক পৃথকভাবে এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ওখানে আমাদের বাণিজ্য উপদেষ্টা আছেন। উনি তিন দিন আগে গেছেন। আজকেই কমার্স টিম যাচ্ছে। ৮ তারিখে মিটিং। ওদের ৮ তারিখ মানে কালকে খুব ভোরবেলা। মিটিংয়ের পর আমরা বুঝতে পারব। কারণ যেটা দিয়েছে, সেটা ঠিক অফিসিয়াল। ইউএসটিআরের সাথে বাণিজ্য উপদেষ্টা আলাপ করবেন। এর আগের দিন কথা বলেছেন। কালকের পর আপনারা বুঝতে পারবেন।
মিটিংয়ে কি কোনো উন্নতি হওয়ার আশা করা যায়? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সালেহউদ্দিন বলেন, আমরা আশা করি। সেটার পরিপ্রেেিত অন্য পদপেগুলো নেবো। এখন বৈঠকটা মোটামুটি পজিটিভ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তো ইতোমধ্যে চিঠি ইস্যু করেছেন- এখন কী হবে, সাংবাদিকদের এ কথার জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, প্রেসিডেন্ট দিয়েছেন। এটা ওয়ান টু ওয়ান যখন নেগোসিয়েশনে ঠিক হবে। চিঠি তো বহু আগে দিয়ে দিত, ৩৫ শতাংশ। এটি আবার ১৪টি দেশের জন্য বলছে একই। কিন্তু ওয়ান টু ওয়ান নেগোসিয়েশন হবে, সে জন্যই তো ইউএসটিআরের সাথে কথা বলা। এটি ফাইনাল নয়।
ভিয়েতনাম চেষ্টা করে ২৬ শতাংশ কমিয়েছে, বাংলাদেশের কেন মাত্র ২ শতাংশ কমানো হলো। তার মানে কি নেগোসিয়েশন ভালো হয়নি? সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এটি ঠিক যে আমাদের ডেফিসিট মাত্র পাঁচ বিলিয়ন ডলার। ভিয়েতনামের ১২৫ বিলিয়ন ডলার। ওখানে কিন্তু ওরা কনসেশন দিতে পারে, মানে রাজি হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি যে, আমাদের এত কম ডেফিসিট, এত শুল্ক দেয়ার তো জাস্টিফিকেশন থাকে না। তিনি বলেন, ওরা ব্ল্যাঙ্কেট কতগুলো করেছে। চায়নার জন্য আলাদা। একেবারে চায়নার একটা সিঙ্গেল হ্যান্ডেলে ডিল করে ওরা। আর বাকিরা এটি যেটা করেছে ১৪টা দেশের একই বলেছে। এখন আমরা নেগোসিয়েট করব।
চিঠিতে যেসব কন্ডিশন দেয়া হয়েছে এগুলো কি ফুলফিল করা সম্ভব? সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এখন তো আমি কিছু বলতে পারব না।
এ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কমানোর লক্ষে সরকারি খাতে ফুড ড্রিংক কেনার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রাধান্য দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান। সেই সাথে বোয়িং বিমান এবং মিলিটারি ইকুইপমেন্ট কেনার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে গুরুত্ব দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
৮ জুলাই সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নর জবাবে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নতুন করে একটি চিঠি দিয়েছেন। যেখানে বাংলাদেশের ওপর ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু সেটির কার্যকারিতা দেয়া হয়েছে ১ আগস্ট থেকে। ওই চিঠিতে যা বলা হয়েছে তাই। এর সাথে তারা আগের যে ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্টের খসড়া পাঠিয়েছিল তার ওপরে আমাদের রেসপন্স আমরা পাঠিয়েছি এবং সেটার ওপরে আমাদের কয়েক দফা মিটিং হয়েছে।
আর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দেখুন, তারা তো একটি চিঠি দিয়ে আরোপ করলো। আরোপ করার পরেই তারা তাদের প্রস্তাব পাঠাল। নতুন করে আপনার আগের এগ্রিমেন্টের একটা এক্সটেনশন বলতে পারেন। তো সেটার ওপরে যেহেতু আলোচনা হবে, কাজেই কিছু একটা আউটকাম তো আমরা আশা করি সব সময়ের জন্যই।
আপনাদের যুক্তিগুলো কী কী থাকবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রথমত শুল্ক কমানো এবং দ্বিতীয়ত হলো যে, আমাদের ট্রেড রিলেটেড আরো যেসব ইস্যু আছে সেগুলোর কারণে আমরা যাতে অসুবিধাজনক পরিস্থিতিতে না পড়ি। মোদ্দাকথা হলো যে, বাংলাদেশের জন্য আমাদের প্রধান বিবেচ্য বাণিজ্য স্বার্থ সংরণ করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের যে এক্সিস্টিং বাণিজ্য আছে সেই বাণিজ্য রা করা। আর আমাদের কাছে তারা কিছু চেয়েছে, সেটি হলো শুল্ক কমানো। পর্যায়ক্রমে শুল্ক, ভ্যাট, স্যাপ্লিমেন্টারি ডিউটি, রেগুলেটরি ডিউটি এগুলো যেন আমরা কমাই। সে ধরনের প্রস্তাব তারা করেছে। আমরা সেটি এনবিআরের সাথে কনসালটেশন করার পরে, সরকারের অন্যান্য অংশের সাথে কনসাল্ট করে সে ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেবো।
ট্রাম্পের দেয়া চিঠির ব্যাপারে তিনি বলেন, এই চিঠিতে যা যা উল্লেখ করেছে, মানে আজকে যে ডকুমেন্ট পেয়েছি তাতে যা ছাড় চেয়েছে তারা, সেগুলো আমরা অবশ্য আগেই প্রমিস করেছি এবং সেগুলোর ওপর এমনিতেও ডিউটি খুব কম। যেমন হুইট, সয়াবিন, এয়ারক্রাফট, অন্যান্য মেশিনারি এগুলোর ওপর এমনিতেই ডিউটি রেট খুব কম। সেক্ষেত্রে আমাদের ছাড় দেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের ইউএস ট্রেন্ডটা বাংলাদেশে বাড়ানো দরকার। সেটা না বাড়ালে তো আসলে তারা আমাদের কোনো ধরনের ছাড় দেবে না। কাজেই আমরা আলাপ-আলোচনা করে কিছু ছাড় তো দিতে সম্মত হতেই হবে।
কিভাবে কোন কোন ক্ষেত্রে ট্রেড বাড়ানো হবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ট্রেড বাড়ানোর জন্য তারা যদি কিছু শুল্ক ছাড় দেয়, তা হলে স্বাভাবিকভাবে ট্রেড যেটা ব্যবসায়ীরা করে থাকেন ওটা তারা সিদ্ধান্ত দেবেন। কিন্তু সরকারি ট্রেড বাড়ানোর জন্য আমরা যেগুলো ফ্যাসিলিটিজ করব। যেমন আপনারা জানেন যে, আমাদের বিমান বহরের প্রায় সব এয়ারক্রাফট বোয়িং। আমাদের বিমানের ইনফ্রাস্ট্রাকচার যা আছে সেটাও বোয়িং। কাজেই বোয়িং ফাইট কেনার জন্য আমাদের কিছু আদেশ দেয়ার কথা রয়েছে শিগগির। আমরা সেভাবে নেগোসিয়েশন করেছি বোয়িংয়ের সাথে। এ ছাড়া তুলা আমদানিকে আমরা প্রমোট করব। আপনারা জানেন যে তুলার ওপর এমনিতেই শূন্য শুল্ক। কিন্তু সেখানে আমেরিকান তুলা আমদানি যাতে বেশি হয় সে জন্য আমরা কিছু ফ্যাসিলিটি এখানে তৈরি করে দেবো।
সচিব বলেন, সরকারি খাতে যেসব ফুড ড্রিংক কেনা হয় সে েেত্র আমরা আমেরিকাকে একটু প্রাধান্য দেবো। এভাবে আমরা আসলে আমেরিকান ট্রেডটা বাড়াব। আর আপনারা জানেন যে আমাদের মিলিটারি ইকুইপমেন্টের একটা বড় অংশ আসে আমেরিকা থেকে। সেসব বিষয়ও আমাদের বিবেচনায় রয়েছে।
মিলিটারি ইকুইপমেন্ট বলতে কী ধরনের অস্ত্র বোঝাচ্ছেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা আমাদের মিলিটারি হার্ডওয়্যার বলতে যেটা বোঝায়, সেটি হলো আমাদের ভেহিকেলগুলো, আর্মার্ড ভেহিকেল অ্যান্ড আদারস। আমাদের যা যা সংগ্রহ করা হয়, এর বেশির ভাগ আমেরিকা থেকে করা হয়। ওখানে তাদের দিক থেকে কোনো চাপ নেই। তারা বলেছে যে যখন কেনা হবে, আমরা যেন তাদের গুরুত্ব দেই। অন্যান্য মেশিনারিজের েেত্রও সে কথা তারা বলেছে। আমাদেরও তাতে সম্মত হতে অসুবিধা নেই।
তুলার ওপর এআইটি নিয়ে করা এক প্রশ্নের উত্তরে সচিব বলেন, আমাদের তুলার ওপর ২ শতাংশ এআইটি ইম্পোজ করা, এটি এই বছরে একদম নতুন না। এটি নিয়ে আলোচনা চলছে। আমাদের তুলা খাতের, বিশেষ করে টেক্সটাইল খাতের যারা অংশীজন তারা সরকারের সাথে আলোচনা করছেন। সেেেত্র সিদ্ধান্ত কিছু একটি আসবে। কিন্তু বাইলেটারাল ট্রেডের ক্ষেত্রে এটির তেমন কোনো সম্পর্ক নেই।
ভিয়েতনাম আলোচনার মাধ্যমে ২৬ শতাংশ শুল্ক কমিয়েছে। সেখানে আলোচনায় বাংলাদেশের খুব বেশি তৎপরতা দেখা যায়নি। সাংবাদিকের প থেকে এমন কথা বলা হলে তিনি বলেন, তৎপরতায় পার্থক্য আছে, এটি আমরা মনে করি না। কারণ হলো যে আপনারা এটি জানেন কি না, যে দিন থেকে পাল্টা শুল্ক ইমপোজ হয়েছে, তার পরে আমাদের প্রধান উপদেষ্টার চিঠি দেয়া, আমাদের বাণিজ্য উপদেষ্টা চিঠি দিয়েছেন, আমি দিয়েছি। আমরা প্রায় পাঁচ দফা মিটিং করেছি, অনলাইনে ও অফলাইনে। এরপর আমরা যে ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্টের খসড়া পাঠিয়েছে সেগুলোর ওপর তিন দফা, গত দিন মিলে চার দফায় আমরা সেই খসড়ার ওপরে অ্যামেন্ডমেন্ট পাঠিয়েছি, সেগুলোর ওপরে নেগোসিয়েশন করেছি। এ ছাড়া ইমেইল যোগাযোগ বা টেলিফোন যোগাযোগে এগুলো চলছে। কাজেই আমরা একদম ফুলটাইম এনগেজড ছিলাম ২ এপ্রিল থেকে। আমরা এনগেজড না বা তৎপর কম এটি কোনোভাবেই বলা যাবে না।
৮ জুলাই যে ৩৫ শতাংশের চিঠিটা হবে এটি আমরা আশা করিনি উল্লেখ করে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, কারণ আমাদের এই সপ্তাহে যে ৮, ৯, ১০, ১১, ১২ তারিখের মিটিংগুলো নির্ধারিত ছিল সেসব মিটিংয়ে এই চিঠিটা সম্পর্কে আমরা কিছু জানতাম না।
নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে শুল্ক কমাতে না পারলে আমাদের আমদানি-রফতানির ওপর চাপ পড়বে কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে সচিব বলেন, প্রেশার যাতে না হয় সে জন্য আমরা যাচ্ছি আলোচনা করতে। আশা করছি কিছু ভালো কিছুই পাব। ●
অকা/বাণিজ্য/ফর/রাত/৮ জুলাই, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 5 months আগে

