অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
দেশের শেয়ার বাজার টানা কয়েক মাস ধরে নিম্নমুখী প্রবণতার মধ্যে থাকায় বিনিয়োগকারীরা গভীর ক্ষতির বোঝা বইছেন। বছরের অধিকাংশ সময় জুড়ে লেনদেন স্থবির, বিনিয়োগ অনীহা প্রবল, আর অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদাম দীর্ঘদিন ধরেই অবমূল্যায়িত। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক মূল্য–আয় অনুপাত (পিই) ৯–এর নিচে নেমে এসেছে—যা সাম্প্রতিক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
পিই সাধারণত বাজারের ঝুঁকি মূল্যায়নের একটি অন্যতম সূচক। আন্তর্জাতিকভাবে ১০–১৫ এর মধ্যে পিইকে তুলনামূলক ‘ঝুঁকিমুক্ত’ ধরা হয়। কোনো কোম্পানির পিই ১০-এর নিচে নেমে এলে সেটিকে বিনিয়োগযোগ্য বা অবমূল্যায়িত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই মানদণ্ডে বর্তমান বাজারের পিই ৯-এর নিচে থাকায় অনেক বিশ্লেষক এখন এটিকে ‘বিনিয়োগবান্ধব’ অবস্থান হিসেবে দেখছেন।
তবে সার্বিক বাজার অবমূল্যায়িত হলেও সব খাত একই অবস্থায় নেই। উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে চামড়া ও সিরামিক খাত—যেখানে পিই ৬০-এর ওপরে। এই ধরনের পিই সাধারণত অতিমূল্যায়িত বা বুদ্বুদসদৃশ অবস্থার ইঙ্গিত দেয়।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘদিনের অনিশ্চয়তা, তারল্য সংকট ও নেতিবাচক সেন্টিমেন্ট মিলিয়ে শেয়ার বাজারে ‘নীরব রক্তক্ষরণ’ চলছে। টানা পতনের কারণে বহু বিনিয়োগকারীর পুঁজি ৬০ শতাংশের বেশি গলেছে। ক্ষতির চাপে অনেকেই শেয়ার বিক্রি করতে পারছেন না, ফলে লেনদেনে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে—যা আবার বাজারকে আরও দুর্বল করে তুলছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান বাজারপ্রবণতা এক ধরনের ‘ডিসকাউন্ট জোন’। সঠিক তথ্য পর্যালোচনা করে শক্তিশালী ভিত্তির কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে ভালো রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে খাতভেদে পরিস্থিতি ভিন্ন—তাই বাছাই এখানে মূল বিষয়।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসইর সার্বিক পিই বর্তমানে ৮.৭০ পয়েন্ট। এর চেয়েও কম পিই রয়েছে তিনটি খাতে—মিউচুয়াল ফান্ড, জ্বালানি এবং ব্যাংক। এছাড়া ওষুধ ও আর্থিক খাতের পিইও ১০-এর নিচে, যা তুলনামূলক নিরাপদ অঞ্চলে ইঙ্গিত করে।
অন্যদিকে সিরামিক খাতের পিই ৮১.৯৭ এবং চামড়া খাতে ৬০.৪৪—যা বিনিয়োগ ঝুঁকির অত্যন্ত উচ্চ মাত্রা নির্দেশ করে। পাট, কাগজ ও মুদ্রণ খাতের পিইও তুলনামূলক বেশি।
প্রকৌশল, বস্ত্র, সেবা, সিমেন্ট, বিমা, টেলিকম, ভ্রমণ, আইটি, বিবিধ, খাদ্য—এসব খাতের পিই ১০ থেকে ২০-এর মধ্যে অবস্থান করছে, যা তুলনামূলক স্থিতিশীলতা নির্দেশ করে।
ডিএসইর এক সদস্য বলেন, সার্বিক পিই ৯–এর নিচে থাকা মানেই বাজার এখন অতিমাত্রায় সস্তা। তবে যেখানে দুই খাতের পিই ৬০–এর ওপরে, সেখানে সতর্কতা অপরিহার্য। একই খাতের সব কোম্পানি ঝুঁকিপূর্ণ হয় না, বরং নির্দিষ্ট কোম্পানির পিই ও আর্থিক গঠন দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
ডিএসই পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, পিই ঝুঁকি মূল্যায়নের গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড হলেও বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের আগে কোম্পানির আর্থিক স্বাস্থ্য, মালিকানা কাঠামো, পরিচালনা পর্ষদের মান ও অতীত রেকর্ড ভালোভাবে যাচাই করা জরুরি। তার মতে, দীর্ঘমেয়াদি মন্দার কারণে অনেক শেয়ার এখন যথেষ্ট কম দামে লেনদেন হচ্ছে। সঠিক কোম্পানি বেছে নিতে পারলে বর্তমান বাজারে ভালো রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
সারকথা—বাজার দুর্বল, মনোভাব নেতিবাচক, বিনিয়োগকারীর ক্ষতি গভীর—তবুও শেয়ার বাজার এখন ‘সস্তা’। তথ্যভিত্তিক বাছাই করতে পারলে এটি কৌশলগত বিনিয়োগের জন্য একটি অনুকূল সময়। ●
অকা/পুঁবা/ই/সকাল/৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 10 hours আগে

