অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল—এই চার মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলারে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৬ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, এক বছরে প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ। ইউরোপের পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাটের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এই চিত্র উঠে এসেছে।
এই প্রবৃদ্ধির প্রধান চালিকাশক্তি ছিল রফতানির পরিমাণ বৃদ্ধি, যা হয়েছে ১৯ দশমিক ৭১ শতাংশ। পাশাপাশি গড়ে ইউনিট মূল্যে ৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এসেছে, যা আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে বাংলাদেশের সক্ষমতা ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যেও রফতানি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে—চীন, ভারত, পাকিস্তান ও কম্বোডিয়া উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।
ইউরোস্ট্যাটের তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের প্রথম চার মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মোট বৈশ্বিক পোশাক আমদানি ১৪ দশমিক ২১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলারে। এই সময় আমদানির পরিমাণ বেড়েছে ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ, তবে ইউনিট মূল্য গড়ে ১ দশমিক ৪১ শতাংশ কমেছে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ইউনিট মূল্যেও ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হওয়ায় এটি একটি ব্যতিক্রমী সাফল্য।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, “ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান ক্রমাগত শক্তিশালী হচ্ছে। বিশেষ করে, এমন একটি সময়ে যখন গড়ে ইউনিট মূল্য অন্যান্য দেশগুলোর জন্য কমছে, সেখানে বাংলাদেশ উল্টো প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছে—এটি আমাদের সক্ষমতা এবং পণ্যের গুণগত মানের প্রতিফলন।”
তিনি আরও বলেন, “তবে আমাদের সামনে এখনো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। চীন এখনো ইউরোপীয় বাজারে এক নম্বরে আছে এবং ভিয়েতনামও ভালো করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা—ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের ফলে বিশ্ববাণিজ্যে চাপ সৃষ্টি হচ্ছে, পরিবহন খরচ বেড়েছে এবং অর্ডার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে।”
রুবেল আশঙ্কা প্রকাশ করে জানান, “ইইউ'র আসন্ন পরিবেশগত ও সামাজিক মানসম্পন্ন উৎপাদন নিশ্চিতকরণ সংক্রান্ত নতুন বিধিনিষেধ রফতানিকারকদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। এসব আইন বাস্তবায়িত হলে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে এবং ছোট ও মাঝারি কারখানাগুলোর জন্য তা টিকে থাকা কঠিন করে তুলবে।”
তার মতে, আগামী দিনগুলোতে রফতানি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও পরিবেশবান্ধব উৎপাদন প্রক্রিয়ায় রূপান্তর করতে হবে। একই সঙ্গে দক্ষ জনবল গড়ে তোলা, প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো এবং ইউরোপের নতুন মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে প্রস্তুত হতে হবে। “২০২৫ সাল এবং তার পরবর্তী সময়ে যদি আমরা সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি, তাহলে অর্ডার বৃদ্ধির যে সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, তা পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব হবে,”—উল্লেখ করেন পোশাক খাতের এই ব্যবসায়ী নেতা।
বর্তমানে ইইউ বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সর্ববৃহৎ গন্তব্য বাজার। দেশের পোশাক রফতানির প্রায় অর্ধেকই এই অঞ্চলে পাঠানো হয়। ফলে, ইউরোপীয় বাজারে প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা দেশের রফতানি খাত এবং সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক বার্তা বহন করে। ●
অকা/তৈপোশি/ই/সকাল/২৪ জুন, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 2 weeks আগে