অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
ধারাবাহিক মন্দা থেকে উত্তরণের ইঙ্গিত দিয়ে গত সপ্তাহে দেশের পুঁজি বাজার এক প্রকার ইতিবাচক ধারায় ফেরা শুরু করেছে। গত সপ্তাহের মোট ৫ কার্যদিবসের চারটিতেই দেশের পুঁজি বাজারগুলোতে লেনদেন ও সূচকের উন্নতি ঘটেছে। পুঁজি বাজারের এই ইতিবাচক আচরণে ফেরা দীর্ঘদিন ধরে মন্দা আক্রান্ত ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরিয়ে দিচ্ছে।
এ দিকে পাঁচ কার্যদিবসের চারটিতে ধারাবাহিক মূল্যবৃদ্ধির সুবাদে বড় ধরনের উল্লম্ফন ঘটেছে দেশের প্রধান পুঁজি বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধনে। গত সপ্তাহে বাজারটির মূলধন বেড়েছে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এ সময় বাজারটির মোট মূলধন দাঁড়ায় ৬ লাখ ৬১ হাজার ৫৬৫ কোটি ২১ লাখ টাকা, যা আগের সপ্তাহ অপেক্ষা ১০ হাজার ৮২২ কোটি টাকা তথা ১ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। আগের সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৫০ হাজার ৭৪৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ডিএসই সপ্তাহিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বিদায়ী সপ্তাহে বেড়েছে ডিএসইর সব কটি সূচকও। এ সময় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৭৮ দশমিক ৪২ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এ ছাড়া বাজারটির অন্য দু’টি সূচক ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়া সূচকের উন্নতি ঘটেছে যথাক্রমে ৩৭ দশমিক ৯০ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ১৩ শতাংশ ও ২১ দশমিক ৪০ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ০৬ শতাংশ।
সূচকের ধারাবাহিক উন্নতির ফলে বাজারের মূল্যস্তর কিছুটা হলেও বেড়েছে ডিএসইর। এতে সপ্তাহান্তে বৃদ্ধি পেয়েছে বাজারটির মূল্য-আয় অনুপাত (পিই)। গত সপ্তাহ শেষে ডিএসইর পিই দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩০, যা আগের সপ্তাহ অপেক্ষা ২ শতাংশ বেশি। আগের সপ্তাহে ডিএসইর পিই ছিল ৯ দশমিক ১৬।
সূচকের উত্থানের পাশাপাশি ডিএসইতে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৮১২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, যা আগের সপ্তাহ অপেক্ষা ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি আগের সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেন ছিল এক হাজার ৬২৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এক সপ্তাহে লেনদেন বেড়েছে ১৮৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। একই হারে বেড়েছে বাজারটির গড় লেনদেনও। গত সপ্তাহে ডিএসইর গড় লেনদেন দাঁড়ায় ৩৬২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে বাজারটির গড় লেনদেন ছিল ৩২৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
বিগত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে ৩৯৩টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ২৬৮টি কোম্পানি ও ফান্ডের, কমেছে ৮৯টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৬টি কোম্পানি ও ফান্ডের শেয়ার বা ইউনিটের দাম।
সপ্তাহটিতে (২২ জুন থেকে ২৬ জুন) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের শীর্ষ দশের তালিকার উঠে এসেছে তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম পিএলসি। এ সময় কোম্পানটির প্রতিদিন গড়ে ৩৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। লেনদেনের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানটির প্রতিদিন গড়ে ১৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এটি ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ৪ দশমিক ৫২ শতাংশ। সাপ্তাহিক লেনদেনের তৃতীয় স্থানে থাকা স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে প্রতিদিন গড়ে ১২ কোটি ৮২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন করেছে। যা ডিএসইর মোট লেনদেনের ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ। সাপ্তাহিক লেনদেনে শীর্ষে উঠে আসা কোম্পানিগুলোর মধ্যে আরো ছিল সী পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড হোটেল, বিচ হ্যাচারি, ফাইন ফুড, অগ্নি সিস্টেমস, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, ব্রিটিশ অ্যামেরিকান ট্যোবাকো এবং মিডল্যান্ড ব্যাংক।
একই সময় দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে ব্যাংক এশিয়া ফার্স্ট পারপেচুয়াল বন্ড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর ৮৬ দশমিক ০২ শতাংশ বেড়েছে। সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৩১ দশমিক ৯১ শতাংশ দর বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। এ ছাড়া ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ দর বৃদ্ধিতে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে রহিমা ফুডস লিমিটেড।
সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির তালিকায় উঠে আসা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইয়াকিন পলিমার ২২ দশমিক ৫২ শতাংশ, নিউলাইন কোদিংস ২১ দশমিক ৩১ শতাংশ, সাফকো স্পিনিংয়ের ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ, দেশ গার্মেন্টের ১৮ দশমিক ২১ শতাংশ, লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের ১৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ১৬ দশমিক ০৭ শতাংশ ও ন্যাশনাল টিউবসের ১৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে।
অন্য দিকে কোম্পানিগুলো মাঝে দর পতনের শীর্ষে উঠে এসেছে ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর ১৯ দশমিক ০৫ শতাংশ কমেছে। সাপ্তাহিক দর পতনের তালিকায় উঠে আসা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১৪ দশমিক ৭১ শতাংশ দর পতনে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড। এ ছাড়া ৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ দর পতনে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে এফএএস ফাইন্যান্স লিমিটেড।
সাপ্তাহিক দর পতনের শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে বেক্সিমকো সুকুকের ৮ শতাংশ, আইবিবিএল বন্ডের ৭ শতাংশ, জিএসপি ফাইন্যান্সের ৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ, পদ্মা লাইফের ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ, রিজেন্ট টেক্সটাইলের ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং রেনউইক যজ্ঞেশ্বরের ৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ দর পতন ঘটেছে। ●
অকা/পুঁবা/ফর/বিকাল/২৯ জুন, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 2 weeks আগে