অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
পুঁজি বাজারে তালিকাভুক্ত বেক্সিমকো গ্রুপের তিনটি কোম্পানি ও আরও দুটি প্রতিষ্ঠানসহ মোট পাঁচটি কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যাপক তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। দীর্ঘ দিন ধরে এসব কোম্পানি বিপুল অঙ্কের ঋণের বোঝায় জর্জরিত। এই পাঁচটি কোম্পানির মধ্যে রয়েছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো লিমিটেড, শাইনপুকুর সিরামিকস, রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস (আরএসআরএম) এবং নিউলাইন ক্লোথিংস।
বিএসইসি চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এবং তাদের ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে। এই তদন্তের মূল লক্ষ্য হলো কোম্পানিগুলোর আর্থিক অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা খুঁজে বের করা। তদন্ত কমিটি কোম্পানিগুলোর কারখানা ও অফিস পরিদর্শন করবে, হিসাবপত্র খতিয়ে দেখবে, পরিচালক ও উদ্যোক্তাদের শেয়ার ধারণের তথ্য যাচাই করবে, অভ্যন্তরীণ লেনদেন পর্যালোচনা করবে, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের কার্যক্রম বিশ্লেষণ করবে এবং বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আয়োজনে কোনো অনিয়ম বা গাফিলতি ছিল কিনা তা তদন্ত করবে।
দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপের ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে, যার একটি বড় অংশ বর্তমানে মন্দ ঋণে (Non-performing loan) পরিণত হয়েছে। কোম্পানিগুলোর হালনাগাদ আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পাওয়া গেছে। ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস এর ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত মোট ঋণ ৬০২ কোটি ৫৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি ঋণ ৪২৬ কোটি ৭৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ১৭৫ কোটি ৭৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানি বেক্সিমকো লিমিটেড এর ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪৪৯ কোটি ৬৮ লাখ ২০ হাজার টাকা। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি ঋণ ৩ হাজার ১০৯ কোটি ১৭ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ৩ হাজার ৩৪০ কোটি ৫১ লাখ টাকা। একই গ্রুপের ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানি শাইনপুকুর সিরামিকস এর ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত মোট ঋণ ৯৮ কোটি ৫৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি ঋণ ৯৭ কোটি ৫৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ৯৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানি রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস এর সর্বশেষ ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এই কোম্পানির মোট ঋণ ১৯৩ কোটি ৬৬ লাখ ৮০ হাজার টাকার বেশি। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি ঋণ ৯৪ কোটি ৯৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ৯৮ কোটি ৬৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। তবে, ২০২১ সালের পর থেকে কোম্পানিটি কোনো আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। একইভাবে ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানি নিউলাইন ক্লোথিংস এর ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মোট ঋণ ছিল ৯১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে স্বল্পমেয়াদি ঋণ ২১ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ৬৯ কোটি ৯১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এই কোম্পানিরও ২০২১ সালের পর কোনো হালনাগাদ আর্থিক তথ্য পাওয়া যায়নি।
বিএসইসির বর্তমান কমিশন, চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় আগের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয়। কোম্পানির শেয়ার ধারণে অনিয়ম, 'জেড' ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলোর স্বচ্ছতার ঘাটতি এবং বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আয়োজন না করা— এসব বিষয়ে কমিশন কঠোর অবস্থান নিচ্ছে। পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের নজরদারি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে সাহায্য করবে। তবে ঋণের বিপুল বোঝা, অনিয়মের দীর্ঘ ইতিহাস এবং আইনি জটিলতার কারণে বাজারে কিছুটা অনিশ্চয়তা রয়েই যেতে পারে। বিনিয়োগকারীদের উচিত গুজবের পরিবর্তে প্রকৃত তথ্যের ভিত্তিতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া। এই পাঁচ কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্ত বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে একটি সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদন, আদালতের রায় এবং শেয়ার বিক্রির ফলাফল আগামী দিনগুলোতে বাজারের গতি-প্রকৃতিকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে। ●
অকা/পুঁবা/ই/সকাল/১৯ জুন, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 3 weeks আগে