অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয়, ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তার চিন্তা মানুষকে বিনিয়োগের প্রতি আগ্রহী করে তুলেছে। অনেকেই তাদের কষ্টার্জিত সঞ্চয়কে একটু বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বা ভবিষ্যতের নিশ্চয়তার আশায় কোথাও না কোথাও বিনিয়োগ করতে চান। কিন্তু সমস্যা হলো—বিনিয়োগের সঠিক দিক বেছে নেওয়া অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। শেয়ার বাজারে যাবেন নাকি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করবেন—এই দ্বিধায় পড়ে যান অধিকাংশ মানুষ। কারণ দুই ক্ষেত্রের ঝুঁকি, লাভ এবং সময়সীমার প্রভাব একেবারেই ভিন্ন।
বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিসর যেমন বাড়ছে, তেমনি মানুষের মধ্যে সতর্কতা ও অনিশ্চয়তাও বাড়ছে। একদিকে রয়েছে সরকার নির্ভর নিরাপদ সঞ্চয়পত্র, অন্যদিকে রয়েছে উচ্চ মুনাফার সম্ভাবনা কিন্তু অনিশ্চয়তাপূর্ণ শেয়ার বাজার। একজন বিনিয়োগকারীর সিদ্ধান্ত নির্ভর করে তাঁর লক্ষ্য, ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা এবং বিনিয়োগের সময়সীমার ওপর।
সঞ্চয়পত্রের মূল আকর্ষণ হলো এর নিরাপত্তা। এটি সরকার কর্তৃক গ্যারান্টিযুক্ত একটি বিনিয়োগ মাধ্যম, যেখানে মূলধন হারানোর ঝুঁকি নেই বললেই চলে। ফলে মধ্যবিত্ত ও অবসরপ্রাপ্ত মানুষের কাছে এটি একটি নির্ভরযোগ্য উপায়। নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে এখানে ১১-১২ শতাংশ পর্যন্ত স্থির মুনাফা পাওয়া যায়, যা প্রতি মাসে তোলা যায়। ফলে অনেক পরিবার নিয়মিত সংসার ব্যয় মেটাতে এই মুনাফার ওপর নির্ভর করে। তবে এর সীমাবদ্ধতাও রয়েছে—মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ভাঙাতে গেলে মুনাফা কমে যায় বা জরিমানার মুখে পড়তে হয়।
অন্যদিকে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ মানে ঝুঁকি ও সম্ভাবনার একসাথে বসবাস। ভালো কোম্পানিতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করলে সঞ্চয়পত্রের চেয়ে অনেক বেশি রিটার্ন পাওয়া সম্ভব। কিছু ক্ষেত্রে মুনাফা দ্বিগুণ, তিনগুণ এমনকি চারগুণও হতে পারে। তবে বাজারের ওঠানামা, কোম্পানির পারফরম্যান্স বা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিবর্তনের কারণে লোকসানের আশঙ্কাও থাকে। ফলে এটি তাদের জন্য, যারা ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত এবং বিনিয়োগে ধৈর্য ধরতে জানেন।
তরলতার দিক থেকে শেয়ার বাজার অনেক বেশি সুবিধাজনক। কারণ প্রয়োজন হলে শেয়ার বিক্রি করে সঙ্গে সঙ্গে নগদ টাকায় রূপান্তর করা যায়। বিপরীতে সঞ্চয়পত্রে এমন সুযোগ নেই; নির্ধারিত মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই ভাঙালে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
করনীতি ও নিয়মের ক্ষেত্রেও পার্থক্য সুস্পষ্ট। সঞ্চয়পত্রে উৎসে কর কাটা হয় এবং নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে বিনিয়োগ করা যায়—যেমন একক নামে সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। শেয়ার বাজারে কর তুলনামূলকভাবে নমনীয়; ডিভিডেন্ডে কর কম এবং দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে মূলধনি লাভের ওপর করও তুলনামূলকভাবে হালকা। সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই।
অবশেষে বিনিয়োগের লক্ষ্যই নির্ধারণ করবে কোন পথটি আপনার জন্য উপযুক্ত। যারা স্থিতিশীল, ঝুঁকিমুক্ত আয় চান, তাদের জন্য সঞ্চয়পত্র একটি নিরাপদ আশ্রয়। আর যারা দীর্ঘমেয়াদি সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্য রাখেন এবং বাজারের ওঠানামা মেনে নিতে পারেন, তাদের জন্য শেয়ার বাজার বেশি সম্ভাবনাময়।
সবশেষে বলা যায়—একজন বিচক্ষণ বিনিয়োগকারী কখনো সব ডিম এক ঝুড়িতে রাখেন না। অর্থাৎ নিরাপত্তা ও মুনাফার ভারসাম্য রাখতে সঞ্চয়পত্র ও শেয়ার বাজার—দুই মাধ্যমেই পরিকল্পিত বিনিয়োগ করাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। এতে একদিকে স্থিতিশীল আয় নিশ্চিত হয়, অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদে সম্পদ বৃদ্ধির সুযোগও পাওয়া যায়।●
অকা/প্র/ই/সকাল/৬ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 1 week আগে