অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
মূল্যবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে পুঁজি বাজারে। টানা চতুর্থ দিনে গড়াল মূল্যবৃদ্ধি। দীর্ঘদিনের দরপতনের ফলে বর্তমানে পুঁজি বাজারের মূল্যস্তর যে পর্যায়ে নেমেছে তাতে টানা এ মূল্যবৃদ্ধিকে খুবই স্বাভাবিক মনে করছেন পুঁজি বাজার সংশ্লিষ্টরা। তবে তারা মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন কি না তার ওপর নির্ভর করবে এ ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন থাকা। কারণ ইতোমধ্যে দেশের দুই পুঁজি বাজারেই মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় প্রাধান্য পাচ্ছে অপেক্ষাকৃত দুর্বল মৌলভিত্তির বেশ কিছু কোম্পানি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৬ জুন ৬৫ দশমিক ১৯ পয়েন্ট উন্নতি ধরে রাখে। আগের দিনের ৪ হাজার ৭৬৭ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট থেকে লেনদেন শুরু করা সূচকটি ২৬ জুন দিনশেষে স্থির হয় ৪ হাজার ৮৩২ দশমিক ৮৩ পয়েন্টে। ২৬ জুন নিয়ে টানা চার দিনে ডিএসইর প্রধান সূচকটির ১৫৫ পয়েন্টের বেশি উন্নতি ঘটল। একই সময় বাজারটির অপর দু’টি সূচক ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহর উন্নতি ঘটে যথাক্রমে ৩০ দশমিক ০২ ও ১৩ দশমিক ০৫ পয়েন্ট। গত চার দিনে এ দু’টি সূচকের উন্নতি রেকর্ড করা হয় যথাক্রমে ৬২ ও ৪৩ পয়েন্ট।
অপর দিকে, সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস ২৬ জুন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সার্বিক মূল্যসূচকের উন্নতি ঘটে ১৬৫ দশমিক ৫০ পয়েন্ট। একই সময় সিএসই-৩০ ও সিএসসিএক্স সূচকটি যথাক্রমে ২১৫ দশমিক ৬৩ ও ৯৭ দশমিক ১৮ পয়েন্ট। বাজারটিতে চার দিনে সিএসইর প্রধান সূচকটির উন্নতি ঘটে ৩১৩ পয়েন্টের বেশি।
যথারীতি সূচকের ধারাবাহিক উন্নতির প্রভাব ছিল দুই পুঁজি বাজারের লেনদেনেও। ঢাকা শেয়ার বাজার ২৬ জুন ৪৭৮ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে, যা আগের দিন অপেক্ষা ৬৫ কোটি টাকা বেশি। বুধবার ডিএসইর লেনদেন ছিল ৪১৩ কোটি টাকা। একইভাবে চট্টগ্রাম স্টকেও ২৬ জুন ৬০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায় লেনদেন। আগের দিন বাজারটির লেনদেন ছিল ৪৩ কোটি টাকা।
এ দিকে, সূচকের চলমান ধারাবাহিক উন্নতিকে সংশ্লিষ্টরা খুবই স্বাভাবিক মনে করলেও গত ক’দিন ধরে দুই পুঁজি বাজারের মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় শীর্ষে উঠে আসা কোম্পানিগুলো নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে। কারণ এ ক’দিনে অপেক্ষাকৃত দুর্বল কোম্পানিগুলোই মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় প্রাধান্য ধরে রেখেছে, যা পুঁজি বাজারের স্বাভাবিক আচরণের সঙ্গে যায় না। বিশেষ করে দীর্ঘদিনের মন্দায় আটকে থাকা বাজারে ভালো মন্দ দুই ধরনের কোম্পানিই দরপতনের শিকার ছিল। অপেক্ষাকৃত দুর্বল কোম্পানিগুলো এ সময় বেশি দর হারালেও দরপতনের শিকার ছিল মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিও। আবার মূল্যস্তর খুবই নিচে নেমে আসার সুযোগ নিয়ে এ সময় মধ্যম সারির বেশ কিছু কোম্পানিও লভ্যাংশ ঘোষণা করার পরও তা বিতরণ করেনি। ফলে এসব কোম্পানিও অস্বাভাবিক দরপতনের শিকার ছিল। এগুলোর মধ্যে সিরামিকস খাতের একটি বহুজাতিক কোম্পানিও রয়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, দীর্ঘদিন পরে বাজার স্বাভাবিক আচরণে ফিরতে শুরু করেছে। এ অবস্থা ধরে রাখতে প্রধান ভূমিকা পালন করা দরকার বিনিয়োগকারীদের। এ ক্ষেত্রে মূলধন স্বল্পতা বা অন্য কিছুতে প্রভাবিত না হয়ে বাজারের স্বাভাবিক গতি ধরে রাখার পাশাপাশি নিজেদের বিনিয়োগকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে চলমান মূল্যবৃদ্ধির এ প্রবণতাকে টেকসই করার চেষ্টা করতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের বেশি ভূমিকা থাকা দরকার। কারণ পুঁজি বাজারে যে কোনো দুর্ঘটনায় তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেড। ২৬ জুন ২০ কোটি ৫৫ লাখ টাকায় ৩৮ লাখ ১৭ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে কোম্পানিটির। লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের লেনদেন হয়েছে ১৭ কোটি ৬১ লাখ টাকায় ৮ লাখ ৫২ হাজার শেয়ার। আর ১৭ কোটি ৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন নিয়ে শীর্ষ তালিকার তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে ব্র্যাক ব্যাংক। লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ লাভেলো আইসক্রিম, বিচ হ্যাচারি, অগ্নি সিস্টেমস, বিএটিবিসি, খান ব্রাদার্স, সিটি ব্যাংক এবং শাইনপুকুর সিরামিক লিমিটেড।
২৬ জুন ডিএসইর লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে বস্ত্র খাতের কোম্পানি ড্রাগন সোয়েটার লিমিটেড। কোম্পানিটির মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ১০ শতাংশ। ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি পেয়ে এ তালিকার দ্বিতীয় স্থানে ছিল লিগেসি ফুটওয়্যার। এ দিন দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে আসা অপর কোম্পানিগুলো ছিল দেশ গার্মেন্টস, ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, এক্সিম ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, এমবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ন্যাশনাল টিউবস, ইসলামিক ফাইন্যান্স, ইন্টার্ন কেবলস এবং রহিমা ফুড করপোরেশন লিমিটেড।
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর কমেছে এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের। এ দিন কোম্পানিটির শেয়ার দর আগের দিনের তুলনায় ২০ পয়সা বা ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ কমেছে। যার ফলে ডিএসইর দর পতনের শীর্ষ তালিকায় প্রথম স্থানে জায়গা করে নিয়েছে এই কোম্পানিটি। দর পতনের শীর্ষ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফারইস্ট ফাইন্যান্সের দর কমেছে আগের দিনের তুলনায় ৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ। আর ৪ দশমিক ১৬ শতাংশ দর কমে যাওয়ায় পতনের শীর্ষ তালিকার তৃতীয় স্থানে জায়গা নিয়েছে ফ্যামিলিটেক্স লিমিটেড। ডিএসইতে দর পতনের শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে আরো ছিল ঢাকা ব্যাংক, ইবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, নর্দার্ন জুট, আইসিবি এএমসিএল অগ্রণী ব্যাংক মিউচুয়াল ফান্ড এবং সিলকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। ●
অকা/পুঁবা/ফর/বিকাল/২৭ জুন, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 2 weeks আগে