অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
চার দশকের বেশি সময় ধরে কম দামের তৈরি পোশাক রফতানি করে আসছে বাংলাদেশ। তার মধ্যে পাঁচটি ক্যাটাগরি বা শ্রেণির তৈরি পোশাকই বেশি রফতানি হয়। সেগুলো হচ্ছে ট্রাউজার, টি-শার্ট ও নিট শার্ট, সোয়েটার, শার্ট ও ব্লাউজ এবং অন্তর্বাস। মূলত ট্রাউজার, টি-শার্ট ও সোয়েটারই সবচেয়ে বেশি রফতানি হয়। ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থ বছর ধরে এই পাঁচ শ্রেণির পোশাকের রফতানি কমছে।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি আয়ের প্রায় ৮১ শতাংশই ট্রাউজার; টি-শার্ট ও নিট শার্ট; সোয়েটার; শার্ট ও ব্লাউজ এবং অন্তর্বাস থেকে আসে। বিজিএমইএ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সংগঠনটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট তৈরি পোশাক রফতানির প্রায় ৮১ শতাংশই আসে ট্রাউজার, টি-শার্ট ও নিট শার্ট, সোয়েটার, শার্ট ও ব্লাউজ এবং অন্তর্বাস থেকে।
শীর্ষ তিন পোশাক পণ্যের রফতানি কমে যাওয়া নিয়ে রফতানিকারকেরা বলছেন, দুই বছর ধরে সামগ্রিকভাবে তৈরি পোশাকের রফতানি কমেছে। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি রফতানি হওয়া পোশাকের রফতানি কমেছে। এসব পণ্যের ক্রয়াদেশ পেতে রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখন তীব্র প্রতিযোগিতা করতে হয়। বিভিন্ন কারণে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ট্রাউজার, টি-শার্ট ও সোয়েটারের মতো পোশাকের প্রতিযোগিতা সমতা কমছে। যে কারণে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ক্রয়াদেশ ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে।
২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে জ্বালানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় ছাড়া অন্যান্য পণ্যের চাহিদা কমে যায়। তার প্রভাবে গত দুই বছর সেসব দেশে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি কমে। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৩ হাজার ৬১৫ কোটি মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে। তার আগের দুই অর্থবছরে ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থ বছরে রফতানি হয়েছে যথাক্রমে ৪ হাজার ২৬১ ও ৩ হাজার ৮১৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। এমনটা জানা গেছে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে।
বিজিএমইএর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মোট পোশাক রফতানির ৩৩ শতাংশই হলো ট্রাউজার। তবে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ট্রাউজারের রফতানি প্রায় ৪ শতাংশ কমে ১ হাজার ১৯৩ কোটি ডলারে নেমে যায়। করোনার সময় ২০২০-২১ অর্থ বছরে ১ হাজার ১০০ কোটি ডলারের কম ট্রাউজার রফতানি হয়েছিল। তারপর ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থ বছরে যথাক্রমে ১ হাজার ৪৫১ এবং ১ হাজার ২৪১ কোটি ডলারের ট্রাউজার রফতানি হয়।
সস্তায় টি-শার্ট রফতানিতে বাংলাদেশের বেশ সুনাম রয়েছে। ওয়ার্ল্ড টপ এক্সপোর্ট ডট কমের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে ৫১ বিলিয়ন ডলারের টি-শার্ট রফতানি হয়। সবচেয়ে বেশি টি-শার্ট রফতানি করে চীন, যা মোট রফতানির ১৭ শতাংশ। তারপরই বাংলাদেশের অবস্থান, যা মোট রফতানির ১৫ শতাংশ। তবে ওই বছর কটন টি-শার্ট রফতানিতে শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের মোট তৈরি পোশাক রফতানির ২১ শতাংশ হচ্ছে টি-শার্ট। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৭৭৩ কোটি ডলারের টি-শার্ট রফতানি হয়। এই রফতানি ২০২২-২৩ অর্থ বছরের তুলনায় ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার কম। এর আগের ২০২১-২২ অর্থ বছরে রফতানি হয়েছিল ৯৮৬ কোটি ডলারের টি-শার্ট।
২০২১-২২ অর্থ বছরে ৫ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের সোয়েটার রফতানি হয়। পরের দুই বছরই পণ্যটির রফতানি কমেছে। সর্বশেষ অর্থ বছরে ৪৮২ কোটি ডলারের সোয়েটার রফতানি হয়। এই রফতানি তার আগের অর্থ বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৪৩ শতাংশ বা ১২ কোটি ডলার বেশি।
বিজিএমইএর তথ্যানুযায়ী, শার্ট ও ব্লাউজের রফতানি ৮ শতাংশ কমেছে। সর্বশেষ অর্থ বছরে ২৯৩ কোটি ডলারের শার্ট ও ব্লাউজ রফতানি হয়। তার আগের অর্থ বছর রফতানি হয়েছিল ৩১৮ কোটি ডলারের শার্ট ও ব্লাউজ।
বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, ‘আমরা রফতানিমুখী শীর্ষস্থানীয় পোশাকের বিক্রয়াদেশ হারাচ্ছি কি না, সেটি খতিয়ে দেখতে হবে। কারণ, এসব পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে অনেক কারখানা ও লাখ লাখ শ্রমিক জড়িত। তৈরি পোশাক রফতানির এই মূল ভিত্তি টিকিয়ে রাখতে নীতিনির্ধারকদের প্রতি অনুরোধ, গ্যাস-বিদ্যুৎসহ যেকোনো মূল্যবৃদ্ধিতে রফতানিকারকদের সময় দিতে হবে। যাতে তারা সেই বাড়তি ব্যয় সমন্বয়ের সুযোগ পান।
তিনি আরো বলেন, সাধারণত সামগ্রিকভাবে রফতানি কমলে যেসব তৈরি পোশাক বেশি রফতানি হয়, সেগুলোর রফতানি উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পায়। এখানে আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে টি-শার্ট, ট্রাউজার ও সোয়েটারের মতো তৈরি পোশাক খুবই মূল্য সংবেদনশীল। অর্থাৎ তীব্র প্রতিযোগিতা করে এসব পণ্যের ক্রয়াদেশ পেতে হয়। শ্রমিকের বেতন ও গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি এবং নগদ সহায়তা কমে যাওয়ার কারণে অনেক রফতানিকারক পণ্যগুলোর ক্রয়াদেশ নিতে পারছে না। ●
অকা/তৈপোশি/ফর/বিকাল/৩ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 1 month আগে