অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
বাংলাদেশে এখন সব ধরনের চাকরিজীবীর জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে এ বাধ্যবাধকতা আরও কঠোরভাবে কার্যকর হয়েছে। করদাতাদের সুবিধার্থে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চলতি অর্থবছরের জন্য নতুন আয়কর নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে, যেখানে চাকরিজীবীদের কোন কোন আয় করযোগ্য হিসেবে গণ্য হবে, তা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
নির্দেশিকা অনুযায়ী সরকারি চাকরিজীবীদের মোট ১৫ ধরনের আয় করের আওতায় আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মূল বেতন, বকেয়া বেতন, বিশেষ দায়িত্ব পালনের জন্য প্রাপ্ত অতিরিক্ত বেতন, বাড়িভাড়া, মাসিক চিকিৎসা ভাতা ও যাতায়াত ভাতা। ধর্মীয় বা সামাজিক উৎসব উপলক্ষে পাওয়া উৎসব ভাতা, সহায়ক কর্মীর জন্য প্রাপ্ত আর্থিক সুবিধা এবং অব্যবহৃত ছুটি নগদায়নের অর্থও করযোগ্য হিসেবে ধরা হয়েছে। এছাড়া বিশেষ অবদানের জন্য প্রাপ্ত সম্মানী বা পুরস্কার, অফিসে বাড়তি সময় কাজের বিনিময়ে পাওয়া ওভারটাইম ভাতা, বৈশাখী ভাতা, সরকারি ভবিষ্য তহবিলে জমাকৃত টাকার সুদ, চাকরি ছাড়ার সময় প্রাপ্ত লাম্পগ্র্যান্ট ও গ্র্যাচুইটি—সবকিছুই করের আওতায় এসেছে। অর্থাৎ সরকারি চাকরিজীবীরা নিয়মিত বেতন-ভাতার বাইরে যেকোনো আর্থিক সুবিধা পেলেও সেটি করযোগ্য আয়ের মধ্যে পড়বে।
অন্যদিকে বেসরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে ১১ ধরনের আয় করের আওতায় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মূল বেতন ও বিভিন্ন ভাতা, অগ্রিম বেতন বা জমে থাকা বেতন, চাকরি শেষে প্রাপ্ত অ্যানুইটি, পেনশন কিংবা আনুতোষিক অর্থ। পাশাপাশি চাকরির অতিরিক্ত সুবিধা হিসেবে পাওয়া পারকুইজিট—যেমন বিনা খরচে বাড়ি, বিদ্যুৎ বা ফোন সুবিধা—এসবও করযোগ্য হিসেবে গণ্য হবে। বেতন বা মজুরির পরিবর্তে অন্য কোনো আর্থিক সুবিধা, কর্মচারী শেয়ার স্কিম থেকে আয়, অফিস থেকে বিনা খরচে বা কম খরচে পাওয়া আবাসন ও গাড়ি সুবিধা, এমনকি নিয়োগকর্তার দেওয়া বিশেষ সুবিধা যেমন ক্লাব সদস্যপদ বা ভ্রমণ সুবিধার আর্থিক মূল্যও করের আওতায় পড়বে। তাছাড়া কোম্পানির পক্ষ থেকে প্রভিডেন্ট ফান্ডে প্রদত্ত চাঁদাও করযোগ্য হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বলছে, সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের চাকরিজীবীদের জন্য করযোগ্য আয়ের তালিকা আলাদা হলেও তা স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ফলে আয়কর রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে আর কোনো বিভ্রান্তি থাকবে না। মূলত বেতন ছাড়াও চাকরিজীবীরা যেসব অতিরিক্ত আর্থিক সুবিধা পান, সেগুলো এখন সরাসরি করের আওতায় চলে এসেছে। ফলে প্রত্যেক চাকরিজীবীর জন্য রিটার্ন দাখিল এখন একটি নিয়মিত ও অপরিহার্য দায়িত্বে পরিণত হয়েছে। ●
অকা/রা/ই/সকাল/৩১ আগস্ট, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 1 month আগে