অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
দিনভর সূচকের ওঠানামার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত পুঁজি বাজারে দ্বিতীয় দিনের মতো সংশোধন ঘটেছে। আর এভাবে সূচকের পতন দিয়েই শেষ হলো ২০২৪-২৫ অর্থ বছর। দিনের শুরুতে বিক্রয়চাপের মুখে পড়া দেশের দুই পুঁজি বাজারই ৩০ জুন লেনদেনের মাঝামাঝি সময় ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি। এতে দিনশেষে উভয় পুঁজি বাজারেই সবগুলো সূচকের কমবেশি পতন হয়েছে। সেই সাথে কমেছে লেনদেনও।
৩০ জুন সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে সূচকের পতন দিয়ে দিন শুরু হয় পুঁজি বাজরের। সৃষ্টি হওয়া বিক্রয়চাপের ফলে প্রথম ১৫ মিনিটের মধ্যে ১৬ পয়েন্ট সূচক হারায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। তবে প্রথম দিকের এ চাপ দ্রুতই সামলে নেয় বাজারটি। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রধান সূচকটি পৌঁছে যায় চার হাজার ৮৪২ পয়েন্টে। এ পর্যায়ে সূচকের কিছুটা উন্নতি ঘটে। লেনদেনের এ পর্যায়ে ফের বিক্রয়চাপ বেড়ে গেলে আবার নিম্নমুখী হতে থাকে বাজারের সূচক। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সূচকটি নেমে আসে চার হাজার ৮১৫ পয়েন্টে। এ সময় লেনদেন হওয়া কোম্পানির একটি বড় অংশই দরপতনের শিকার হতে দেখা যায়। কিন্তু এখান থেকে ফের ঊর্ধ্বমুখী হয় বাজার সূচক। দিনের বাকি সময় বাজারে ক্রয়চাপ তৈরি হলে হারানো সূচক ফিরে পেতে থাকে ডিএসই। লেনদেনের শেষ মুহূর্তে গিয়ে সূচকটির ৬ পয়েন্ট উন্নতি ঘটে। তবে দিনের সমন্বয় শেষে বৃদ্ধি পাওয়া সূচকের একটি অংশ হারালে বাজারের সবগুলো সূচকের কিছুটা অবনতি ঘটে।
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩০ জুন ১ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট কমেছে। চার হাজার ৮৩৯ দশমিক ৭৭ পয়েন্ট থেকে দিন শুরু করা সূচকটি সোমবার দিনশেষে চার হাজার ৮৩৮ দশমিক ৩৯ পয়েন্টে স্থির হয়। ডিএসইর অন্য দুই সূচক ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ সূচক হারায় যথাক্রমে দশমিক ৫৪ ও দশমিক ৭১ পয়েন্ট। দেশের দ্বিতীয় পুঁজি বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ৩৪ দশমিক ২২ পয়েন্ট কমেছে। সিএসই-৩০ ও সিএসসিএক্স সূচকের অবনতি ঘটে যথাক্রমে ৫৮ দশমিক ৪৭ ও ১৪ দশমিক ৩৪ পয়েন্ট।
সূচকের অবনতির ফলে বাজারের গতিও তুলনামূলকভাবে কমে যায়, যা লেনদেনের অবনতি ঘটায়। ডিএসই ৩০ জুন ৪৬৪ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে যা আগের দিন অপেক্ষা ৩০ কোটি টাকা কম। রোববার বাজারটির মোট লেনদেন ছিল ৪৯৪ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম স্টকে ৩৫ কোটি টাকা থেকে ২৫ কোটিতে নেমে আসে লেনদেন, যার মধ্যে একটি কোম্পানির লেনদেনই ছিল ২১ কোটি টাকা।
এ দিকে ১ জুলাই ব্যাংক হলিডে উপলক্ষে সারা দেশে ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এ উপলে দেশের সব ব্যাংকে সাধারণ লেনদেন বন্ধ থাকবে। একই কারণে বন্ধ থাকবে দেশের দুই পুঁজি বাজার ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই ও সিএসই) লেনদেন কার্যক্রমও। এই দিন ব্যাংকগুলো অর্ধবার্ষিক প্রতিবেদন তৈরিতে ব্যয় করার কারণে স্বাভাবিক লেনদেন বন্ধ রাখে। আর পুঁজি বাজার সাধারণত দৈনন্দিন ব্যাংকিং কার্যক্রমের ওপর নির্ভরশীল। তাই কোনো কারণে ব্যাংক বন্ধ থাকলে একই দিন পুঁজি বাজারও বন্ধ থাকে।
দেশের প্রধান পুঁজি বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস ৩০ জুন মোট ৪০০টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এদিন লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে অগ্নি সিস্টেমস পিএলসি। সোমবার ২২ কোটি ৭৪ লাখ ৭১ হাজার টাকায় কোম্পানিটির ৮৩ লাখ সাত হাজার শেয়ার হাতবদল হয়। ১৯ কোটি ৯৪ লাখ ৮৪ হাজার টাকায় ১৯ লাখ ৮৯ হাজার শেয়ার লেনদেন করে তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে তৌফিকা ফুড অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম। আর ১৭ কোটি ৭০ লাখ ৪৪ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন করে তালিকার তৃতীয় স্থান দখলে নিয়েছে মিডল্যান্ড ব্যাংক পিএলসি। লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানিগুলো ছিল- ব্র্যাক ব্যাংক, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, বিচ হ্যাচারি, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি এবং ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ৩০ জুন মোট ৪০০টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এদিন দর বৃদ্ধির ১৩০টি কোম্পানির মধ্যে শীর্ষে উঠে এসেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। ৩০ জুন নিয়ে টানা দ্বিতীয় দিন মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে ছিল এই ব্যাংকিং কোম্পানির শেয়ার। এদিন ডিএসইতে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারদর আগের দিনের তুলনায় ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়েছে। ৬ দশমিক ৭২ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি পেয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে মিডল্যান্ড ব্যাংক। কোম্পানিটির শেয়ারদর এক টাকা ৬০ পয়সা বা ৬ দশমিক ৭২ শতাংশ বেড়েছে।
মূল্যবৃদ্ধিতে শীর্ষ ১০ কোম্পানির অন্যগুলো হচ্ছেÑ রিলায়্যান্স ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস ব্লেন্ডার্স পিএলসি, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস, এমবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, এম এল ডায়িং এবং ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স।
অপর দিকে, ডিএসইতে ৩০ জুন লেনদেনে অংশ নেয়া ৪০০টি কোম্পানির মধ্যে ২০৫টির দর কমেছে। এদিন দরপতনের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড। ৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ দর হারায় ব্যাংকবহির্ভূত এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি। ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ দর হারিয়ে এ তালিকায় দ্বিতীয় কোম্পানি ছিল বস্ত্র খাতের দেশ গার্মেন্টস।
দরপতনের তালিকায় শীর্ষে উঠে আসা অন্যান্য কোম্পানিগুলো হলোÑ উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস, তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম, পিপুলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিসেস, আরামিট সিমেন্ট, মেট্রো স্পিনিং, ন্যাশনাল ফিড মিলস এবং ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স। ●
অকা/পুঁবা/ফর/বিকাল/১ জুলাই, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 1 week আগে