অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস আরও এক দফা কমিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটির সর্বশেষ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক, যা মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৪.৯ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে আইএমএফ জুলাই মাসে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৫.৪ শতাংশ, আর এ বছরের এপ্রিলে ৬.৫ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল। অর্থাৎ, তিন দফা সংশোধনের মধ্য দিয়ে সংস্থাটি প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা ধারাবাহিকভাবে নিচে নামিয়েছে।
একই প্রতিবেদনে আইএমএফ জানায়, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি ৮.৮ শতাংশে নামতে পারে, যা পরবর্তী অর্থবছরে আরও কমে ৫.৫ শতাংশে নেমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি বর্তমান উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির চাপ থেকে একটি ইতিবাচক সংকেত হলেও, প্রবৃদ্ধির শ্লথগতি অর্থনীতির পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে দিতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
আইএমএফের এই নতুন অনুমান অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সাম্প্রতিক পূর্বাভাসের সঙ্গে প্রায় সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিশ্বব্যাংক তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৪.৮ শতাংশ, আর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৫ শতাংশ হিসেবে অনুমান করেছে।
তবে বিশ্বব্যাংক গত সপ্তাহে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সতর্ক করে দিয়েছে, ব্যাংকিং খাতের দীর্ঘমেয়াদি দুর্বলতা, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং নির্বাচনের আগে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বাংলাদেশের পুনরুদ্ধারের গতি বাধাগ্রস্ত করতে পারে। সংস্থাটি আরও বলেছে, অর্থনৈতিক সংস্কার বাস্তবায়নে বিলম্ব, বৈশ্বিক বাণিজ্য অনিশ্চয়তা, জ্বালানি সরবরাহে সীমাবদ্ধতা এবং মূল্যস্ফীতির ধীরগতি—সব মিলিয়ে প্রবৃদ্ধির জন্য বড় ঝুঁকি রয়ে গেছে।
অন্যদিকে, এডিবি তাদের সেপ্টেম্বর আউটলুকে উল্লেখ করেছে যে, বাংলাদেশের প্রত্যাশিত পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া নতুন মার্কিন শুল্কনীতি, বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, উচ্চ নির্বাচনি ব্যয়, দুর্বল ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট, এবং আর্থিক খাতের কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ে উভয় সংস্থারই কিছুটা আশাবাদ রয়েছে। বিশ্বব্যাংক মনে করছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৭.৪ শতাংশে নেমে আসতে পারে; আর এডিবির হিসাব অনুযায়ী, তা সামান্য বেশি—৮ শতাংশ—থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চলতি অর্থবছরের জন্য ৫.৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে—যা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর অনুমানের তুলনায় কিছুটা বেশি। অর্থনীতিবিদদের মতে, প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির এই বিচ্ছিন্ন চিত্র একদিকে মুদ্রানীতিকে আরও কঠোর করার প্রয়োজনীয়তা ইঙ্গিত করছে, অন্যদিকে রাজস্ব খাত ও ব্যাংকিং ব্যবস্থায় কাঠামোগত সংস্কারের দাবিও জোরদার করছে। ●
অকা/প্র/ই/সকাল/১৫ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 11 hours আগে