অর্থকাগজ প্রতিবেদন 

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটির এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন বলেছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন এবং তার সঙ্গে সম্পর্কিত রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি মন্থর করছে।

তিনি বলেন, “নির্বাচনকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতি দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে প্রভাবিত করছে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।”

আইএমএফের সর্বশেষ অক্টোবর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসবে। এর আগে এপ্রিলে সংস্থাটি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশ, যা জুনে সংশোধন করে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ করা হয়। অক্টোবরে তা আরও কমিয়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে নামানো হয়েছে—অর্থাৎ এক বছরের মধ্যেই প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস প্রায় ১ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে।

আইএমএফ বলছে, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হ্রাসের পেছনে তিনটি প্রধান কারণ কাজ করছে—

  • কঠোর মুদ্রানীতির ফলে ঋণের প্রবাহ হ্রাস,
  • আর্থিক খাতের স্থায়ী দুর্বলতা, এবং
  • রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও নির্বাচনী উত্তেজনা।

এছাড়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ ও বাণিজ্যিক অনিশ্চয়তাও দেশের রফতানিনির্ভর খাতগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।

বাংলাদেশের আর্থিক খাত সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে শ্রীনিবাসন বলেন, “খাতে এখনও উল্লেখযোগ্য দুর্বলতা রয়ে গেছে। ফলে উদ্যোক্তারা প্রয়োজনীয় ঋণ পাচ্ছেন না, যা নতুন বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করছে এবং প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাকে সীমিত করছে।”

অর্থনীতিবিদদের মতে, ব্যাংক খাতের অনাদায়ী ঋণ (NPL), তারল্য সংকট ও নীতিগত অস্পষ্টতা দেশের বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কার্যক্রমে বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।

কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন আরও জানান, চলতি অর্থবছরের শেষ নাগাদ বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির হার ৮ দশমিক ৫ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। তার ব্যাখ্যায়, “এই মূল্যস্ফীতির প্রধান কারণ হচ্ছে সরবরাহঘাটতি এবং আমদানি ব্যয়ের বৃদ্ধি।”

বিশ্লেষকদের মতে, জ্বালানি, খাদ্যপণ্য ও কাঁচামালের আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি দেশের অভ্যন্তরীণ মূল্যস্তরে অতিরিক্ত চাপ তৈরি করেছে।

আইএমএফের সঙ্গে বাংলাদেশের ৫৫০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি বর্তমানে চলমান। শ্রীনিবাসন জানান, “চলমান কর্মসূচির পরবর্তী পর্যালোচনার জন্য শিগগিরই আইএমএফের একটি মিশন বাংলাদেশ সফর করবে।”

তিনি জোর দিয়ে বলেন, “বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো আর্থিক খাতে কাঠামোগত সংস্কার অব্যাহত রাখা এবং রাজস্ব আহরণে সক্ষমতা বাড়ানো।”
আইএমএফ মনে করে, রাজস্ব ঘাটতি কমাতে না পারলে উন্নয়ন ব্যয় টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে ঋণনির্ভরতা আরও বাড়বে।

আইএমএফের এই মূল্যায়ন ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে একটি দ্বৈত চাপে রয়েছে—একদিকে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা, অন্যদিকে বৈদেশিক বাজার ও আর্থিক খাতের অনিশ্চয়তা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ ও আর্থিক শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা ছাড়া প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা কঠিন হবে।
অকা/প্র/ই/সকাল/১৮ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ

সর্বশেষ হালনাগাদ 12 hours আগে

Leave A Reply

Exit mobile version