কাওসার রহমান ●
মহামারি এই সঙ্কটময় মুহূর্তেও প্রশংসায় ভাসছে বাংলাদেশ। এই প্রশংসা বাংলাদেশের সক্ষমতা অর্জনের। এক সময়কার তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ যে এখন প্রতিবেশি দেশকে ঋণ সহায়তা প্রদানের সক্ষমতা অর্জন করেছে এই প্রশংসা তার জন্য। এই প্রশংসা এক সময়কার দরিদ্র দেশ এখন মহামারির এই সঙ্কটময় মুহূর্তেও কোভিড মোকাবেলায় প্রতিবেশি ভারতকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে তার জন্য। ভারতকে ত্রাণ সহায়তা এবং শ্রীলঙ্কা ডলার সহায়তা দেয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক অগ্রগতি প্রকাশ করছে। মিত্রতা জোরদারে প্রতিবেশি দেশগুলোর দুঃসময়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশের প্রশংসা অর্জন করে চলেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ভারতকে ছাড়িয়ে যাওয়ার খবর ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে। করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারত যখন বিপযস্ত তখন পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে বিদেশী ঋণে জর্জরিত শ্রীলঙ্কাকে বাড়িয়ে দিয়েছে সহযোগিতার হাত। এই দুই ঘটনা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উত্থানের নমুনা প্রদর্শন বলে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দ্য প্রিণ্ট তার ২৮ মে প্রকাশিত সংখ্যায়।
করোনায় পর্যটননির্ভর শ্রীলঙ্কার অবস্থা ল-ভ-। বৈদেশিক বিনিময়ে প্রতিনিয়ত মান হারাচ্ছে দেশটির মুদ্রা রূপী। বিপুল বৈদেশিক ঋণের বোঝা নিয়ে শ্রীলঙ্কা এখন ধুঁকছে। ঋণ শোধের ব্যাপক চাপ তৈরি হয়েছে দেশটিতে। অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে মারাত্মক সঙ্কট। চলতি বছরে দেশটির ঋণের পরিমাণ ৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার বলা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার শ্রীলঙ্কাকে তাদের মুদ্রা রূপীর বিনিময়ে ২০ কোটি ডলার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে এই অর্থ সহায়তা পাওয়ায় দেশটির ঋণের চাপ কিছুটা হলেও কমবে এবং তা অর্থনীতিতে প্রাণসঞ্চার করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে শ্রীলঙ্কাকে এই ২০ কোটি ডলার দেয়া হবে। এই অর্থ শ্রীলঙ্কাকে তাদের অর্থনীতি শক্তিশালী করতে সহযোগিতা করবে। দেশটির বর্তমান বড় ধরনের ঋণ সঙ্কট কাটিয়ে উঠতেও কলম্বোর তা কাজে লাগবে। অর্থনীতিতে মুদ্রা বিনিময় এমন একটি লেনদেন যাতে উভয়পক্ষ সমান অর্থ বিনিময় করে কিন্তু ভিন্ন মুদ্রায়। এই ব্যবস্থা বিদেশী মুদ্রায় ঋণ গ্রহণের খরচ কমাতে সহযোগিতা করে। এই বছর মার্চ মাসে শ্রীলঙ্কার মাহিন্দা রাজাপাকসের ঢাকা সফরের সময় এ ব্যাপারে একটি চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছিল। এমন দুঃসময়ে শ্রীলঙ্কার পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। তাই বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছে শ্রীলঙ্কা।
অন্যদিকে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে প্রতিবেশি দেশ ভারতের অবস্থা বিপর্যন্ত। ওই বিপদের সময় ভারতকে যে ৪০ দেশ দুবার কোভিড ত্রাণ সহযোগিতা পাঠিয়েছে বাংলাদেশও এই তালিকায় রয়েছে। সর্বশেষ ১৮ মে ঢাকা ২ হাজার ৬৭২ বক্স বিভিন্ন এ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ এবং কোভিড সুরক্ষা সরঞ্জাম ভারতের হাতে তুলে দেয়। এর আগে ৬ মে ১০ হাজার ভায়াল রেমডেসিভির নয়া দিল্লীতে পাঠায় ঢাকা। শুধু ভারত নয়, কিছুদিন আগে করোনা সরঞ্জামাদি দিয়ে নেপালের পাশেও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ।
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। প্রথম ঢেউয়ের পর দ্বিতীয় ঢেউও দমিয়ে রাখতে পারেনি এ অগ্রযাত্রা। অনেক সমালোচনা হলেও দেশের এক কোটি মানুষকে এরই মধ্যে করোনার টিকা দিয়ে ফেলেছে সরকার। বাকিদের টিকার আওতায় আনতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ফাইজারের কাছ থেকে ইতোমধ্যে ১ লাখ ৬ হাজার ডোজ টিকা চলে এসেছে।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স, বিদেশী মুদ্রার রিজার্ভ, রফতানি আয়, আমদানিসহ অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলো এখনও ইতিবাচক। মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে আছে। পুঁজি বাজারেও কিছুদিন ধরে চাঙ্গা ভাব। মাথাপিছু আয়ে ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। আর পাকিস্তানকে তো ছাড়িয়েছে অনেক আগেই। মহামারি করোনার আঘাতে গোটা বিশ্ব বিপর্যন্ত হলেও চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৮ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ধারাবাহিক অগ্রগতি পথ ধরে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে বাংলাদেশ, যা ছিল দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি। গত এক দশকে জিডিপি প্রবৃদ্ধির গড় হার ছিল ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। আর চার বছরে এই হার ছিল ৭ শতাংশের ওপরে।
আর এই জিডিপি বৃদ্ধি সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কেননা মাথাপিছু জিডিপির হিসাবে বাংলাদেশ আঞ্চলিক অর্থনৈতিক পরাশক্তি ভারতকে টপকে গেছে। যেখানে মাত্র পাঁচ বছর আগেও ভারতের মাথাপিছু জিডিপি বাংলাদেশের তুলনায় ২৫ শতাংশ এগিয়ে ছিল। তবে করোনাকালীন ২০২০ সালে মাথাপিছু জিডিপিতে যে বাংলাদেশ ভারতকে টপকে যাবে তার একটি পূর্বাভাস দিয়েছিল আইএমএফ, ঘটেছেও তাই। ২০২০-২১ অর্থবছরে মাথাপিছু আয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতকে পেছনে ফেলে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাময়িক হিসাবে, বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বেড়ে ২ হাজার ২২৭ মার্কিন ডলার হয়েছে। অন্যদিকে ভারতের গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৯৪৭ ডলার। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের চেয়ে ভারতের মাথাপিছু আয় ২৮০ ডলার কম। অর্থাৎ ভারতের একজন নাগরিকের চেয়ে বাংলাদেশের একজন নাগরিক এখন বছরে ২৩ হাজার ৭৪৪ টাকা বেশি আয় করেন।
আর যে রিজার্ভের ওপর ভর করে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কাকে ২০ কোটি ডলার ঋণ দিতে পারছে, সেই রিজার্ভ এখন ৪৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। মূলত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের ওপর ভর করেই মহামারির মধ্যেই বাংলাদেশের বিদেশী মুদ্রায় সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন (৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। ৩ মে রিজার্ভ এই নতুন উচ্চতায় পৌঁছায়। অথচ ২০০৮-০৯ অর্থ বছর শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ১২ বছরে রিজার্ভ বেড়েছে ছয় গুণ।
অর্থনৈতিক সূচকের পাশাপাশি সামাজিক সূচকেও বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করেছে। অনেক ক্ষেত্রে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়েও এগিয়ে গেছে। দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ উন্নয়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি দেশের সীমা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিম-লেও এখন আলোচিত। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একমাত্র ক্রিকেট বাদে প্রায় সব ক্ষেত্রে ভারতকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। সেখানে তুলনামূলক আলোচনায় বাংলাদেশের উন্নয়নের নানাদিক তুলে ধরা হয়েছে। তুলনামূলক সেই বিশ্লেষণে দেখা যায়, শিশু মৃত্যুতে ভারতে প্রতি হাজারে ৮৮ জন মারা যাচ্ছে। অপরদিকে বাংলাদেশে ৮৪ জন। বাংলাদেশের শিশুদের ১০০ জনের মধ্যে ৩৩ জন ম্যালনিউট্রেশনে ভুগছে, অপরদিকে ভারতে ৩৬ জন ম্যালনিউট্রেশনের শিকার। বাংলাদেশীদের গড় আয়ু ৭২ বছর অপরদিকে ভারতীয়দের ৬৯ বছর। অনিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের কারণে বাংলাদেশে প্রতি লাখে ১১.৯ জন মৃত্যুবরণ করছে আর ভারতে ১৮.৬ জন। বাংলাদেশের ৯৮ শতাংশ ঘরে টয়লেট আছে ভারতের ৯৭ শতাংশ। বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ স্কুলে টয়লেট আছে ভারতে ৭৩ শতাংশ। ভারতের বেকারত্বের হার ৮.৪ শতাংশ আর বাংলাদেশের ৪.১৯ শতাংশ।
সামরিক শক্তিতেও বাংলাদেশ এখন আগের অবস্থানে নেই। ২০১৭ সালে নবযাত্রা ও জয়যাত্রা নামে দুটো সাবমেরিন চীন থেকে নিয়েছে বাংলাদেশ। আরও নানাদিকে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করছে বাংলাদেশ। আর তাই ২০১৮ সালের গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারে যেখানে বিশ্বে বাংলাদেশের সামরিক শক্তিতে অবস্থান ছিল ৫৬তম সেখানে ২০২১ সালের রিপোর্টে বাংলাদেশ ১১ ধাপ এগিয়ে ৪৫তম স্থানে উঠে এসেছে।
ক্রমাগত অগ্রসরমান অর্থনৈতিক সক্ষমতা নিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকার। এমনকি চিরপ্রতিদ্বন্বী হিসেবে পরিচিত পাকিস্তানও এখন বাংলাদেশের এই অভাবনীয় সাফল্যের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় এক জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত কলামে বিশ্ব ব্যাংকে পাকিস্তান বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা আবিদ হাসান বলছেন, ‘বর্তমান সরকারসহ পাকিস্তানের প্রতিটি সরকার বিশ্ব জুড়ে ভিক্ষার থালা নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছে। এটা অচিন্তনীয় যে গেল বিশ বছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি পাকিস্তানের দ্বিগুণ হয়েছে। অতীতের মতো আগামীতেও যদি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এই হারে হতে থাকে, তাহলে ২০৩০ সালে বাংলাদেশ ‘ইকোনমিক পাওয়ার হাউসে’ পরিণত হবে। তখন পাকিস্তান যে বাংলাদেশের কাছে সাহায্যের জন্য হাত বাড়াবে সেই সম্ভাবনা যথেষ্ট।’
ভারতে উন্নয়নশীল দেশগুলো নিয়ে কাজ করা রিসার্চ এ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমের (আরআইএস) প্রদীপ দে বলছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির এই প্রবৃদ্ধির মূল কারণ হিসেবে কাজ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে পাওয়া অগ্রাধিকারযুক্ত বাণিজ্য সুবিধাসহ (জিএসপি) অন্যান্য বাণিজ্য সুবিধা। ইইউর জিএসপি স্কিম থেকে অব্যাহতভাবে এই সুবিধা পাওয়ায় কৌশলগত রফতানির মাধ্যমে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে উল্লেখযোগ্য হারে আয় করছে। একইসঙ্গে অনেক দেশ থেকে বেশ ভাল পরিমাণ রেমিটেন্সও পাচ্ছে বাংলাদেশ। ফলে বাংলাদেশ হলো এশিয়ার নতুন রয়েল বেঙ্গল টাইগার। দেশটি গুরুত্বপূর্ণ আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য করছে। একই সঙ্গে কয়েকটি আসিয়ান দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে চাইছে এবং কানেক্টিভিটি প্রকল্পে যুক্ত হচ্ছে।
তবে বাংলাদেশের এই উত্থান বেশি দিনের নয়। গত ১২ বছরে বাংলাদেশ তার এই সক্ষমতা অর্জন করেছে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। এরপর আরও দুই দফায় আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই ১২ বছরে বাংলাদেশ অর্জন করেছে প্রশংসনীয় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। টানা তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে শেখ হাসিনা দেশকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। এই উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশেও পদার্পণ করেছে।
অর্থনৈতিক এই উন্নতির কারণেই বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে ঋণদাতা সংঘের সদস্য হতে পেরেছে। শ্রীলঙ্কাকে এই ঋণ প্রদানের চুক্তি ও দক্ষিণ এশিয়ায় করোনাকালীন সময়ে বাংলাদেশের ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম একদিকে যেমন বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে অন্যদিকে মহামারিতে বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক সক্ষমতাকে বিশ্ব দরবারে আরেকবার প্রমাণ করেছে।
যদিও শ্রীলঙ্কার এই ঋণ ফেরত দেয়ার সক্ষমতা কতটা আছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ শ্রীলঙ্কা ইতোমধ্যে চীনের ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে। অবশ্য এই ঋণের বিপরীতে শ্রীলঙ্কার মুদ্রায় সমপরিমাণ অর্থ জামানত হিসেবে রাখা আছে। আমরা আশা করব, বাংলাদেশ থেকে এই অর্থ সহায়তা পাওয়ায় দেশটির ঋণের চাপ কিছুটা হলেও কমবে এবং তা অর্থনীতিতে প্রাণসঞ্চার করবে। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি দ্রুতই তার মানবিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠবে।
অন্যদিকে বাংলাদেশেরও উচিত হবে এতসব ইতিবাচক খবরে আত্মতুষ্টিতে না ভুগে মহামারি মোকাবেলার পাশাপাশি বিনিয়োগ বাড়ানোর দিকে বেশি নজর দেয়া। কারণ বাংলাদেশ অর্থনীতিতে আশাপ্রদ অগ্রগতি অর্জন করলেও বিনিয়োগে স্থবিরতা রয়ে গেছে। বর্তমানে দেশে যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, তা সরকারী বিনিয়োগের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু সরকারী বিনিয়োগ বছরের পর বছর ধরে থাকবে না। ফলে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে অবশ্যই প্রয়োজন হবে বেসরকারী খাতের বিনিয়োগ। এজন্য অবশ্য সরকার এক শ’ অর্থনৈতিক এলাকা করার কাজ বাস্তবায়ন করছে। তাই প্রবৃদ্ধিকে টেকসই করতে হলে ব্যবসার সার্বিক পরিবেশ উন্নত করে বেসরকারী বিনিয়োগের প্রতি সর্বোচ্চ জোর দিতে হবে।
২.০৬.২০২১ লেখক সাংবাদিক
সর্বশেষ হালনাগাদ 4 years আগে