অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
করোনাভাইরাসে বিরাজমান অতিমারির কারণে মুদ্রানীতির লক্ষ্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি ফেরানো ও কম সুদে ব্যবসায়ীদের কাছে ঋণ পৌঁছানো। ঘোষিত নীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ বাড়বে। এ জন্য গত বছর করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি ছাড়ের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোতে বিপুল তারল্য জোগান দেয়। ডলার কিনেও ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকা সরবরাহ করে। গ্রাহকেরাও ব্যাংকে আগের চেয়ে বেশি টাকা রাখেন।
গত ২৯ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২১-২২ অর্থ বছরের নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করে। মুদ্রানীতিতে বলা হয়, অতিরিক্ত তারল্যের কারণে মূল্যবৃদ্ধি পেলে বা সম্পদের দাম বাড়লে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন নীতি গ্রহণে দ্বিধা করবে না। নতুন মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ৫ দশমিক ৩ এবং জিডিপির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। রিজার্ভ বেড়ে হবে ৫হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার।
স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনই ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতির প্রধান লক্ষ্য। কিন্তু বিরাজমান পরিস্থিতিতে সে লক্ষ্য পরিবর্তন করে জোর দেয়া হয়েছে দেশের অর্থনীতিতে গতি ফেরানোয়।
উল্লেখ্য, বিপুল পরিমাণ অলস তারল্যের বোঝা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের চাপ এ দুইয়ে মিলে ব্যাংকগুলোকে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঋণ দেওয়া হয়। অর্থনীতির গতি ফেরাতে বড় ও ছোট ব্যবসায়ীদের প্রায় অর্ধেক সুদে এই ঋণ দেওয়া হয়। তবে এই ঋণের যথাযথ ব্যবহার নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ আছে, ঋণ যাঁদের কাছে যাওয়ার কথা ছিল, তাঁরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাননি। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্য হচ্ছে প্রণোদনা ঋণের অনিয়ম হলে যেকোনো সময় বাজার থেকে টাকা তুলে নেওয়া হবে। প্রণোদনার টাকা নয়ছয় হওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, অতিরিক্ত তারল্য আর্থিক খাতে বুদ্বুদ পরিস্থিতি তৈরি করলে বাজার থেকে টাকা তুলে নেওয়া হবে। এ জন্য সময়মতো নীতি ঘোষণার পাশাপাশি ঋণের ব্যবহার খতিয়ে দেখা হবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, যেকোনো সময় টাকা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিতে হবে। শেয়ারবাজার ও আবাসন খাতে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে এর কোনো বিকল্প নেই।
নতুন মুদ্রানীতিতে চলতি অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণ বাড়ানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। আর ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রথম ছয় মাসে ১১ শতাংশ। যদিও গত জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৮ দশমিক ৪ শতাংশ।
নতুন মুদ্রানীতিতে সরকারের ঋণ গ্রহণে ৩২ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঠিক করা হয়েছে। তবে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে সার্বিক অভ্যন্তরীণ ঋণে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। নতুন মুদ্রানীতিতে উৎপাদনশীল খাতে ঋণের জোগান বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, করোনায় টাকা হাতবদল আগের চেয়ে কমেছে। তাই টাকার ব্যবহার বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত জুন পর্যন্ত টাকা হাতবদল হয় ৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ হারে, যা গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল ৪ দশমিক ৮৭।
গণমাধ্যমে পাঠানো লিখিত বক্তব্যে গভর্নর ফজলে কবির বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতি এখনো প্রয়োজনীয় মাত্রায় ঘুরে দাঁড়ায়নি। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও মানসম্মত নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করতে সম্প্রসারণমূলক ও সংকুলানমুখী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া আর্থিক খাতে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও বিদেশে অর্থ পাচার রোধকল্পে বিএফআইইউ কর্তৃক আর্থিক গোয়েন্দা কার্যক্রম বাড়ানোর উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে।
#
সর্বশেষ হালনাগাদ 4 years আগে