অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
চলতি ২০২৩-২৪ করবর্ষে সারা দেশে দাখিল হওয়া আয়কর রিটার্নের মধ্যে থেকে ১৫ হাজার ৪৯৪টি রিটার্ন অডিটের জন্য নির্বাচন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ‘র্যান্ডম সিলেকশন’ বা দৈবচয়ন পদ্ধতিতে এই নির্বাচন করা হয়েছে। এ বিষয়ে গত বুধবার (১৬ জুলাই) এনবিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করদাতাদের আস্থা বজায় রাখতে অডিট প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করাই মূল লক্ষ্য। এজন্য এনবিআর ইতোমধ্যে ঝুঁকিভিত্তিক নিরীক্ষা নির্বাচনের মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে পূর্ণাঙ্গ অটোমেটেড সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে।
তবে এখনো অফলাইনে জমা হওয়া পেপার রিটার্নগুলো সম্পূর্ণভাবে ডিজিটাল ডেটাবেজে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এ কারণে পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন চালু করতে কিছুটা সময় লাগবে। এই সময়ের মধ্যে অডিট কার্যক্রম চালু রাখতে বিকল্প পদ্ধতিতে নির্বাচন করা হয়েছে।
এই বিকল্প পদ্ধতিতে প্রতিটি কর অঞ্চল বা সার্কেলে দাখিল হওয়া মোট আয়কর রিটার্নের শুধু ০.৫% (শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ) দৈবচয়নের ভিত্তিতে অডিটের জন্য বাছাই করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, গত দুই করবর্ষে যেসব করদাতা অডিটের আওতায় এসেছেন, তাঁদের এবারের নির্বাচনের বাইরে রাখা হয়েছে। এর ফলে পুনরাবৃত্তি এড়ানো ও অডিট প্রক্রিয়ার ন্যায্যতা বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে।
এনবিআরের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বর্তমান দৈবচয়ন পদ্ধতি স্বচ্ছ হলেও রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যায় না। কারণ এটি ঝুঁকিভিত্তিক নয়। এ জন্য যত দ্রুত সম্ভব পেপার রিটার্নের সব তথ্য ডেটাবেজে যুক্ত করে ঝুঁকিভিত্তিক (রিস্ক-ভিত্তিক) অটোমেটেড অডিট নির্বাচন পদ্ধতি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এই ঝুঁকিভিত্তিক পদ্ধতি চালু হলে করদাতাদের রিটার্ন যাচাইয়ের ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ রিটার্নগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে অডিটের আওতায় আনা সম্ভব হবে। এতে রাজস্ব আহরণের কার্যকারিতা বাড়বে এবং কর ব্যবস্থাপনায় আধুনিকতা আসবে।
এ বিষয়ে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “ডিজিটাল অডিট নির্বাচন প্রক্রিয়া চালু হলে অডিটে মানবিক পক্ষপাতের কোনো সুযোগ থাকবে না। ঝুঁকিপূর্ণ রিটার্ন বাছাই করা সহজ হবে। এতে রাজস্ব আহরণ বাড়বে এবং করদাতার আস্থাও বৃদ্ধি পাবে।”
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে কর প্রশাসনের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো কর ফাঁকি নিয়ন্ত্রণ ও কর জালিয়াতি প্রতিরোধ। অটোমেটেড সিস্টেম চালু হলে কর ফাঁকির সুযোগ অনেক কমে আসবে।
করদাতাদের উদ্দেশে এনবিআরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অডিট প্রক্রিয়া কেবল করদাতার দায়বদ্ধতা ও কর পরিশোধের সঠিকতা যাচাইয়ের জন্য, এটি কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নয়। যারা সঠিকভাবে রিটার্ন দাখিল করেছেন, তাঁদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
বর্তমানে বাংলাদেশে কর আদায়ের হার জিডিপির তুলনায় এখনো খুব কম—৯% এরও নিচে। কর ফাঁকি, অস্বচ্ছতা ও দুর্বল অডিটিং ব্যবস্থার কারণে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ সম্ভাব্য রাজস্ব আদায় সম্ভব হয় না। এই প্রেক্ষাপটে এনবিআর অটোমেটেড ও ঝুঁকিভিত্তিক অডিট প্রক্রিয়া চালুর উদ্যোগকে বিশেষজ্ঞরা কর প্রশাসনে বড় ধরনের সংস্কার উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন।
প্রযুক্তিনির্ভর স্বচ্ছতা, ঝুঁকিভিত্তিক বাছাই ও ডেটাবেজ সমৃদ্ধকরণের মাধ্যমে আগামী কয়েক বছরে কর আদায়ের দক্ষতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে এনবিআর। ●
অকা/রা/ই/সকাল/১৭ জুলাই, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 3 months আগে