অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
ঈদ ঘিরে দেশব্যাপী পর্যটকের ঢল নেমেছে। দীর্ঘ ছুটিতে শুধু কক্সবাজারে ১১ জুন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ পর্যটকের উপস্থিতি ব্যবসায়ীদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। পর্যটকের আনাগোনায় মুখর লাবণী, সুগন্ধা, কলাতলি পয়েন্ট। ঈদের লম্বা ছুটির চতুর্থ দিন বাঁধভাঙা আনন্দ-উচ্ছ্বাসে কেটেছে তাদের প্রতিটি মুহূর্ত।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, শনিবার পর্যন্ত ছুটি থাকায় আরো পর্যটক আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সতর্কতা সঙ্কেত উপো করে অনেকেই উত্তাল সাগরে নেমে পড়ায় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। অসাবধানতাবশত সমুদ্রসৈকতে ডুবে চার পর্যটকসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী জানান, গত ঈদুল ফিতরের ছুটিতে কক্সবাজারে ১২ লাখ পর্যটক এসেছিলেন। হোটেল-রেস্তোরাঁ, দোকান, শুঁটকি ও সামুদ্রিক মাছসহ ১৩টি খাতে হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে। এবারের ঈদুল আজহার ছুটিতে আট লাখ পর্যটকের বিপরীতে ৭০০ কোটি টাকার মতো ব্যবসা হতে পারে। ইতোমধ্যে পাঁচ লাখের মতো পর্যটক কক্সবাজার ঘুরে গেছেন।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউজ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আওলাদ হোসেন কেনেডি জানান, ঈদের আগেই কক্সবাজারের অধিকাংশ আবাসিক হোটেলের ৭০ ভাগ বুকিং সম্পন্ন হয়েছে। এখন কক্সবাজারে শতভাগের কাছাকাছি রুম বুকিং চলছে। তিন দিনে পর্যটকের সংখ্যা সাড়ে চার লাখ ছাড়িয়ে যাবে।
হোটেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, ৯ জুন থেকে প্রতিদিনই কক্সবাজার সৈকতে ভিড় করছে লাখো পর্যটক। যার কারণে হোটেলের বুকিং হয়েছে আশানুরূপ। এবার অন্তত সাত-আট লাখ পর্যটক ভ্রমণে আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রাকৃতিক সৌর্ন্দযের লীলাভূমি পাহাড়ি কন্যা পর্যটন শহর রাঙ্গামাটিও এখন পর্যটকদের পদভারে মুখরিত। ঈদুল আজহা পরবর্তী লম্বা ছুটিতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে পরিবার-পরিজন পাহাড়ে আসছেন তারা। বর্তমানে হোটেল-মোটেলসহ বিভিন্ন রিসোর্টে প্রায় শতভাগই বুকিং রয়েছে বলে জানিয়েছেন হোটেল-মোটেল মালিকরা।
পাহাড়ের বিভিন্ন উপজেলাসহ জেলা সদরের প্রতিটি পর্যটন স্পট এখন পর্যটকদের পদচারণায় মুখর। পরিবার-পরিজন নিয়ে দেশী-বিদেশী পর্যটকরা এখন পাহাড়ের নির্মল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছেন মনের আনন্দে। ঈদ-পরবর্তী পাহাড়ে মানুষের আগমনে চাঙ্গা হয়ে ওঠায় পর্যটনসংশ্লিষ্ট সবাই খুশি।
রাঙ্গামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স ঘাটের বোট মালিক সমিতির সহসভাপতি মো. রমজান আলী জানান, ঈদের পরদিন থেকে রাঙ্গামাটিতে আশানুরূপ পর্যটক আসতে শুরু করেছেন।
এ ছাড়া শহরের অন্যান্য হোটেল-মোটেলে পর্যটকদের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ রুমই বুকিং রয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে পর্যটকের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের। প্রতি বছরের মতো এবারো পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিতে খাগড়াছড়ির পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকরা ভিড় করছেন। ঈদের বাড়তি আনন্দ উপভোগ করতে তারা ছুটে এসেছেন পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে।
এবার ঈদের ছুটিতে খাগড়াছড়ির পর্যটন স্পটগুলোতে দেখা গেছে পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়। বৃষ্টি উপো করে সকাল থেকে বিভিন্ন বয়সী মানুষ পর্যটনকেন্দ্রমুখী হচ্ছেন। অন্য দিকে পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে সার্বণিক দায়িত্ব পালন করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
খাগড়াছড়ির হোটেল গাইরিং-এর ম্যানেজার প্রান্ত ত্রিপুরা জানান, ঈদের পরদিন রোববার থেকে পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন। এবার পর্যটকদের আগমন সন্তোষজনক। আগামী কয়েকদিনে পর্যটকের সংখ্যা আরো বাড়বে।
ঈদের ছুটিতে দর্শনার্থীর উপচে পড়া ভিড় কুমিল্লার পর্যটন কেন্দ্রগুলোতেও। প্রচণ্ড গরম উপো করে শালবন বৌদ্ধ বিহারকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা প্রত্নতাত্ত্বিক পর্যটন স্পটগুলোতে ঘুরতে আসছে মানুষ। কুমিল্লা জেলাবাসীরা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে প্রায় ১৪০০ বছর পুরনো বৌদ্ধ বিহার এবং শতবর্ষী শালবনের সবুজ অরণ্য ঘুরে দেখছেন তারা।
পর্যটনের আদর্শ স্থান হিসেবে পরিচিত সিলেট। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি খ্যাত এই অঞ্চলে বিশেষ ছুটি ছাড়াও প্রায় সারা বছর দর্শনার্থীদের আগমন ঘটে। এবারে ঈদে লম্বা ছুটিতে সিলেটে রেকর্ড-সংখ্যক পর্যটক সমাগম হয়েছে। জানা গেছে, এরই মধ্যে সিলেটের পর্যটন স্পটগুলোতে সাজ সাজ রব বিরাজ করছে।
হাটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে অগ্রিম বুকিং দিতে শুরু করেছেন পর্যটকরা। সিলেট হোটেল অ্যান্ড গেস্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি সুমাত নূরী জুয়েল বলেন, ‘সবসময়ই ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের পছন্দের গন্তব্য সিলেট। ●
অকা/পর্যটন/ফর/বিকাল/১৩ জুন, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 5 months আগে
