অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত কক্সবাজারে হোটেল ও মোটেলের সব রুম বুকিং হয়ে গেছে। ফলে সেখানে আবাসন সমস্যায় পড়েছেন রুম ঠিক করে না যাওয়া অনেক পর্যটক। সংশ্লিষ্টরা জানান, সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে বৃষ্টির মধ্যেই ঢেউয়ের সাথে আনন্দে মেতে উঠেছে পরিবার-পরিজন নিয়ে আসা পর্যটকরা। অনেকে আবার বৃষ্টিতে ভেজা জামা-কাপড় নিয়ে ছবি তুলছেন। তবে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে। কক্সবাজারসহ উপকূলীয় অঞ্চলে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত জারি করা হয়েছে। সেই সাথে মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে গভীর সমুদ্রে না যেতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগে মানুষ শীতকালে কক্সবাজারে ভ্রমণে যেতেন। এখন আর নির্দিষ্ট মৌসুম নেই। অনেকে সমুদ্রের ভয়াল রূপ দেখার জন্য ছুটে যান সৈকতে।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, এবারের পূজায় টানা ছুটিতে পর্যটক চাপ অভাবনীয়। ফলে সব হোটেল-মোটেল রুম বুকিং হয়ে গেছে। নতুন করে কোনো রুম খালি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ফলে এখন যারা যাচ্ছেন তারা রুম না পেয়ে বিকল্প ব্যবস্থায় থাকছেন।

অন্যদিকে পর্যটকদের নিরাপত্তায় সৈকত এলাকায় ট্যুরিস্ট পুলিশ টহল বাড়ানো হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার রিজিওনের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ জানান, সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে পর্যাপ্ত পুলিশ রয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে টহলও জোরদার করা হয়েছে।

দেশের অন্যতম সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায়ও নেমেছে পর্যটকের ঢল। পুরো পর্যটন নগরীজুড়ে অন্যরকম প্রাণচাঞ্চল্য। ঢাকা, বরিশাল, খুলনা, ফরিদপুর, রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পর্যটকরা সৈকতে হাঁটাহাঁটি, ছবি তোলা, সাগরে গোসল আর ঘোড়ায় চড়াসহ নানা বিনোদনে মেতে উঠছেন। ইতোমধ্যেই প্রায় ৯৫ ভাগ কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। স্থানীয় হোটেল-মোটেল মালিক সমিতি বলছে, পর্যটকদের সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশেষ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

টুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের সহকারী পুলিশ সুপার এএসপি হাবিবুর রহমান বলেন, দুর্গাপূজা উপলে কয়েকদিনের ছুটিতে কুয়াকাটায় পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে, আগত পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার টুরিস্ট পুলিশ সর্বদা প্রস্তুত। সবগুলো স্পটে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে।

রাঙ্গামাটির বিনোদন কেন্দ্রগুলোতেও পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে। দুর্গাপূজার টানা ছুটিতে প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটে আসছেন রাঙ্গামাটিতে। এরই মধ্যে রাঙ্গামাটি ও কাপ্তাইয়ের হোটেল রিসোর্টে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত আগাম বুকিং হয়ে আছে। তবে খাগড়াছড়ির আন্দোলন সংঘাতে সাজেকে অনেকটাই পর্যটক শূন্য হয়ে আছে।

রাঙ্গামাটি শহরের ঝুলন্ত সেতু, কাপ্তাই হ্রদে নীল জলরাশিতে নৌভ্রমণ, পলওয়েল পার্ক, আরণ্যক, সুবলং, আসামবস্তি কাপ্তাই সড়ক ও কাপ্তাইয়ে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। রাঙ্গামাটির পাহাড়ি আঁকাবাঁকা উঁচু-নিচু সড়ক, দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ অরণ্য আর দণি পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ কাপ্তাই লেক পর্যটকদের কাছে সারা বছরই আকর্ষণীয়।

তবে রাঙ্গামাটি শহরের আইকন ৩৩৫ ফুট দৈর্ঘ্যরে ঝুলন্ত সেতু ঘিরেই দর্শনার্থীদের মূল আকর্ষণ। আজও সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, পর্যটকদের বিপুল উপস্থিতি। অনেকেই দল বেঁধে ট্যুরিস্ট বোট ভাড়া করে নৌভ্রমণ করছেন। তবে গেল দুই মাস ধরে ঝুলন্ত সেতু পানিতে ডুবে থাকায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা পর্যটকদের প্রশান্তিতে ছেদ পড়েছে। অবশ্য সেতু এলাকায় বসে খোশগল্পে মেতে উঠেছেন পরিবার-পরিজনের সাথে।

রাঙ্গামাটি শহরে ৫৬টি আবাসিক হোটেল, ১৭টি রিসোর্ট ও সাজেকে ৯৮টি হোটেল রিসোর্ট এবং কাপ্তাইয়ে বেশ কয়েকটি হোটেল রিসোর্ট রয়েছে। তবে সবমিলিয়ে ১৫ হাজার পর্যটকের রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা রয়েছে এ তিন পর্যটনকেন্দ্রে। এবার গড়ে দৈনিক দেড় কোটি টাকার বাণিজ্য হবে বলে আশা এ অঞ্চলের খাত সংশ্লিষ্টদের। তবে খাগড়াছড়ির আন্দোলন সংঘাতে অবরোধ কর্মসূচিতে সাজেকে পর্যটক নেই বললেই চলে। সেখানে গেল ২৭ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর অন্তত তিন হাজার পর্যটক আগাম বুকিং বাতিল করেন। এরপর নানা শঙ্কায় নতুন করে পর্যটকের উপস্থিতি আর বাড়ছে না।

বান্দরবান শহরের আশপাশের জনপ্রিয় পর্যটন স্পটগুলোতে দেখা গেছে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়। নীলাচল, শৈলপ্রপাত, গোল্ডেন মন্দির এবং মেঘলা পর্যটনকেন্দ্রে ভ্রমণপিপাসুরা দল বেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সিলেটেও ভিড় করেছেন পর্যটকরা। জাফলং, ভোলাগঞ্জ, রাতারগুল, বাহকার বিল, শ্রীমঙ্গল, বিছানাকান্দিতে পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত। পূজার ছুটিতে হোটেল-মোটেলে রুম সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

সিলেটের হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ী ও পর্যটন সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৫ দিন ধরে বিভিন্ন মাধ্যমে হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলো বুকিং দিয়ে রাখছেন পর্যটকরা। ইতোমধ্যে ভালোমানের হোটেলগুলো প্রায় শতভাগই বুকিং হয়ে গেছে। সিলেট বিভাগে ৫ শতাধিক হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই পর্যটকনির্ভর।

সিলেটের হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমাত নুরী জুয়েল বলেন, জাতীয় ক্রিকেট লিগের কারণে সিলেটের বিভিন্ন হোটেলের প্রায় ২০০টি কক্ষ ১২ অক্টোবর পর্যন্ত বুকিং করা হয়েছে, যার কারণে এবার পর্যটকরা হোটেল সঙ্কটে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ●

অকা/পর্যটন/ফর/সন্ধ্যা/৩ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ

সর্বশেষ হালনাগাদ 9 hours আগে

Leave A Reply

Exit mobile version