অর্থকাগজ প্রতিবেদন

সারা দেশে ব্যাপক অস্থিরতা থাকা সত্ত্বেও জনশক্তি রফতানি আগের মাসের তুলনায় জুলাই মাসে প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৭১,৪৪১ জনে দাঁড়িয়েছে। তবে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যমতে, এই হার গত ৩৩ মাসের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন।

শ্রমশক্তি রফতানিকারকেরা আশা করছেন যে, দেশব্যাপী অস্থিরতা বিশেষ করে কোটা-সংস্কারের প্রতিবাদে আন্দোলনের ফলে এই খাতে সম্পূর্ণ প্রভাব আগামী দুই মাসের মধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠবে। এর কারণ শ্রমিকদের মাইগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সাধারণত দুই মাসের বেশি সময় লাগে।

চলতি বছরের জুনে বাংলাদেশ ৫৫,০৪৫ কর্মী বিদেশে পাঠিয়েছে। পরবর্তীতে মালয়েশিয়া বিদেশী শ্রমিকদের দেশটিতে প্রবেশাধিকার বন্ধ রাখে; যা এখনো বহাল রয়েছে। এদিকে শ্রমশক্তি রফতানি গত বছরের জুলাইয়ের তুলনায় ৪৩ শতাংশ কমেছে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাধারণ সম্পাদক আলি হায়দার চৌধুরী বলেন, "জুলাই মাসে যারা গিয়েছে তাদের প্রসেসটা হয়েছে মে-জুন মাসে কিংবা তারও আগে। তাই গতমাসে কেমন প্রসেস হয়েছে তা চলতি মাস কিংবা পরের মাসে বোঝা যাবে। তাই কর্মী যাওয়ার চলমান ফ্লো কন্টিনিউ করবে সেটা এখনই বলা যাবে না।"

আলি হায়দার আরও বলেন, "সৌদি এখনো আমাদের সবচেয়ে বড় বাজার। ট্রেডিশনালা মার্কেটগুলো ধরে রাখার পাশাপাশি নতুন মার্কেটে আরো বেশি সুযোগ উন্মুক্ত করার চেষ্টা চালাতে হবে।"

জুলাই মাসে সৌদি আরব বাংলাদেশ থেকে ৪৭,৮৬৭ জন কর্মী নিয়েছে; যা একক দেশ হিসেবে সর্বোচ্চ। এর পরের তালিকায় রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, কাতার ও কুয়েত।

এদের মধ্যে বেশিরভাগ শ্রমিক নির্মাণ শিল্পে কাজ করতে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ সৌদি আরবে সার্ভিস সেক্টর কিংবা গৃহস্থালি কাজেও যুক্ত হচ্ছেন।

চলতি বছরের মে মাসের শুরুতে সৌদি আরবে শ্রমশক্তি রফতানির সংখ্যা ছিল মাত্র ৩০ হাজার জন। কারণ বিএমইটি রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে সত্যায়িত না থাকা একক ভিসাধারীদের বিরুদ্ধে দুই সপ্তাহ ধরে ছাড়পত্র দেয়নি। মূলত সৌদি আরবে বাংলাদেশি শ্রমিকদের বেকারত্ব রোধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যের ট্র্যাডিশনাল শ্রমবাজারের পাশাপাশি ইউরোপের কিছু দেশ ক্রমাগত বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিচ্ছে। যদিও সেটি সংখ্যায় অল্প। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে গত মাসে ক্রোয়েশিয়ায় ৩৯২ জন, সাইপ্রাসে ১৪২ জন, পর্তুগালে ১৩৭ জন, রোমানিয়ায় ২৫৮ জন, সার্বিয়ায় ১৩১ জন এবং যুক্তরাজ্যে ২৫১ জন গিয়েছেন।

শ্রমশক্তি রফতানিকারকেরা ইউরোপে দক্ষ জনশক্তি পাঠানোর ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এই বিষয়ে বায়রার সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, "এই মুহূর্তে সৌদি আরবে নির্মাণ শ্রমিকের চাহিদা ভাল। তবে সাম্প্রতিক অস্থিরতার জন্য প্রসেসিং করতে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে। আশা করি সামনে পরিস্থিতি আরো নরমাল হলে কর্মী যাওয়ার ফ্লো দ্রুত হবে।"

শামীম আহমেদ চৌধুরী আরও বলেন, "মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার যদি দুই এক মাসের মধ্যে না খোলে তাহলে এই বছর গত দুই বছরের ন্যয় ১০ লাখের বেশি কর্মী পাঠানোর টার্গেট পূরণ হবে না।"

অভিযুক্ত রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার বড় ধরণের অভিযোগের মাধ্যমে মালয়েশিয়া ইতোমধ্যে গত ১ জুন থেকে শ্রমবাজার বন্ধ করে দিয়েছে। মালয়েশিয়ান কর্তৃপক্ষ মাত্র ১০০টি বেসরকারি এবং একটি সরকারি নিয়োগকারী সংস্থাকে কর্মী পাঠানোর অনুমতি দিয়েছে। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে প্রাইভেট এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে 'সিন্ডিকেট' তৈরির অভিযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, "আগামী মাসের মধ্যে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। যেখানে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুনরায় চালু করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।"

যদিও বাংলাদেশ কোভিড পূর্ববর্তী সময়কালে প্রতি মাসে ৬০ থেকে ৭০ হাজার জনশক্তি রফতানি করতো। তবে কোভিড-পরবর্তী সময়ে এই সংখ্যা বেড়ে ১ লাখেরও বেশি পৌঁছায়।

এদিকে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের কারণে প্রবাসীরা কিছু সময়ের জন্য টাকা পাঠাতে না পারায় জুলাই মাসে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন; অর্থাৎ ১.৯০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এছাড়া তৎকালীন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের অংশ হিসেবে প্রবাসীদের মধ্যে 'নো রেমিট্যান্স' প্রচারণা ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে সর্বনিম্ন প্রবাসী আয় ছিল ১ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার।

জুলাই মাসে অবশ্য রেমিট্যান্স প্রাপ্তি গত বছরের তুলনায় ৩.২ শতাংশ কম ছিল। কারণ দেশজুড়ে পাঁচ দিনের ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের কারণে অভিবাসী শ্রমিকদের বাড়িতে পাঠানো অর্থ ব্যাঙ্কগুলি সংগ্রহ করতে পারেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জুলাই মাসে রেমিট্যান্স প্রাপ্তি ছিল ১.৯৭ বিলিয়ন।

অকা/প্র/ই/সকাল, ১৭ আগস্ট, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ

 

সর্বশেষ হালনাগাদ 1 year আগে

Leave A Reply

Exit mobile version