অর্থকাগজ প্রতিবেদন ●
বিগত সপ্তাহে দেশের পুঁজি বাজারে সূচকের উন্নতি ঘটলেও কমেছে লেনদেন। সপ্তাহের প্রথম তিনটি কর্মদিবসে সংশোধন ঘটার কারণে সূচকের অবনতি ঘটলে লেনদেনে তা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিনিয়োগকারীরা এ সময় সতর্ক অবস্থান নেন। তবে সপ্তাহের শেষ দু’দিন বাজার পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে। তা ছাড়া ৩১ জুলাই শেষ কর্ম দিবসে লেনদেনে বড় ধরনের উন্নতি ঘটে। এ দিন আবার হাজার কোটি ছাড়িয়ে যায় দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন। গত বছরের ২ অক্টোবরের পর ডিএসইর লেনদেন আর হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করেনি।
গত সপ্তাহে ঢাকা শেয়ার বাজারের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫১ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়। ২৫ জুলাই ৫ হাজার ৩৯২ দশমিক ০৪ পয়েন্ট থেকে সপ্তাহ শুরু করা সূচকটি ৩১ জুলাই সপ্তাহান্তে পৌঁছে যায় ৫ হাজার ৪৪৩ দশমিক ৪২ পয়েন্টে। বাজারে স্বাভাবিক সংশোধনের কারণে সপ্তাহের প্রথম তিনটি কার্যদিবসে সূচকের পতন ঘটলেও শেষ দু’দিনের বড় ধরনের উন্নতি সপ্তাহান্তে সূচকের উন্নতি ঘটে। একই সময় ডিএসই-৩০ সূচকটি ২৪ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট উন্নতি ঘটলেও ডিএসই শরিয়াহ সূচকের অবনতি ঘটে ২ দশমিক ০৮ পয়েন্ট।
গত সপ্তাহে ডিএসই মোট ৪ হাজার ১৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে যা আগের সপ্তাহ অপেক্ষা ২ দশমিক ৪০ শতাংশ কম। আগের সপ্তাহে বাজারটির মোট লেনদেন ছিল ৪ হাজার ২৯৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এ সময় সাপ্তাহিক গড় লেনদেন দাঁড়ায় ৮৩৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে ডিএসইর গড় লেনদেন ছিল ৮৫৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
এ দিকে শেয়ার বাজারের গভীরতা বাড়াতে এবং ভালো শেয়ারের সঙ্কট দূর করতে লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের শেয়ার রয়েছে এমন বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর শেয়ার বাজারে আনার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সাথে যোগাযোগ শুরু করেছে যাতে সরকারের মালিকানা রয়েছে এ ধরনের দেশী-বিদেশী লাভজনক কোম্পানিগুলোর শেয়ারের একটি অংশ দ্রুত পুঁজি বাজারে নিয়ে আসা যায়।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ৩১ জুলাই শিল্প মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কে শিল্পসচিব ওবায়দুর রহমানের সভাপতিত্বে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ১১ মে পুঁজি বাজার নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার দেয়া নির্দেশনার আলোকে দেশের শেয়ার বাজারকে শক্তিশালী ও সম্প্রসারিত করার অংশ হিসেবে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রাশিদুল হাসান ও নুরুজ্জামান, যুগ্ম সচিব সাজেদুর রহমান এবং উপসচিব নুরুন্নাহারসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ইউনিলিভার বাংলাদেশ, নুভিস্টা ফার্মা, সানোফি বাংলাদেশ, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, রেকিট বেনকিজার (বাংলাদেশ), দ্য বেঙ্গল গ্লাস ওয়ার্কস, মিরপুর সিরামিক ওয়ার্কস, হিমাদ্রি লিমিটেড এবং কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানিসহ বেশ কিছু সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানির নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন। আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিরঞ্জন চন্দ্র দেবনাথ এবং আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের সিইও মাজেদা খাতুনও আলোচনায় অংশ নেন। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি)-এর চেয়ারম্যান এবং বিএসআরবি-এর মহাপরিচালকও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে গত সপ্তাহে (২৭ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই) লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে সিটি ব্যাংক পিএলসি। সপ্তাহজুড়ে সিটি ব্যাংকের গড়ে ৪৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকার হাতবদল হয়েছে যা ছিল বাজারটির মোট লেনদেনের ৫ দশমিক ২৯ শতাংশ। লেনদেনের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি। কোম্পানিটির গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩০ কোটি ৯৪ লাখ টাকার, যা মোট লেনদেনের ৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ। তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি)। কোম্পানিটির গড়ে ২৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা মোট লেনদেনের ৩ দশমিক ১৬ শতাংশ। সপ্তাহজুড়ে লেনদেনের শীর্ষে উঠে আসা অন্যান্য কোম্পানির লেনদেন হয়েছেÑ ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, যমুনা ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, রবি আজিয়াটা এবং উত্তরা ব্যাংক।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে রহিমা ফুড করপোরেশন লিমিটেড। গত সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়রদর বৃদ্ধি পেয়েছে ২১ দশমিক ২৪ শতাংশ। মূল্যবৃদ্ধিতে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল সাউথইস্ট ব্যাংক। কোম্পানিটির শেয়ারদর এক সপ্তাহে বেড়েছে ২০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। একই সময় ১৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ শেয়ারদর বেড়ে তৃতীয় স্থানে উঠে আসে বীমা কোম্পানি কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
সপ্তাহজুড়ে দরবৃদ্ধির শীর্ষে উঠে আসা অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে আরো ছিলÑ ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মাকসন স্পিনিং মিলস, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স, মালেক স্পিনিং, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, পিপলস ইন্স্যুরেন্স এবং পূবালী ব্যাংক।
ঢাকা স্টকে গত সপ্তাহে দরপতনের শীর্ষে ছিল ব্যাংকিং কোম্পানি মিডল্যান্ড ব্যাংক। এ সময় ২০ দশমিক ৫৬ শতাংশ দরপতনের শিকার ছিল কোম্পানিটি। ১৬ দশমিক ১৯ শতাংশ দর হারিয়ে এ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিল এসইএমএল লেকচার ইকুইটি ম্যানেজমেন্ট ফান্ড। ১১ দশমিক ৪৭ শতাংশ দরপতনে তালিকার তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেড।
সপ্তাহজুড়ে দরপতনের শীর্ষে উঠে আসা অন্যান্য কোম্পানির দরপতনের হার ছিল এনআরবি ব্যাংকের ১০ দশমিক ৮১ শতাংশ, প্রাইম ফাইন্যান্সের ১০ দশমিক ৪২ শতাংশ, বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ, মাইডাস ফাইন্যান্সের ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ, ইউনিয়ন ক্যাপিটালের ৯ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং ফার্স্ট ফাইন্যান্সের ৮ দশমিক ৮২ শতাংশ। ●
অকা/পুঁবা/ফর/রাত/২ আগস্ট, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
সর্বশেষ হালনাগাদ 4 months আগে

